.....


১. নিজের কাজকে ভালোবাসো
খেলার প্রতি ভালোবাসাই আমাকে এত দূর নিয়ে এসেছে। আমি মনে করি, কেউ যখন অনেক দিন ধরে কোনো কাজ করে, সেই কাজই তার পরিচয় হয়ে ওঠে। আমি ভাগ্যবান এ কারণে যে আমি আমার পরিচয়কে এতটা ভালোবাসতে পেরেছি। আমার খেলার শুরুটা আসলে হয়েছিল ৯-১০ বছর বয়সে, যখন আমি আমার বড় দুই ভাই আর অ্যাপার্টমেন্টের অন্যদের খেলতে দেখতাম। আমার কল্পনার জগতে তখন তারাই ব্যাট ঘোরাত। আমি তাদের মতো খেলতে চাইতাম। সে সময় আমার স্বপ্ন ছিল, সমবয়সীদের সঙ্গে খেলায় সবাইকে পেছনে ফেলা, যাতে করে আমার চেয়ে বয়সে বড়দের দলে খেলতে পারি, আর অ্যাপার্টমেন্টে আমার নাম ছড়ায়। এভাবে ১০ বছর বয়সেই আমি ২০-২২ বছর বয়সীদের সঙ্গে খেলতাম। সেই বছরই ভারত বিশ্বকাপ জেতে। এরপর আমার জীবনটাই একেবারে বদলে যায়। সে সময় ভারতের ৪০ লাখ তরুণ এক আশ্চর্য নেশায় আটকা পড়ে, একটি খেলার প্রতি সীমাহীন ভালোবাসায় তারা সবকিছু ভুলে যায়। আমিও সেই সময় থেকেই ক্রিকেটের প্রেমে পড়ি। এর আগে আমি অনেক খেলাই খেলতাম, ব্যাডমিন্টন, হকি, ফুটবল, টেনিস—কিন্তু ক্রিকেটের প্রতি মুগ্ধতা ছিল আমার জীবনের সেরা ঘটনা। সেই মুগ্ধতা আমার কখনো কাটেনি।

২. নিজের ওপর ভরসা রাখা
ক্রিকেটে নিজের অনুভূতির ওপর বিশ্বাস রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটাই একজন ভালো খেলোয়াড়ের সঙ্গে একজন খারাপ খেলোয়াড়ের পার্থক্য গড়ে দেয়। প্রতিটি খেলোয়াড়ের স্বকীয়তা আছে, আছে নিজেকে মাঠে তুলে ধরার নিজস্ব স্টাইল। সমালোচকেরা আমাকে খেলতে শেখাননি। আমি মনে করি, তাঁরা জানেন না, মাঠে আমি কী চিন্তা করছি, কিংবা আমার শরীর আমাকে কতটুকু সাহায্য করছে। প্রতিটি বল খেলার জন্য আমার হাতে মাত্র শূন্য দশমিক ৫ সেকেন্ড সময় থাকে, কখনো বা তারও কম। সময়টা আসলে কোনো সমালোচক আমাকে কী বলেছেন, তা চিন্তা করার জন্য নয়। আমি স্বাভাবিকভাবে আমার নিজের অনুভূতিকে কাজে লাগাই, আমার অবচেতন মন জানে, আমার কী করা উচিত এবং আমি ঠিক সেই কাজই করি। কারণ, এই কাজ করার জন্যই আমি নিজেকে প্রস্তুত করেছি। প্রতিটি বলকে দেখা এবং তাকে তার প্রাপ্য জবাব দেওয়া—সহজ এই কাজ করতে পারাই একজন ক্রিকেটারের মূল চ্যালেঞ্জ।

৩. স্বপ্নকে ধাওয়া করা
খেলায় আমার উত্থান-পতন ছিলই। কিন্তু খেলোয়াড় হিসেবে আমি কখনোই হারতে পছন্দ করতাম না। বাস্তবে শুধু সন্তানদের সঙ্গে খেলার সময়ই আমি নিজেকে ছাড় দিই। কারণ, আমার স্ত্রী আমাকে বলেছে যে মাঝেমধ্যে সন্তানদের জিততে দিতে হয়। কিন্তু সব সময় আমি তাদের জিততে দিই না। কারণ, তাদের সামনে এখনো অনেকটা পথ পড়ে আছে এবং এই পথে তাদের লড়াই করে জিততে হবে। আমি সব সময়ই আমার সন্তানদের বলি, ‘তোমাকেই জীবনের পথে এগিয়ে যেতে হবে, অনেক পরিশ্রম করতে হবে এবং জীবনে জিততে হবে।’ আমি ১৫ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট শুরু করি এবং তখন থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল একজন টেস্ট খেলোয়াড় হওয়া। দেশের জন্য কিছু করার ইচ্ছেটা আমার তখন থেকেই তীব্রতা পেতে শুরু করে। সেই স্বপ্নকে ধাওয়া করেই আমি এত দূর এসেছি।

আপনারা পড়ছেন, সাফল্যের সাত সোপান : শচীন টেন্ডুলকার

৪. সফল নয়, চাই সেরা হওয়ার লড়াই
আমি কখনো নিজের জন্য কোনো শেষ ভেবে রাখিনি। ঠিক করিনি যে এই পর্যন্ত গিয়ে আমি থেমে যাব। আমার বাবার একটি উপদেশ সব সময়ই মনে রাখি, ‘জীবনে কখনো শর্টকাট খুঁজো না। এটা তোমাকে ক্ষণিক সাফল্য দেবে, কিন্তু তোমাকে সেরা বানাবে না। সেরা হওয়ার পথ সব সময়ই বন্ধুর ও কঠিন। কিন্তু তুমি যদি নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো এবং ধৈর্য ধরো, কেউ তোমার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।’ আমি আমার সারা জীবনে কখনো এই উপদেশ ভুলিনি। আমি সফল হওয়ার জন্য নয়, সেরা হওয়ার জন্যই কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং স্বাভাবিক পথেই জীবনকে চালিয়ে নিয়ে এসেছি।

৫. গতকালের কথা ভুলে যাও
ক্যারিয়ারের শুরুতে ম্যাচের আগের রাতে আমি ঘুমাতে পারতাম না। সারা রাত ধরে আমি টস করতাম, পরদিন ম্যাচে কী হবে। ঘুমানোর জন্য তখন আমাকে নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হতো। কিন্তু এখন আমি আর তা করি না। কারণ, আমি জানি এটা কোনো ফল এনে দেয় না; বিশেষ করে ম্যাচের পরে আমি আর কখনো সেই ম্যাচ নিয়ে ভাবি না। আমি কারও সঙ্গে নিজের তুলনায় বিশ্বাসী নই। আমি কেবল আমার নিজের ভুলগুলো নিয়ে নেটে পরিশ্রম করি এবং পরবর্তী ম্যাচের জন্য মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করি।

৬. একটি লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাওয়া
নিজেকে নিয়ে আমি কখনোই খুব বেশি দূর চিন্তা করি না। আমি আমার পরবর্তী কাজটিকেই সব সময় চিন্তায় রাখি। যেকোনো খেলোয়াড়ের জন্যই এটা একটা চ্যালেঞ্জ, নিজের কাজ নিয়ে একাগ্র মনে সাধনা করে যাওয়া। নিজের চিন্তাকে একটি মাত্র ফ্রেমে বেঁধে রাখা। বাইরের জগতের হাজারো প্রলোভনকে উপেক্ষা করে নিজের কাজ করে যাওয়া। এগুলোই ছিল আমার কাছে ক্রিকেটের সাধনা। আমি ঠিক করে নিতাম, কখন কোন কাজটি করব। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় আমি ক্রিকেট নিয়ে খুব বেশি ভাবতাম না। গান শোনা, সন্তানদের সময় দেওয়া, বাইরে বেড়াতে যাওয়া—এভাবে নিজেকে একজন সাধারণ মানুষের কাতারে নিয়ে আসতাম। কিন্তু যখন মাঠে নামতাম, তখন আমার ভাবনায় শতভাগ ক্রিকেট ছাড়া আর কিছুই থাকত না। লক্ষ্য অর্জনের পথে মাঝেমধ্যে নিজেকে বিশ্রাম দেওয়া এবং পুনরায় খুব দ্রুত আগের অবস্থানে ফিরে আসতে পারা একজন খেলোয়াড়কে অনেক দূর নিয়ে যাবে।

৭. হাল না ছাড়া
আমাদের জীবনটা আসলে কিছু পর্যায়ের সমন্বয়, যেখানে আমরা নিজেদের জন্য লক্ষ্য ঠিক করি, আর সেগুলো অর্জনের জন্য কাজ করি। জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এ ক্ষেত্রে মা-বাবার ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি। মা-বাবাই পারেন সন্তানকে শেখাতে, যাতে করে সে জীবনকে সহজভাবে নেয়, সঠিক পথেই নিজেকে নিয়ে যায় এবং সাহসের সঙ্গে জীবনের চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হয়। আমার বাবা আমাকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছিলেন, যাতে করে আমি আমার স্বপ্নের পথে চলতে পারি। যে সময় আমি ক্রিকেটের জগতে নিজেকে মেলে ধরার আপ্রাণ চেষ্টা করছিলাম, তিনি তখন আমাকে বলেছিলেন, ‘হাল ছেড়ে দিয়ো না। প্রতিটি অন্ধকার টানেলের শেষেই আলো থাকে।’ আমি হাল ছেড়ে দিইনি। এ কারণেই আমি আজকে আলোর দেখা পেয়েছি।

সূত্র: ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য অবলম্বনে লিখিত। ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মনীষ দাশ | সূত্র: প্রথম আলো

Leave a Reply

Subscribe to Posts | Subscribe to Comments

ই-মেইল সাবস্ক্রিপশন

Enter your email address:

Delivered by FeedBurner

ক্যাটাগরীসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Protected by Copyscape

ব্লগটি মোট পড়া হয়েছে

বাঙলা ব্লগ. Powered by Blogger.

- Copyright © মেহেদী হাসান-এর বাঙলা ব্লগ | আমার স্বাধীনতা -Metrominimalist- Powered by Blogger - Designed by Mahedi Hasan -