.....



আমাদের দেশে হাঁস-মুরগির মতো অনেক বাড়িতেই কবুতর পালন করা হয়ে থাকে। এখনও পুরনো পদ্ধতিতে কবুতর পালন করা হচ্ছে। তবে ইদানীং জনসাধারণের মাঝে উন্নত পদ্ধতিতে কবুতর পালনে আগ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। বসতবাড়িতে অল্প শ্রমে ও স্বল্প ব্যয়ে অবসর সময়ে কবুতর পোষা যায়। কবুতর পুষে একদিকে পরিবারের আমিষ জাতীয় খাদ্যের চাহিদা মেটানো যায়, অপরদিকে বাড়তি আয়েরও সুযোগ হয়। বাচ্চা কবুতরের মাংস সুস্বাদু ও বলকারক হওয়ায় বাজারে এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।

জীবন চক্র
পুরুষ ও স্ত্রী কবুতর জোড়া বেঁধে একসঙ্গে বাস করে। এদের জীবনকাল ১২ বছর। স্ত্রী-পুরুষ উভয় মিলে খড়কুটা সংগ্রহ করে ছোট জায়গায় বাসা তৈরি করে। ডিম পাড়ার স্থান ৫ থেকে ৬ মাস বয়সে স্ত্রী কবুতর ডিম পাড়া শুরু করে। এরা ২৮ দিন অন্তর ৪৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ২ (দুই)টি ডিম দেয় এবং পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত দেয়া ডিমে বাচ্চা উত্পাদান ক্ষমতা সক্রিয় থাকে। স্ত্রী-পুরুষ উভয়েই পালা করে ডিমে তা দেয়। ডিম থেকে বাচ্ছা ফুটতে ১৭-১৮ দিন সময় লাগে। ডিমে তা দেয়ার ১৫ থেকে ১৬ দিনের মধ্যে স্ত্রী ও পুরুষ উভয় কবুতরের খাদ্য থলিতে দুধ জাতীয় বস্তু তৈরি হয় যা খেয়ে বাচ্চারা ৪ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। স্ত্রী ও পুরুষ কবুতর উভয়েই ১০ দিন পর্যন্ত এদের বাচ্চাকে ঠোঁট দিয়ে খাওয়ায়, এরপর বাচ্চারা দানাদার খাদ্য খেতে আরম্ভ করে।

কবুতরের জাত
পৃথিবীতে প্রায় দুশ’ থেকে তিনশ’ জাতের কবুতর আছে। মাংস উত্পাদনের জন্য সিলভারকিং, হামকাচ্চা, ডাউকা, কাউরা, গোলা, গোলী, পক্কা, লক্ষা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। চিত্তবিনোদনের জন্য ময়ুরপঙ্খী, সিরাজী, লাহোরী, ফ্যানটেইল, জেকোডিন, মুক, গিরিবাজ, টেম্পলারলোটন—এসব জাতের কবুতর রয়েছে। এছাড়াও আমাদের দেশে উল্লেযোগ্য কবুতরের একটি জাত হচ্ছে ‘জালালী কবুতর’।
এ নামটি হজরত শাহ্জালাল (রহ.) এর পুণ্য স্মৃতির সঙ্গে জড়িত।

আপনারা পড়ছেন, কবুতর পালন : কম সময়ে অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ

পালনের সুবিধা
কবুতর পালন আনন্দদায়ক। কবুতরের গোশত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। প্রতিমাসে গড়ে ২টি বাচ্চা পাওয়া যায় এবং ৩-৪ সপ্তাহের মধ্যেই বাচ্চা খাওয়ার উপযোগী হয়। তাদের রোগবালাই কম। খাবার করচ কম এবং থাকার ঘর তৈরি করতে খরচ কম লাগে। স্বল্প পুঁজি ও শ্রমে সহজেই লাভবান হওয়া যায়।

কবুতরের বাসস্থান
কবুতরের থাকার ঘরটি উঁচু করে এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে ক্ষতিকর প্রাণী ও পাখিদের নাগালের বাইরে থাকে। ঘরে প্রচুর আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা রাখতে হবে। বৃষ্টির পানি যাতে ঢুকতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। হালকা কাঠ, পাতলা টিন, বাঁশ বা প্যাকিং কাঠ দিয়ে কবুতরের ঘর বানানো যায়। প্রতিজোড়া কবুতরের জন্য ৩০ সেমি. চওড়ার এবং উচ্চতায় ৩০ সেমি. মাপের খোঁপ বানাতে হবে। কবুতরের ঘর পাশাপাশি বা কয়েকতলা বিশিষ্ট করা যেতে পারে। প্রতিটি খোপের জন্য একটি করে দরজা থাকবে। অধিক কবুতর পুষলে প্রয়োজনের তুলনায় কয়েকটি খোপ বেশি রাখতে হবে। প্রতিমাসে ১-২ বার করে ঘরে কবুতরের বিষ্টা পরিষ্কার করতে হবে এবং যাতে কবুতরের ঘর পরিষ্কার ও শুকনো থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। খাবার ও পানির পাত্র কবুতরের ঘরের কাছেই রাখতে হবে। এছাড়াও কবুতরের গোসলের জন্য পানি ও ধূলি এবং বাসা বানানোর জন্য খড়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে।

খাদ্য
কবুতর সাধারণত গম, মটর, খেসারি, সরিষা, ভুট্টা, কলাই, ধান, চাল, কাউন, জোয়ার—এসব শস্যদানা খেয়ে থাকে। এরা মুক্ত আকাশে বিচরণ করে এবং পছন্দমত স্থান থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করে থাকে। এছাড়া স্বাস্থ্য রক্ষা, দৈহিক বৃদ্ধি ও বংশবৃদ্ধির জন্য এদের খাবারের শতকরা ১৫ শতাংশ থেকে ১৬ শতাংশ আমিষ থাকা প্রয়োজন। তবে মুরগির জন্য নির্ধারিত তৈরি সুষম খাবার খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়। প্রতিটি কবুতর দৈনিক গড়ে ৩৫ থেকে ৬০ গ্রাম দানাদার খাদ্য খেয়ে থাকে। কবুতর ছানার দ্রুত বৃদ্ধি, হাড়শক্ত ও পুষ্টি এবং বয়স্ক কবুতরে সুস্বাস্থ্য এবং ডিমের খোসা শক্ত হওয়ার জন্য ঝিনুকের চূর্ণ, চুনাপাথর, শক্ত কাঠকয়লার চূর্ণ, হাড়ের গুঁড়ো, লবণ এসব মিশিয়ে ‘গ্রিট মিকচার’ তৈরি করে খাওয়ানো প্রয়োজন। এছাড়াও প্রতিদিন কিছু কিছু কাঁচা শাক-সবজি কবুতরকে খেতে দেয়া ভালো।

খরচ
১০ জোড়া কবুতরের জন্য ১টি ঘর বানাতে (খাবারের পাত্র, পানির পাত্রসহ) আনুমানিক ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জোড়া কবুতরের ক্রয়মূল্য প্রায় ১০০০ টাকা এবং ১০ জোড়া থেকে মাসে প্রায় ৮ থেকে ৯ জোড়া বাচ্চা পাওয়া যাবে। এগুলো বিক্রি করে মাসে গড়ে ৬০০ টাকা আয় করা যাবে।

সূত্র : উদ্যোক্তা ওয়েবসাইট

Leave a Reply

Subscribe to Posts | Subscribe to Comments

ই-মেইল সাবস্ক্রিপশন

Enter your email address:

Delivered by FeedBurner

ক্যাটাগরীসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Protected by Copyscape

ব্লগটি মোট পড়া হয়েছে

বাঙলা ব্লগ. Powered by Blogger.

- Copyright © মেহেদী হাসান-এর বাঙলা ব্লগ | আমার স্বাধীনতা -Metrominimalist- Powered by Blogger - Designed by Mahedi Hasan -