.....



নাদিয়া আফরিন

ব্যবসায়িক উদ্যোক্তারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হতে হলে একজন ব্যক্তির তিনি যা করতে চান সে সম্পর্কে ভালো ধারণা ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকা দরকার। বাজারে তার ব্যবসায়িক ধারণাগুলোকে লাভজনক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাকে সব ধরনের  প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

এখন প্রশ্ন, ‘ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা’ কাকে বলে? ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা এমন একজন ব্যক্তি যিনি কর্মী হিসেবে কাজ করার বদলে একটি ছোট ব্যবসা চালাতে পারেন যা সম্পূর্ণভাবে তার সৃজনশীলতা, অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনার ফল। এ ক্ষেত্রে তাকে ব্যবসায়িক ঝুঁকি ও সফলতা সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতে হবে।

আমাদের দেশের অধিকাংশ যুবক ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হওয়ার কথা ভাবতে পারেন নাÑ এটা প্রকৃতপক্ষে তাদের দোষ নয়। তাদের পরিবার তাদের চিন্তাধারাকে এমনভাবে তৈরি ও প্রভাবিত করে রেখেছে যে ব্যবসায়িক উদ্যোগের চিন্তা-ধারণা তাদের কল্পনাতেও আসে না। তারা শুধু একজন চাকরিজীবী হওয়ার কথাই ভাবতে পারেন তা ওই চাকরি নিয়ে তিনি যতই অসন্তুষ্ট হন না কেন।

খুবই কষ্ট লাগে যখন দেখি একজন ব্যাংক কর্মকর্তার স্নাতক ডিগ্রি পদার্থবিদ্যা বা এমন কোনো বিষয়ে যা ব্যাংকিং সম্পর্কিত কোনোরকম কাজের সঙ্গেই যুক্ত নয়। এটি আমাদের দেশের একটি খুবই পরিচিত দৃশ্যপট। যেহেতু একজন মানুষ তার চাকরি নিয়ে মোটেই সন্তুষ্ট নন, তাই তিনি তার কার্যক্ষেত্রে পূর্ণ দক্ষতা কখনোই দেখাতে পারেন না। এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো বছর শেষে তাদের প্রত্যাশিত সফলতা লাভ করে না যা দেশের অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব ফেলে।
আমাদের মনে আরেকটা ধারণা কাজ করে যে একমাত্র ধনী পরিবারের হলেই ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হওয়া যায়; কিন্তু এটা ভুল ধারণা। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন মানুষের মনে এমন ধারণাটা কাজ করে? কারণটা হচ্ছে, তারা মনে করেন, ব্যবসা করতে অর্থ বিনিয়োগ করতে হয় আর যেহেতু তারা ধনী নন তাই ঝুঁকি নিয়ে অর্থ বিনিয়োগ করতে চান না। তাই তারা সব সময় একটা চাকরি পাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ছোটেন। কিন্তু এদের বেশির ভাগই কোনো চাকরি পান না। শুরু হয় হতাশা। এমন ঘটনা কি আমরা মাঝেমধ্যেই শুনি না যে, বছরের পর বছর চাকরি না পেয়ে কোনো এক যুবক আত্মহত্যার পথ বেছে  নিয়েছে? কিন্তু এটা কি আদৌ আমাদের কাম্য?

আপনারা পড়ছেন, উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হবেন কীভাবে?

যারা এ রকম হতাশার মধ্যে জীবন ধারণ করছেন এবং যারা সত্যিকার অর্থে সৎ পথে কিছু করে আত্মসম্মানের সঙ্গে জীবন ধারণ করতে চান তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, এমন হাজার হাজার সফল ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা পৃথিবীর বুকে আছেন যারা অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সদস্য। তারা তাদের মনের কথা শুনেছেন। তারা অসংখ্য প্রতিকূলতার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও থেমে থাকেননি। তারা তাই করেছেন যা তারা করতে ভালোবাসেন। তারা কখনো এমন কোনো ব্যবসা করেননি যাতে তাদের কোনো আগ্রহ ছিল না এবং যে কাজ সম্পর্কে তাদের ভালো কোনো জ্ঞান ছিল না।

যারা বিশ্বাস করেন, শুধু ধনীরাই নিজস্ব ব্যবসা করতে পারেন তাদের এটা বোঝা উচিত যে, এ ধরনের ব্যবসা করতে ঝুঁকির কথা মাথায় রাখতে হয়। বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে কেন তারা এই ঝুঁকির পথ বেছে নেবেন? তারা কেন ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হওয়ার কথা ভাববেন? এ ক্ষেত্রে আদর্শ উদাহরণ হলেন বিল গেটস। তিনি অত্যন্ত ধনী পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও নিজে কিছু করার কথা ভেবেছেন। তিনি সেই কাজ করেছেন যা তিনি করতে ভালোবাসতেন। তিনি তার নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেছেন অক্লান্ত পরিশ্রম করে।

আজ পৃথিবীর বুকে বিল গেটস সফল ব্যবসায়িক উদ্যোক্তাদের জন্য আদর্শ। এ ছাড়া আমাদের দেশের ডক্টর ইউনূসের নাম উল্লেখযোগ্য। যিনি আজ পৃথিবীর বুকে প্রথম সারির সফল ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হিসেবে এক নামে পরিচিত এবং আমাদের গর্ব। আর তা ছাড়া যে কোনো কাজেই কমবেশি ঝুঁকি থাকে। তাই নয় কি?

এখন আপনাকে ভাবতে হবে যে আপনি আসলে কী করতে ভালোবাসেন। হয়তো আপনি কোনো চাকরি করেন এবং আপনার পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব আপনার। এ মুহূর্তে আপনার পক্ষে চাকরি ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়; কিন্তু অন্যদিকে আপনি সত্যিকারভাবে একজন সফল ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হতে চান। আমি আপনাকে এটাই বলব, এ মুহূর্তে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার দরকার নেই কিন্তু আপনি শুরু করে দিন আপনার ব্যবসাজীবন। আপনাকে অবশ্যই আপনার কাজের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনার নিজের জন্য একটি সময় ছক তৈরি করতে হবে। সব সময় মনে রাখতে হবে সেই প্রবাদ ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। এ ইচ্ছাটা হতে হবে ঠিক মানে আপনাকে বুঝতে হবে আপনি সত্যিকারভাবে কী করতে ভালোবাসেন এবং সে কাজে আপনার দক্ষতা কতটুকু। আপনি কারো সহযোগিতা না পেলে কখনো হতাশ হবেন না। মনে রাখবেন আল্লাহ আমাদের সঙ্গে সব সময় আছেন। আর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই গান ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলবে।’
আপনি নিজেকে একজন সফল ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হিসেবে প্রমাণ করতে পারবেন যদি আপনার মাঝে কিছু প্রয়োজনীয় গুণাবলি থাকে। আর সে গুণাবলি হলো সঠিক কাজ নির্বাচন করা, সততা এবং নিজের কাজের প্রতি আস্থা, সঠিক পরিকল্পনা, সঠিকভাবে অর্থ ব্যয় করা, ধৈর্যশীলতা, ক্রেতার সন্তুষ্টি বুঝতে পারা, নিজের ব্যবসার প্রচারণা নিজে করতে পারা। জনসাধারণের মনে ব্যবসা সম্পর্কে ইতিবাচক চিন্তা আনতে পারা, একজন সাধারণ ক্রেতাকে নিত্যদিনের ক্রেতায় পরিণত করা, ক্রেতার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, নিজেকে অভিজ্ঞ করে তোলা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পুরস্কার দেওয়া, ব্যবসাকে সফলতম এবং জনগণের নজর কাড়ার জন্য ব্যবসায় পর্যাপ্ত সময় দেওয়া।

আসুন, একবার উদ্যোগ নিয়ে দেখুন। সর্বাত্মক চেষ্টা করুন। নিশ্চয়ই সফলতা আসবে। আপনি হবেন আপনার নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার।

লেখিকা : সফটওয়্যার ডেভেলপার


সূত্র : অর্থনীতি প্রতিদিন

Leave a Reply

Subscribe to Posts | Subscribe to Comments

ই-মেইল সাবস্ক্রিপশন

Enter your email address:

Delivered by FeedBurner

ক্যাটাগরীসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Protected by Copyscape

ব্লগটি মোট পড়া হয়েছে

বাঙলা ব্লগ. Powered by Blogger.

- Copyright © মেহেদী হাসান-এর বাঙলা ব্লগ | আমার স্বাধীনতা -Metrominimalist- Powered by Blogger - Designed by Mahedi Hasan -