.....


নিউইয়র্ক টাইমসের নিয়মিত কলামিস্ট এবং ‘The Secrets of Happy Families’ বইয়ের রচয়িতা ব্রুস ফেইলারের একটি সাক্ষাৎকার প্রিয় ফিনান্সের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকারটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন হার্ভাড বিজনেস রিভিউ এর প্রধান সম্পাদক আ্যডি ইগনিটাস।

আ্যডি: ব্রুস, আমাদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । শুরুতেই চলে আসি আপনার সদ্য প্রকাশিত বই ‘The Secrets of Happy Families’ প্রসঙ্গে

ব্রুস: পারিবারিক অর্থনীতিতে বর্তমান সময়ে দুটি বড় পরিবর্তন এসেছে। আজকাল পরিবারের নারী সদস্যেরা স্বতস্ফূর্তভাবে ঘর ছেড়ে বের হচ্ছেন, তাই অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী কর্মীদের উপস্থিতি বেড়েছে ব্যাপকভাবে। অন্যদিকে পুরুষ সদস্যেরা ঘর সামলানোর দিকে বেশি মন দিচ্ছেন। এভাবে নারী-পুরুষের পারিবারিক ভূমিকা উল্টে যাচ্ছে, আবার অনেক পরিবারে বাবা-মা দুজনেই চাকুরীজিবী। এসব নানা কারণে দেখা দিচ্ছে পারিবারিক সংকট। আর এই সমস্যার সমাধান করতে অনেকেই বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ, তান্ত্রিক গুরু ইত্যাদি ব্যক্তির দারস্থ হচ্ছেন। নতুন প্রজন্মের অভিভাবকেরা কিভাবে নিজেদের কর্মস্থলের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি ঠিক একইভাবে পারিবারিক সমস্যাগুলোও মোকাবেলা করতে পারেন সে সম্পর্কে সামগ্রিক একটি ধারণা দিয়েছি আমি বইটিতে।

আ্যডি: এযাবৎকালে পারিবারিক সংকট কাটিয়ে ওঠা নিয়ে অনেক মতামত প্রকাশিত হয়েছে, আপনার বইয়ে মূলত কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে?

ব্রুস: সাধারণ পরিবারগুলো কী চমৎকারভাবে দৈনন্দিন কর্মজীবনের ধ্যান-ধারণা পারিবারিক সমস্যা মেটাতে কাজে লাগাচ্ছে তা আমি স্বচক্ষে দেখেছি । আরো বেশ চমকপ্রদ বিষয় হলো এ ব্যাপার অনেকেই Agile Software Development পদ্ধতি দ্বারা অণুপ্রাণিত হয়েছেন । নিজের পরিবারেও আমি এমন একটি নিয়মের প্রচলন করেছি। আমাদের ৮ বছরের দুটি কন্যাসন্তান আছে, প্রতিদিন তাদের সাথে ২০ মিনিটের একটা ছোট্ট আলাপচারিতায় বসি আমি ও আমার স্ত্রী । তারা কোন কাজে ভালো করেছে? কোন কাজগুলোতে ভালো করেনি? কিভাবে এই কাজগুলো আরও ভালভাবে করা যেতে পারত?–মাত্র এই তিনটি প্রশ্নের উত্তরেই উঠে আসে অনেক কিছুর সমাধান। সন্তানেরা আমাদের সাথে আলোচনা করেই নিজেদের পুরস্কার অথবা শাস্তি ঠিক করে নিচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব শিশু অনেক ছোট বয়স থেকেই নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে শেখে তারা ভবিষ্যতে নিজেদের জীবন গুছিয়ে নিতে মুন্সিয়ানার পরিচয় দেয়।

 আপনারা পড়ছেন, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের ধারনা পারিবারিক জীবনের অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে

আ্যডিঃ অনেক পাঠকই একটি বিষয়ের সাথে একমত হবেন, এমনকি আমি নিজেও যখন বইটি পড়েছি তখন মনে হয়েছে বইটি স্বাভাবিক পারিবারিক জীবনে অনেকটা অনাধিকার প্রবেশ করছে।

ব্রুস: দেখুন, বর্তমানে আমাদের অধিকাংশেরই পারিবারিক জীবন বেশ বিশৃঙ্খল, আমরা সবসময়ই নিজেদের ভাবনাগুলোর প্রতিরক্ষা করে চলেছি। যা কিনা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মতবিরোধের অন্যতম কারণ। আমি বইয়ে যে পদ্ধতির কথা বলেছি, তা অণুসরণ করলে আপনি অন্তত আপনার পরিবারের সাথে বসে দুদন্ড কথা বলার সুযোগ বের করবেন। আপনি আপনার পরিবারকে কিভাবে পরিচালনা করবেন সে ব্যাপারে কখনই নির্দিষ্ট কিছু ধারণার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়। কারণ সময় যত গড়াচ্ছে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বদলাচ্ছে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি।

আ্যডি: এই ধারণার স্বপক্ষে আপনার বক্তব্য কি?

ব্রুস: আপনি একটি পুরনো ধারণার কথাই চিন্তা করুন, গবেষণায় প্রমাণিত যে একসঙ্গে বসে রাতের খাবার খাওয়া আপনার সন্তানের উপর একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে এই ধারণার প্রয়োগ কতটুকু হয়? আমাদের আজকের এই ব্যস্ত জীবনে সন্তান্দের সাথে বসে একসঙ্গে রাতের খাবার খাওয়া একেবারেই অসম্ভব। কারণ, প্রায়ই দেখা যায় আপনি কর্মস্থল থেকে দেরি করে বাড়িতে ফিরছেন এবং ততক্ষণে আপনার সন্তানেরা গভীর ঘুমে অচেতন। খাবার টেবিলে আপনি তাদেরকে যে সময় দিতেন, সেই সময়টা আপনি দিনের অন্য যেকোন অংশেও তাদেরকে দিতে পারেন। ফলাফল কিন্তু একই হবে। কর্মমস্থলের মত পারিবারিক ক্ষেত্রেও সময় ব্যবস্থাপনার ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আ্যডি: পারিবারিক সংকটের এই বিষয় নিয়ে এখনও পর্যন্ত অনেক বইই লেখা হয়ছে, এদের মধ্যে স্টেফেন ক্যোভি রচিত ‘Seven Habits of Effective Families’ বইটি উল্লেখযোগ্য। তাদের এই মতামতগুলো আপনি কতখানি সমর্থন করেন?

ব্রুস: আমার মতে এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো ধারণার প্রবর্তন করেন ক্যোভি। তার এই বইটি নিয়ে আমার জিম কলিন্সের সাথেও আলোচনা হয়েছে। এসব গবেষনায় উঠে এসেছে কিভাবে পরিবারের সদস্যরা পারিবারিক সংকটের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেন। পারিবারিক মূল্যবোধের শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলতে হলে শিশুদেরকে অবশ্যই বিভিন্ন নৈতিক বিষয় সম্পর্কে বিশদ ধারণা দিতে হবে।

আ্যডি: আপনি ব্যবসাক্ষেত্রের ধারনাগুলো পারিবারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগের কথা বলছেন, কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্যই থাকে অন্য সব প্রতিষ্ঠানকে পেছনে ফেলে সাফল্যের সর্ব শিখরে পৌঁছনো। এই ধরনের্ মানসিকতার চর্চা পরিবারের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলবে বলে কি আপনি মনে করেন না?

ব্রুস: আমার তা মনে হয় না। কর্মজীবন এবং পারিবারিক জীবন আলাদা হলেও এই দুটোর মধ্যে একটি সংযোগ রয়েছে। আমি আমার বইয়ে এ সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা দিয়েছি। আটলান্টা শহরের একদল গবেষক শিশুদের উপর একটি ছোট্ট পরীক্ষা চালান, নিজেদের পরিবারের শেকড় সম্পর্কে কে কতটুকু জানে তাইই ছিল পরীক্ষার মূল বিষয়বস্তু। দেখা গেল, এই পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নাম্বারপ্রাপ্ত যে শিক্ষার্থী সে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি আত্মপ্রত্যয়ী ও দৃড় চেতনা সম্পন্ন। যে শিশুটি জানে তার পরিবার এর আগেও নানা সব সমস্যার মোকাবেলা করে এসেছে, সে ভবিষ্যতে সেই একই ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হলে ঘাবড়ে না গিয়ে বরং দক্ষতার সাথে তার সমাধান করে। ব্যবসার ক্ষেত্রেও ব্যপারটা ঠিক একই রকম। পূর্বে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো জানে কিভাবে এই ধরনের পরিস্থিতি এড়ানো যায় বা মোকাবেলা করা যায়।


 আপনারা পড়ছেন, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের ধারনা পারিবারিক জীবনের অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে


আ্যডি: ঠিক একইভাবে কি পারিবারিক ধারণাগুলোও ব্যবসাক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়?

ব্রুস: এখনো পর্যন্ত আমি এ বিষয়ে কোন চিন্তা-ভাবনা করিনি । তবে আমার একটি বেশ চমৎকার অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে ভাগ করতে চাই, আমি দেখেছি যে তুলনামূলকভাবে বেশি নারী সদস্যের উপস্থিতি পরিবারের শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। আমি এর নাম দিয়েছি ‘the law of two women’ । এরকম বিচিত্র কিছু পারিবারিক ধারণা আপনি ব্যবসাক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। আমি আগেও বলেছি এবং আবারো বলছি, পারিবারিক ও কর্মজীবন একে অন্যের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। তাই এই দুটো বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন আপনার দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ ও সুন্দর করে তুলবে।

Leave a Reply

Subscribe to Posts | Subscribe to Comments

ই-মেইল সাবস্ক্রিপশন

Enter your email address:

Delivered by FeedBurner

ক্যাটাগরীসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Protected by Copyscape

ব্লগটি মোট পড়া হয়েছে

বাঙলা ব্লগ. Powered by Blogger.

- Copyright © মেহেদী হাসান-এর বাঙলা ব্লগ | আমার স্বাধীনতা -Metrominimalist- Powered by Blogger - Designed by Mahedi Hasan -