.....
- Back to Home »
- স্বরচিত গল্প »
- প্রাকৃতিক রংয়েই প্রকৃতি দর্শন
আমাদের ছোট বেলাতে বাবা ছুটির দিনগুলোতে ওয়েস্টার্ণ রেঞ্চারদের গল্প শোনাতেন। কাউবয়দের গল্প বলতেন। কিভাবে কাউবয়রা প্রতিকূল পরিস্থিতির মোকাবিলা করতেন, অমানুষিক পরিশ্রম করে একসময় ছোট্ট এক খন্ড রেঞ্চের মালিক হতেন, সেসব গল্প শুনে আমারও রেঞ্চার হওয়ার ইচ্ছে জাগত। আমিও চাইতাম আমার জীবনেও এ্যাডভেঞ্চার আসুক। তখন প্রকৃতির সাথে সময় কাটাতে আমি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতাম। অবাক দৃষ্টিতে রংধনুর দিকে তাকিয়ে থাকতাম। রং পেন্সিল দিয়ে হোমওয়ার্কের খাতায় একে ফেলার চেষ্টা করতাম রংধনু। কল্পনার রেঞ্চারদের একে ফেলতাম, কাউবয়রাও বাদ যেত না।
বাবা যখন তার সহকর্মীদের সাথে মাধবকুন্ড সফরে গেলেন, আমিও তার সাথে ছিলাম। আর তখনই ঝড়নার অপরূপ দৃশ্য আমার মনে গেথেঁ গেল। আকিঁবুকিতে কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই আমি আজেবাজে জিনিস একে খাতা ভর্তি করে ফেলতাম। স্কুলের হোমওয়ার্কের জায়গায় থাকত আকিঁবুকি। সেজন্যই স্যারদের বেত আর আমার পিঠ-হাতের মাঝে সখ্যতা গড়ে ওঠে। একবার কি এক খেয়াল হল, এক ক্যানভাসে আমি আমার স্বপ্নগুলো আঁকব। স্কুলের পাশের দোকান থেকে টিফিনের দশ টাকা দিয়ে কিনে আনলাম ক্যানভাস পেপার। প্রাকৃতিক রং দিয়ে আঁকতে থাকলাম রংধনু, ঝড়না, রেঞ্চার, কাউবয়, রেঞ্চ হাইস আরো কত কি। রং বানালাম হলুদ, মরিচ, মাটি, কিছু নাম না জানা গাছের গুটি ও ফল দিয়ে। ”প্রাকৃতিক রংয়েই প্রকৃতি দর্শন” নামও দিয়ে ফেললাম ছবিটির। ফেলে রাখলাম বিছানার তলায়। গত ঈদে ছোট মামা যে সাদা টি-শার্টটি গিফট দিয়েছিলেন, সেটায়ও একই দৃশ্য একে ফেললাম। ভয়ে এটাও লুকিয়ে রাখলাম। যদি মা রাগ করেন? এর আগেও অনেক শার্ট প্যান্ট আমি আকিঁবুকি করে নষ্ট করে ফেলেছিলাম আর মা সেই অনুপাতে উত্তম-মধ্যমও দিয়েছিলেন।
তবে মাঝেমধ্যে টি-শার্টটি গায়ে দিয়ে বের হতাম, অবশ্যই শার্ট দিয়ে ঢেকে। বন্ধুরা খুব প্রশংসা করত দেখে। স্কুলে বার্ষিক অনুষ্ঠান হবে। সেই উপলক্ষে লাইব্রেরী রুমে বাংলাদেশের কয়েকজন বড় বড় চিত্র শিল্পীর আঁকা ছবি প্রদর্শিত হবে। বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হল, আমাদের স্কুলের পাঁচজনের ছবিও একই সাথে প্রদর্শিত হবে। এ এক মহা সুযোগ, কানাঘুষা চলতে লাগল কে কে হবে সে সৌভাগ্যবান? প্রদর্শনী চলবে সাত দিন। ছবি জমা পড়ল একশত পয়তাল্লিশটা। এক এক জন সবোর্চ্চ পাঁচটি ছবি জমা দিতে পারবে। কেউ কেউ তাই দিল। আমার বন্ধু আবদুল্লাহ এসে বলল, দোস্ত তুই তোর “প্রাকৃতিক বংয়েই প্রকৃতি দর্শন” ছবিটা জমা দে। আমি বললাম, দূর, এ রকম উদ্ভট ছবি প্রথম বাছাইতেই বাদ পরে যাবে। তারপরেও আবদুল্লাহর বারবার বলাতে ছবিটি আমি জমা দিলাম।
প্রদর্শনীর চতুর্থ দিন আজ। সৌভাগ্যবান পাঁচ জনের ছবি আজই দেয়ালে সাটানো হবে। ছাত্র-ছাত্রীরা সবাই ভীড় জমাচ্ছে লাইব্রেরী রুমে। আমি আর আবদুল্লাহও ধাক্কাধাক্কি করে কোনরকমে ঢুকলাম। এবং যা দেখলাম তাতে উৎফুল্ল না হওয়ার কোন কারন ছিল না। আমার ছবিটি প্রদর্শনীতে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। ছবিটির নীচে আলাদা একটি ক্যানভাসও সাটানো হয়েছে। যেখানে ছবিটি সম্পর্কে গুনীজন ও অন্যান্যদের মন্তব্যও লেখা হচ্ছে। প্রদর্শনীর শেষ দিন পুরষ্কার হিসেবে আমাকে দেয়া হবে এক লক্ষ টাকার চেক ও একটি কম্পিউটার। আমার খুশি আর দেখে কে? আমার ছোট ভাই-বোনসহ মা-বাবাও প্রদর্শনীতে এলেন। বাবা বললেন, বাস্তবে না হলেও ক্যানভাসে আমার ছেলে স্বপ্ন পূরন করেছে, দাগ থেকে দারুন কিছু হয়, আসলেই সত্যি।