.....
- Back to Home »
- আবদুল্লাহ সিরিজ , আমার লেখা , সায়েন্স ফিকশন , স্বরচিত গল্প »
- সায়েন্স ফিকশন : প্যারালেল ওয়ার্ল্ড
ওরে বাপরে, দশটা বাজে! ঘড়ির দিকে তাকিয়েই আতঁকে উঠল আবদুল্লাহ্। চোখ ঢ়গড়ে আড়মোড়া ভেঙ্গেই ছুটল বাথরুমের দিকে। গতরাতে ঘুমুতে ঘুমুতে প্রায় তিনটা বেজে গিয়েছিল। বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বইটা সম্পূর্ণ শেষ করেই ঘুমিয়েছিল। ওটা ওর একটা বদ অভ্যাস। কোন বই একবার হাতে পেলে সেটা সম্পূর্ণ পড়ে শেষ না করা অবদি ওর শান্তি নেই। বই পড়া খুব ভালো অভ্যাসের মধ্যে একটি। এটাকে ওর ক্ষেত্রে বদ অভ্যাস বলার কারন হচ্ছে, বই হাতে পেলে ও ওর সব রকম রুটিন ভেঙ্গে ফেলে। ওলট পালট হয়ে যায় সবকিছু। বই হাতে পেলেই খাওয়ায় অনিয়ম, নামাজে অনিয়ম, পড়ালেখা ও ঘুমেও অনিয়ম।
ওহ্, ফযর নামাজ কাযা হয়ে গেল, দাঁত মাজতে মাজতে ভাবল আবদুল্লাহ্।
ওর পুরো নাম মেহেদী আল আবদুল্লাহ্। বয়স প্রায় তেইশ ছুই ছুই। লারনার্স ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। এমনিতেই বেশ ভালো ছাত্র ‘ও’। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেনীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই কম্পিউটার ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর শর্ট ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করে ফেলে আবদুল্লাহ্। জীবনের লক্ষ্য আছে দুটো। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার বিজ্ঞানের উপর উচ্চ শিক্ষা লাভ করা। এর ফলশ্রুতিতেই লারনার্স ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয় আবদুল্লাহ্।
দেখতে দেখতে দুটি বৎসর কেটে গেল। এখন তৃতীয় বর্ষে। ইতিমধ্যেই ওর বেশ কয়েকটি আবিষ্কার দেশের গন্ডি পেড়িয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বও দারুন প্রশংসিত হয়েছে। তন্মধ্যে কাঠালের মত বড় লিচু, ছাগলের মত বড় মুরগি, পুকুরে পালন উপযোগী ইলিশ মাছ, ধান ও গমের সংযক্ত সংকর, অক্সিজেন বৃক্ষ ইত্যাদি জনপ্রিয়।
আবদুল্লাহর বাবা জনাব আবু বকর সিদ্দিক সাহেব ব্যবসায়ী মানুষ। বৎসরের অনেকটা সময়ই তিনি কাটিয়ে দেন বিদেশে। বাসায় সঙ্গ বলতে মা, ছোট বোন আর ভাবী। বড় ভাইয়াও ব্যবসার কাজে বাবার সঙ্গে থাকেন। আজ ‘ও’ বাসায় একা। বাবা ও মা হজ্বব্রত পালন করতে গেছেন সৌদি আরবে। ভাইয়া আছেন চায়নাতে, ব্যবসার কাজে। ভাবী ছোট বোনটিকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন তার বাবার বাড়ি। আগামী কাল চলে আসবেন। এমনিতেই ভোরে উঠে ফজর নামাজ আদায় করা ওর দৈনন্দিন কাজের মধ্যে একটি। আজ যে কি হল? ভাবতে ভাবতে ফ্রিজের কাছে চলে এল আবদুল্লাহ্। ফ্রিজে খাবার সব কিছুই রেডি করা আছে। শুধু বের করে মাইক্রোয়েভ ওভেন একটু গরম করে নিলেই হল। দুপুর বারোটায় আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে।
কাযা ফজর নামাজ আদায় করে রুটি আর ভাজা গরুর মাংস দিয়ে নাস্তা সাড়ল আবদুল্লাহ্। নিজের পড়ার টেবিলে যখন বসল তখন ঘড়িতে বাজে পৌনে এগারোটা। মাথাটা ঝিমঝিম করছে আর শরীরের ম্যাজম্যাজানি তো আছেই। নতুন কিছু নয়, বিলম্ব করে ঘুম থেকে উঠার শাস্তি এটা।
হঠাৎ মনে হল, আজ প্রফেসর ড. জলিল স্যারের নিকট ওর নিজের তৈরী একটি সফটওয়্যার জমা দেয়ার কথা। সফটওয়্যারটি অনেকগুলো কাজ প্রায় একসঙ্গে সম্পন্ন করে ফলাফল প্রদর্শন করে। এটি এক ফোটা রক্ত থেকে গ্রুপিং, আরএইচ ফ্যাক্টর, কম্প্লিট ব্লাড কাউন্ট, ক্রস ম্যাচিং, রক্তে ত্রুটি, জিন বিন্যাস, জিন ত্রুটি ইত্যাদি বের করতে পারে। এমনকি জিন ম্যাচিংও করতে পারে এটি। গত রাতে দশটা নাগাদ সব কাজ শেষ করে রেখেছিল, এখন আরেকবার চেক দিলে ভালো হয়, ভাবল আবদুল্লাহ্। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটির জন্য প্রয়োজন একটি কম্পিউটার ও একটি যন্ত্রের। যন্ত্রটি দেখতে অধুনা ব্লাড গ্লুকোজ মাপার যন্ত্রের মতই। যার দুটি প্রকোষ্ঠ থাকে। একটি প্রকোষ্ঠে একজনের রক্তের ফোটা সংয়ুক্ত স্লাইড ও অন্য আরেকটিতে জিন ম্যাচিংয়ের জন্য আরেকজনের রক্তের ফোটা সংযুক্ত স্লাইড প্রবেশ করানো হয়। তারপর এটি কম্পিউটারের সাথে একটি ইউএসবি ক্যবলের সাথে কানেক্ট করা হয়। যন্ত্রটির মধ্যেই একটি কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরন অংশ আছে। রক্তের প্রাথমিক সব তথ্যাবলি এর মধ্যেই বের হয়ে যায় তারপর সব ডেটা চলে যায় কম্পিউটারে। ঐখানে থাকা সফটওয়্যারটি রান করলেই কিছুক্ষনের মধ্যে খুটিনাটি সব তথ্যাদি কম্পিউটারের মনিটরে ভেসে উঠে।
আবদুল্লাহ্ আরেকবার নিজের রক্ত দিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে নিল। উল্লেখ্য, যন্ত্রটি মূলত কাজ করে ইনপুট ডিভাইস হিসেবে, এর নাম দেয়া হয়েছে এম.এ. মাল্টিফাংশনাল ব্লাড ডিভাইস। এম. এ. দিয়ে মূলত মেহেদী আবদুল্লাহ্ বোঝানো হয়েছে। এর মধ্যে যে প্রোগ্রামটি দেয়া আছে সেটিও মূলত আবদুল্লাহর তৈরী। যাই হোক সফটওয়্যারটি পেন ড্রাইভে নিয়ে যন্ত্রটি নিজের ব্যাগে ভরে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল ‘ও’। ভার্সিটিতে যেতে আধা ঘন্টা সময় লাগে। গ্যারাজ থেকে নিজের মটরসাইকেলটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল রাস্তায়। বাসা নিয়ে চিন্তা নেই। বাসায় চুরি করা কারো সাধ্যের বাহিরে। জানালা বা ভেন্টিলেটর ভেঙ্গে ঘরে ঢোকা এক কথায় অসম্ভব। বাড়ির প্রতিটি রুমে চালু আছে এ্যালার্ম। বাড়ির নীচে পাঁচজন দারোয়ান পাহাড়া দিচ্ছে। তাদের সাথে আছে তিনটি গ্রে-হাউন্ড। বাড়ির সদর দরজা একটিই। দরজায় লাগানো আছে সিকিউরিটি লক। বাহির থেকে কেউ ভেতরে ঢুকতে চাইলেই তাকে দুটি পরীক্ষা দিতে হবে। প্রথমটি হচ্ছে সিকিউরিটি কোড। বাড়ির প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা কোড। দরজায় নির্দিষ্ট সবুজ বাটনে চাপ দিলে একটি যান্ত্রিক কন্ঠ কোড জানতে চাইবে। কোড বলা হলে যদি ম্যাচ করে তাহলে আগন্তুককে দরজার পাশে থাকা দুটি ছোট গর্তে দু চোখ দিয়ে তাকাতে হবে। অর্থাৎ রেটিনা স্ক্যান হবে। রেটিনা স্ক্যান ম্যাচ হলে বাসার আভ্যন্তরের কলিং বেল বেজে উঠবে। ভেতর থেকে দরজা খুলতে হবে। উপরোক্ত পদ্ধতি দুটোর প্রথমটিতেই যদি কেউ অকৃতকার্য হয় তাহলে সাথে সাথে এ্যালার্ম বেজে উঠবে। এটা গেল বাসার সিকিউরিটি ব্যবস্থা।
ওর মটরসাইকেলও তিনধাপ সিকিউরিটির ব্যবস্থা আছে। প্রথমটি হল কোড, দ্বিতীয়টি ভয়েস আর তৃতীয়টি হল বৃদ্ধাঙ্গুলি ছাপ বা টিপসই। মটরসাইকেলের সামনের দিকে স্পিড ওয়াচের নীচে একটি ক্যালকুলেটরের মত যন্ত্র বসানো আছে। প্রথমে সেখানকার নির্দিষ্ট সবুজ বাটনটিতে চাপ দিয়ে নির্দিষ্ট কোড চাপতে হয় তারপর ভয়েস দিতে হবে অর্থাৎ আবদুল্লাহর কন্ঠে তার নিজের নাম বলতে হবে। এরপর টিপসই দিতে হবে। উপরোক্ত তিনটি পদ্ধতির প্রথমটিতেই অকৃতকার্য হলে আবদুল্লাহর মোবাইলে একটি এসওএস মেসেজ চলে আসবে আর মটরসাইকেলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক হয়ে যাবে। এই লক একমাত্র আবদুল্লাহই খুলতে পারবে তখন।
আবদুল্লাহ্ ভার্সিটিতে ঢুকেই প্রফেসর ড. জলিলের সাথে দেখা করে সফটওয়্যারটি ও যন্ত্রটি তাকে দিয়ে দিল এবং এর ব্যবহার দেখিয়ে দিল। এই যন্ত্রটির উপর একমাস ক্লিনিকাল টেস্ট চলবে তারপর অনুমোদন দেয়া হবে। অনুমোদন পেলে লারনার্স ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ওয়ার্ল্ড হেলথ অগেনাইজেশন আবদুল্লাহকে প্রায় এক লক্ষ ডলারের সম্মানী প্রদান করবে। তবে যন্ত্রটির সর্বস্বত্ব থাকবে আবদুল্লাহর নামেই।
দুপুর আড়াইটার দিকে টিফিন। আবদুল্লাহ্, জসিম, মাহাবুব, আরিফ ও পলাশ ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছে। প্রসঙ্গ বারমুডা ট্রায়াঙ্গল।
আসলেই কি এ ধরনের কিছু আছে বলে তোদের মনে হয়? আবদুল্লাহর জিজ্ঞাসা।
কেন থাকবে না, জসিম বলল।
জগতে এমন অনেক কিছু ঘটে যার বিজ্ঞানসম্মত কোন ব্যাখ্যা নেই, পলাশ বলল।
বুঝলাম, কিন্তু বিশাল বিশাল জাহাজ, বিমান যাত্রীসহ হাওয়া হয়ে যাচ্ছে, কোন চিন্হ না রেখেই এটাতো বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না, মাহাবুবের জবাব।
তোর বিশ্বাস অবিশ্বাস দিয়ে কিছু এসে যায় না। ব্যপারগুলোযে ঘটছে এটাই আসল কথা আর সত্য, আরিফের পাল্টা জবাব। এ দুটো ছেলে সারাক্ষন টম এন্ড জেরির মত একজন আরেকজনের পেছনে লেগেই থাকে।
দয়া করে তোরা থামবি, পলাশের অনুরোধ।
আচ্ছা, ঘটনাগুলো যে বা যার প্রভাবে ঘটছে তার দুটি কারন থাকতে পারে বলে বিশেষঞ্জরা মনে করেন, আবদুল্লাহ্ বলতে থাকল, প্রথমটি হচ্ছে ভিনগ্রহ কোন বুদ্ধিমান প্রানী এসব ঘটাচ্ছে আরেকটি হচ্ছে চুম্বকীয় প্রভাব। শেষোক্তটি আমার কাছে বেশ গ্রহনযোগ্য মনে হয়। চুম্বকীয় প্রভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো সম্ভব বিজ্ঞানীরা সেটা প্রমান করেছেন।
তুই ঠিকই বলেছিস, আমার কাছেও চুম্বকীয় প্রভাবকেই দায়ী মনে হয়, আরিফের জবাব, তাছাড়া ভীনগ্রহ প্রানীর ব্যপারে জোড়ালো কোন প্রমান পাওয়া যায় নি।
এই চুম্বকীয় প্রভাবটা কি মহাকর্ষ বলের প্রভাবে সৃষ্টি নাকি? জসিমের জিজ্ঞাসা।
হতে পারে, আমারতো মনে হয় মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ দুটোই দায়ী এর পেছনে, আবদুল্লাহর জবাব। ভার্সিটিতে আসার পরপরই প্রফেসর ড. সালাম স্যারের সাথে কথা বলেছি। স্যারের মতে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মত কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব। শুধু তাই না, উনি প্যারালেল ওয়ার্ল্ডের অস্তিত্বও বিশ্বাস করেন। উনি ভুত-প্রেত নিয়ে কার্ল সাগানের ব্যাখ্যাও বিশ্বাস করেন।
ভুত-প্রেত সম্পর্কে কার্ল সাগানের ব্যাখ্যাটা একটু শোনাতো, পলাশের প্রস্তাব।
কার্ল সাগানের মতে, আবদুল্লাহ্ বলতে আরম্ভ করল, আমরা হ্যালুসিনেশনের কারনে এ ধরনের ভুত-প্রেত জাতীয় কিছু দেখতে পারি, যা এক কথায় কল্পনা। এছাড়াও সুস্থ্য মস্তিষ্কে যদি এ রকম কিছু দেখি তাহলে সেটা সত্যিই দেখি।
তারমানে ভুত-প্রেত আছে? জসিমের জিজ্ঞাসা।
আরে সবটা শেষ করি আগে, আবদুল্লাহর জবাব।
হ্যা, হ্যা নে শেষ কর, মাহাবুব বলল।
ঐ জাতীয় যাই দেখি না কেন সেটা আসলে ভুত বা প্রেত নয়, আবদুল্লাহ্ বলতে থাকল, সেটা মানুষ এবং এগুলো ভবিষ্যৎ জেনারেশন থেকে এসেছে। মনে হয় একটু কঠিন করে ফেললাম। ভেঙ্গে বলছি। আজ থেকে এক হাজার বৎসর আগের কথা চিন্তা কর। এখনকার প্রযুক্তি আর তখনকার প্রযুক্তি কি এক রকম ছিল? না, ছিল না। এখনকার গাড়ি, বিমান, টি ভি, রেডিও, কম্পিউটারের কতা তখনকার মানুষের চিন্তাতেও আসে নি। ঘরে বসে আজ আমরা হাজার হাজার মাইল দূরের ঘটনাও লাইভ দেখতে পাচ্ছি। আগে যেখানে যেতে মাসের পর মাস সময় লাগত সেখানে এখন পৌছে যাচ্ছি কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে। এটা গেল বর্তমানের সাথে অতীতের তুলনা। এখন বর্তমানের সাথে ভবিষ্যতের তুলনা। আজ থেকে এক হাজার বৎসর পরের কথা চিন্তা কর। তখন যদি মানুষ আলোর গতিতে চলাচল করে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আমরা টাইম মেশিনের কথা চিন্তা করছি, হতে পারে তখন টাইম মেশিন হবে তাদের সাধারন যানবাহন। এখন যেহেতু বলা হয়, আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর প্রথম থেকে শেষ পযর্ন্ত সব কিছুই সৃষ্টি করে রেখেছেন, শুধু যত সময় যাবে ততই আবির্ভাব ঘটবে তাহলে ব্যপারটি কি রকম দাড়ায়? ভবিষ্যতের তারা যদি মনে করে যে, অতীতে গিয়ে দেখবে কে কি করছে, তাহলে কেমন হয়? হয়ত তখন এ ধরনের প্রযুক্তি বেরুবে যেটা টাইম মেশিনের মত। তো তারা বর্তমানে এল, সে বর্তমান মানুষদের দেখল, বর্তমানের মানুষেরা তাকে দেখে ভুত বা প্রেত মনে করল কারন তাদের আকৃতিতে এসেছে পরিবর্তন। তারা এল সত্যিই কিন্তু পৃথিবীর মানুষের কোন ক্ষতি করতে পারবে না বা পৃথিবীর মানুষরাও তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। যদি সেটা সম্ভব হতই, তাহলে অরাজকতা লেগে যেত, দেখা যেত পলাশ গিয়ে তার দাদার সাথে ঝগড়া লাগিয়ে দিয়েছে। মারামারি অবস্থা। হয়ত দূর্ঘটনাবসত খুনই করে ফেলত। তার ফলে তার বাবার জন্ম হত না, তার বাবার জন্ম না হলে সেও তো জন্মাত না। আর এ কারনেই আমরা তাদের দেখতে পাই সত্যি, কিন্তু কিছুই করতে পারি না বা তারাও পারে না। এটাই হচ্ছে কার্ল সাগানের ব্যাখ্যা।
কিরে পলাশ, তোর কি মনে হয়, তুই তো দাদাকে….হা: হা: হা: আরিফের টিটকারী।
আরে দূর, আমার দাদাকে নয় আমি তোর দাদাকে…হা: হা: হা: তাতে পৃথিবীতে তোর মত একজন ইবলিশের আগমন বন্ধ থাকত, পলাশের টিটকারোত্তর।
ব্যটা শোন, তুই যেই টাইম মেশিনে চড়ে আসতি সেটার সব নাটবল্টু খুলে আমি ডাস্টবিনে ফেলে দিতাম বুঝেছিস? আরিফের পুনরায় টিটকারী।
তোরা চুপ কর, আবদুল্লাহ্ বলল, আমি প্যারালেল ওয়ার্ল্ড সম্পর্কে বেশ আগ্রহী। প্যারালেল ওয়ার্ল্ড কখন পৃথিবীর কোন অঞ্চল দিয়ে যায় সেটা কেউই বলতে পারে না। আমার ওটার মধ্যে যাওয়ার খুব ইচ্ছে হচ্ছে, দেখা দরকার ব্যপারটা আসলে কি? হতে পারে সেখানকার প্রযুক্তি বর্তমানের পৃথিবীর প্রযুক্তি থেকেও কয়েক হাজার বৎসর এগিয়ে।
তোর কথাগুলো পাগলের প্রলাপের মত শোনাচ্ছে, জসিম বলতে লাগল, আরে ঐখানে যাওয়া কি এতই সহজ, আর সেখান থেকে কারো ফিরে আসারও তো কোন প্রমান নেই।
এমনও তো হতে পারে সেখান থেকে কেউ ফিরে আসতে চায় না, হয়ত অবস্থাটাই এমন যে, সেখানে যা ইচ্ছে তাই পাওয়া যায় বা করা যায়, সবকিছু একেবারে মনের ইচ্ছাধীন আবদুল্লাহর জবাব।
হ্যা সেটা হওয়াও অসম্ভব না, জসিম বলল।
চল টিফিন শেষ, মাহাবুব সবাইকে তাড়া লাগাল। ছেলেরা সবাই ক্লাসরুমে চলে এল।
রাতে বাসায় নিজের জড়ার টেবিলের সামনে আবদুল্লাহ্ বসে আছে। মাথায় একটাই চিন্তা, প্যারালেল ওয়ার্ল্ড। কিভাবে সেখানে যাওয়া সম্ভব? প্যারালেল ওয়ার্ল্ডে যাওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি ওকে গ্রাস করল। অনেক ভেবে চিন্তে কিছু তথ্য ও একত্র করতে সক্ষম হল।
১। প্যারালেল ওয়ার্ল্ডের জন্য ত্রিভুজ আকৃতির একটি পরিবেশ প্রয়োজন যা কৃত্রিম ট্রায়াঙ্গলের মত কাজ করবে।
২। সবুজাভ স্বচ্ছ কাচ বেষ্ঠিত হলে উত্তম। সবুজাভ হওয়ার কারন হচ্ছে সবুজ প্রকৃতির প্রধান উপাদান বৃক্ষের নিদর্শন।
নাহ্, এটা কোন যুক্তিই হল না, নিজের কাছেই উদ্ভট লাগছে, আবদুল্লাহ ভাবল।
৩। চুম্বকীয় প্রভাব।
৪। মস্তিষ্কের নিউরন থেকে কার্বন, অক্সিজেন প্রভৃতি দ্বারা প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি বাহিরে প্রেরন করা, যা চুম্বকীয় প্রভাবের সাথে মিশে এক ধরনের মিশ্র প্রভাব সৃষ্টি করবে।
ব্যাস এতটুকু করে চেষ্টা করা যেতে পারে। উপরের প্রথম ও দ্বিতীয়টি একই সাথে করা সম্ভব। কাচের তৈরী ত্রিভুজ আকৃতির একটি ঘর তৈরী করে তার মধ্যে কৃত্রিম গ্রীন হাউজ তৈরী করলেই সবুজাভ পরিবেশ সৃষ্টি হবে। চুম্বকীয় প্রভাবের ব্যবস্থা করবেন ড. সালাম স্যার। উনি লারনার্স ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান। আর চতুর্থটিও সম্ভব। আবদুল্লাহ্ মেডিটেশনে নিয়মিত।
কাল সকালে ভোরে উঠে প্রথম ও দ্বিতীয়টির ব্যবস্থা করে ফেলতে হবে ইনশাআল্লাহ, আবদুল্লাহ্ ভাবল। স্টাডি, নামাজ ও রাতের খাবার খেয়ে ও তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ল। ভোরে ফজর নামাজ পড়েই কম্পিউটারের সামনে বসে একটি গ্রীন হাউসের সর্বনিম্ন মাপ বের করল ‘ও’ ইন্টারনেট থেকে। এরপর ঐ মাপের চারভাগের একভাগ বের করে ‘ও’ কাচ কিনে আনাল। দারোয়ানদের একজনকে দিয়ে একজন রাজমিস্ত্রিকে ডেকে এনে মাপ বুঝিয়ে দিয়ে ত্রিভুজ আকৃতির একটি হাউজ তৈরী করাল। এবার গাছ সংগ্রহের পালা। ঘড়িতে তখন সকাল এগারোটা। গাছ আজ আর কেনা হবে না। ভার্সিটিতে ছুটল আবদুল্লাহ্।
ভার্সিটিতে এসেই প্রফেসর ড. সালাম স্যারের সাথে দেখা করল আবদুল্লাহ্। স্যার জানালেন চৌম্বকীয় প্রভাব সমৃদ্ধ যন্ত্র দুই দিনের মধ্যেই তৈরী করে দেয়া সম্ভব। সকল খরচ বহন করবে আবদুল্লাহ্।
পরের দুই দিন কাটল খুব ব্যস্ততায়। বিভিন্ন রকম গাছ গাছালি এনে কৃত্রিম ট্রায়াঙ্গলকে তৈরী করল গ্রীন হাউজে। তৃতীয় দিনের মাথায় চুম্বকীয় প্রভাব সম্বলিত তিনটি দন্ত এনে ট্রায়াঙ্গলের তিন কোনায় বসিয়ে দেয়া হল। দন্ড তিনটিই চুম্বকের তৈরী। তার উপর তামার তার দিয়ে কয়েলের মত পেচানো। সমস্ত দন্তটি আগাগোড়া ফেল্ট দিয়ে মোড়া, যাতে বিদ্যুৎ বাহিরে পরিবাহিত হতে না পারে। প্রতিটি দন্ড একটির সাথে অন্যটি আবরনী তার দিয়ে যুক্ত। আবদুল্লাহ্ সব আয়োজন করেছে তাদের বাড়ির পেছনে। দারোয়ানরা সবাই বেশ কৌতুহলী তবে আবদুল্লাহর কঠোর নিষেধ আছে বাড়ির পেছনে কেউই আসতে পারবে না টানা তিনদিন। দারোয়ান, ছোট বোন বা ভাবি কেউই না। ‘ও’ বলেছে কেউ এলেই ওর পরীক্ষার সমস্যা হবে। ভার্সিটি থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নিল আবদুল্লাহ্।
দিনটি শুক্রবার। রাতের খাবার খেয়ে এবং নামাজ আদায় করে চলে এল গ্রীন হাউজে। চুম্বকীয় দন্ডগুলোতে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়া হয়েছে। বাড়ীর পেছনের বৈদ্যুতিক বাতি থেকেই কিছু আলো এসে পড়েছে গ্রীন হা্উজে। একরকম আলো আধারীর মত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মেডিটেশনের জন্য উৎকৃষ্ট। আবদুল্লাহ্ পদ্মাশনে বসে পড়ল। এমনিতেই শরীর কেমন যেন ঝিরঝির করছে। মনে হয় চুম্বকীয় প্রভাবের ফল। কতক্ষন মেডেটেশনে ছিল বলতে পারবে না, হঠাৎই চোখে তীব্র আলোর উপস্থিতি অনুভব করল। তারপরেও চোখ খুলল না। হঠাৎ কাধ ধরে ঝাকুনি। এবার চোখ খুলতে হল। একটি প্ল্যাটফর্মে দাড়িয়ে আছে আবদুল্লাহ্। এক উজ্জল আলো চারদিকে। বর্তমানের এনার্জি ল্যাম্পগুলো থেকেও কয়েকশত গুন উজ্জল কিন্তু দৃষ্টি সয়ে যাচ্ছে। প্ল্যাটফর্মটা এয়ারপোর্টের ইমাগ্রেশন সেন্টারের মত। আশপাশের মানুষজন সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। পুরুষরা সবাই স্যুট পরিহিত আর মহিলারা বোরখায় আবৃত। ওকে যে ঝাকাচ্ছিল তারও স্যুট পরিহিত কিন্তু দুই কাধে ব্যাজ লাগানো। বোজা গেল উনি সামরিক দায়িত্ব পালনে রত।
জনাব আপনার নাম? শুদ্ধ বাংলায় জিজ্ঞেস করল লোকটি।
আবদুল্লাহ্, মেহেদী আল আবদুল্লাহ্, নিজের নাম বলল ‘ও’।
প্যারালেল ওয়ার্ল্ডে স্বাগতম। আপনি কোথায় যেতে চান? এখানে যে কেউ যেকোন সময় যেকোন স্থানে যেতে পারে, তার কোন ভাড়া বা কোন অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না একমাস পযর্ন্ত।
আবদুল্লাহ্ কিছুক্ষন ভাবল, সম্ভবত আমি এখন বাংলাদেশেই আছি, বর্তমানে সর্বাপেক্ষা উন্নত প্রযুক্তি হচ্ছে আমেরিকান প্রযুক্তি। তাই সেখানে যাওয়াই স্থির করল ‘ও’।
লোকটি নিজের নাম জানাল আবুল কাশেম। আবদুল্লাহকে প্রথমে একটি ওয়াশ রুমে ঢুকিয়ে দেয়া হল। সেকানে কয়েকটি রোবট বসে গল্প করছিল। দেখতে হুবহু মানুষের মত। সকলেই পুরুষের বেশে। একধরনের সুগন্ধিযুক্ত পানি দিয়ে তারা আবদুল্লাহকে গোসল করিয়ে স্যুট পড়িয়ে দিল। এরপর আরেকটি রুমে ঢুকিয়ে দেয়া হল। এখানেও কয়েকটি রোবট। ‘ও’কে একটি চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে কাচ দিয়ে ঘীরে দেয়া হল। সম্পূর্ন রুম অন্ধকার করে দিয়ে এক ধরনের লেজার রশ্মি ছড়িয়ে দেয়া হল গোটা রুমময়। এ অবস্থা মিনিট পাচেক স্থায়ী হল। এরপর ’ও’কে আবার মি. আবুল কাশেমের হাতে হস্তান্তর করা হল।
এসব কি হল? আবদুল্লাহর জিজ্ঞাসা।
প্রথম রুমে আপনার সম্পূর্ন দেহ জীবানুমুক্ত করে জীবানুমুক্ত পোষাক পড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয় রুমে লেজার রশ্মি দিয়ে আপনার দেহের সকল রোগ জীবানু ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আপনি এখন নিরোগ। প্যারালেল ওয়ার্ল্ড সব ধরনের ধুলোবালি ও রোগ জীবানু মুক্ত। মি. কাশেম আবদুল্লাহকে একটি যন্ত্রে বসিয়ে দিলেন। যেটি দেখতে অনেকটা মটর সাইকেলের মতই। বলা যায় একটি চেয়ারের সাথে মটর সাইকেলের সামনের অংশ জুড়ে দেয়া হয়েছে। কোন হ্যান্ডেল বা স্টীয়ারিং নেই। শুধু একিট স্ক্রীন দেয়া। যা দুটি অংশে বিভক্ত। একটি অংশে যানটির সকল তথ্যাদি দেখা যাচ্ছে, অন্য আরেকটি অংশে ম্যাপ। মি. কাশেম, আবদুল্লাহকে সব শিখিয়ে দিলেন।
আবদুল্লাহ স্ত্রিনের দিকে মুখ এনে বলল, ইউএসএ। সাথে সাথে আমেরিকার ম্যাপ চলে এল। এবার ও বলল ওয়াশিংটন ডিসি। বলতে বলতেই ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি ঝাকি খেল। ব্যাস সামনে থেকে সবকিছু উধাও। ‘ও’ নিজেকে অন্য আরেকটি প্ল্যাটফর্মে আবিষ্কার করল। সাদা চামড়ার একজন পুলিশ এসে ওকে বলল, ওয়েলকাম টু ওয়াশিংটন ডিসি। দিস ইজ প্ল্যাটফর্ম ওয়ান ও ওয়ান। আই এম এন্ড্রু হল। নাইস টু মিট ইউ মি. আবদুল্লাহ্।
আবদুল্লাহ্ যে যন্ত্রটিতে বসে আসে সেখানে একটি অংশ থেকে ভয়েস কনভার্টার এক্টিভ হওয়ার কমান্ড দিল। হোস্ট ল্যাংগুয়েজ বাংলা আর গেস্ট ল্যাংগুয়েজ ইংরেজী। অর্থাৎ ‘ও’ বাংলা বলবে অন্যরা শুনবে ইংরেজীতে। পুলিশ কর্মিটি জানাল আবদুল্লাহ্ ইচ্ছে করলে যেকোন স্থানে ঘুরে দেখতে পারে একমাস পযর্ন্ত। খেতে বা থাকতে হলে যেকোন হোটেলে ঢুকে পড়লেই হল। ওর স্যুটে সব নিয়ন্ত্রনের মাধ্যম দেয়া আছে। শুধু কমান্ড দিলেই হল। ওর বাহনটির কোড হচ্ছে ‘আবদুল্লাহ্ বিডি ওয়ান হানড্রেড সিক্সটিন। ওর কোথাও যেতে ইচ্ছে করলে এই কোডটি বললেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে যানটি ওর সামনে চলে আসবে। ভয়েস কনভার্টার স্যুটের মধ্যেই দেয়া আছে।
প্যারালেল ওয়ার্ল্ডে আবদুল্লাহর কাজ হচ্ছে আমেরিকার চিকিৎসা প্রযুক্তি দেখা প্রথমে। তারপর একে একে বাকীগুলো। তারপর পৃথিবীতে ফেরত আসা। এখানে থাকার কোনরূপ ইচ্ছেই নেই ওর। কেউ ফেরত না যাওয়ার কারনটি ও এখন বুঝতে পারছে। এখানে রোগ বলতে কোন শব্দই নেই। খাবার নিয়ে চিন্তা নেই। সবকিছু নিয়ন্ত্রন করে দেশের সরকার। সকলেই কোন না কোন গবেষনার কাজে জড়িত। আবদুল্লাহকে একমাস পর ওর পছন্দঅনুযায়ী এ রকম কোন একটি গবেষনাগারে ঢুকিয়ে দেয়া হবে। সরকার সবার মৌলিক অধিকারগুলো বিনামূল্যে সরবরাহ করে। এই পৃথিবীতে নেই ভুমিকম্প বা কোন ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগের প্রভাব। দিন রাত্রি এখানে সমান সমান। আবদুল্লাহ আমেরিকান একজনের সাথে কথা বলল। লোকটি জানাল যে, এই প্যারালেল ওয়ার্ল্ডে কেউ ত্রিশ মিনিটের বেশী অবস্থান করলেই আর ফেরত যেতে পারে না। ফেরত যাওয়ার যদি পদ্ধতি থেকেও থাকে সেক্ষেত্রে সেটা আর কাজ করবে না। আবদুল্লাহ্ ঘড়ি দেখল। ‘ও’ এখানে এসেছে প্রায় আঠার মিনিট। লোকটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে কমান্ড দিয়ে ওর বাহনটি এনে চলে এল সেই প্ল্যাটফর্মে। যেটা বাংলাদেশে অবস্থিত। ‘ও’ বুঝে গেছে সমগ্র পৃথিবীর এখন চিকিৎসা পদ্ধতি বলতে একমাত্র লেজার রশ্মি। অন্য প্রযুক্তিগুলো দেখা সম্ভব না। সময় নেই। এই লেজার রম্মির তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে এর মধ্যকার উপাদান গুলি কি কি। পুনরায় মি. কাশেমের সাথে দেখা করল আর জানাল লেজার রশ্মিটির কথা ও পৃথিবীতে ফেরত যাওয়ার কথা। পৃথিবী থেকে একজন এসে আবার ফেরত যেতে চাইছে, এটা শুনে তিনি যারপরনাই অবাক হলেন। পৃথিবীতে যেতে চাইলে অত কিছু করতে হয় না, শুধু নিজের পরিহিত স্যুটের লাল বাটনটি চাপ দিলেই হল। ত্রিশ মিনিট পর এই বাটনটি আর কাজ করবে না। আবদুল্লাহ্ ঘড়ি দেখল। হাতে এখনও পাচ মিনিট বাকী আছে। ’ও’ আবারও লেজার রশ্মি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। ভদ্রলোক জানালেন এ রশ্মিটি প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরী। তা যথার্থ বলতে পারবে যারা এর গবেষনার কাজে জড়িত। আসলে এই পৃথিবীর সব প্রযুক্তিই প্রাকৃতিকে গবেষনা করে বের করা। প্রকৃতিই সব।
আর মাত্র দুই মিনিট সময় বাকী আছে। শেষ প্রশ্নটি করল আবদুল্লাহ্। আচ্ছা স্যার, আমার শরীর পৃথিবীতে গিয়েও কি নিরোগ থাকবে?
মি. কাশেম জানালেন, পৃথিবীতে যাওয়ার পর পৃথিবীর রোগজীবানু দ্বারা ’ও’ আবার আক্রান্ত হবে। মি. কাশেমকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে আবদুল্লাহ্ লাল বাটনে চাপ দিল। আবারও ঝিমঝিমানি এবং চিরচেনা পরিবেশ। ‘ও’ বসে আছে সেই গ্রীন হাউজটিতেই। খুব বেশিতো আর সময় কাটেনি। বড়জোড় চল্লিশ কি পঞ্চাশ মিনিট। আসলেই কি ও প্যারালেল ওয়ার্ল্ডে গিয়েছিল নাকি সবটাই মেডিটেশনের ফল? কথা একটাই প্রকৃতিতেই রয়েছে সবকিছুর সমাধান। আবদুল্লাহ্ ওর রুমে চলে এল। ভাবল আর যাই হোক, ওর এই রিসার্চের কথা গোপন রাখতে হবে। তা না হলে পৃথিবীর সকলেই প্যারালেল ওয়ার্ল্ডে যেতে চাইবে। অফুরন্ত সুখশান্তি কে না চায়? ওহ্ ভুল হয়ে গেছে, মি. কাশেমকে জিজ্ঞেস করা হয়নি প্যারালেল ওয়ার্ল্ডে মৃত্যু আছে কিনা?
যাই হোক, কাল কলেজে যেতে হবে। এক সপ্তাহ ছুটি কাটানো হল না। আমিই বোধহয় প্রথম মানুষ যে প্যারালেল ওয়ার্ল্ডে গিয়েও ফিরে এলাম, ভাবতে ভাবতে বিছানায় পিঠ ঠেকাল আবদুল্লাহ্।
প্রিয় বন্ধুরা, এই বাংলা ব্লগ-এ আপনারা পড়ছেন সায়েন্স ফিকশন : প্যারালেল ওয়ার্ল্ড
ওহ্, ফযর নামাজ কাযা হয়ে গেল, দাঁত মাজতে মাজতে ভাবল আবদুল্লাহ্।
ওর পুরো নাম মেহেদী আল আবদুল্লাহ্। বয়স প্রায় তেইশ ছুই ছুই। লারনার্স ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। এমনিতেই বেশ ভালো ছাত্র ‘ও’। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেনীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই কম্পিউটার ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর শর্ট ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করে ফেলে আবদুল্লাহ্। জীবনের লক্ষ্য আছে দুটো। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও কম্পিউটার বিজ্ঞানের উপর উচ্চ শিক্ষা লাভ করা। এর ফলশ্রুতিতেই লারনার্স ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয় আবদুল্লাহ্।
দেখতে দেখতে দুটি বৎসর কেটে গেল। এখন তৃতীয় বর্ষে। ইতিমধ্যেই ওর বেশ কয়েকটি আবিষ্কার দেশের গন্ডি পেড়িয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বও দারুন প্রশংসিত হয়েছে। তন্মধ্যে কাঠালের মত বড় লিচু, ছাগলের মত বড় মুরগি, পুকুরে পালন উপযোগী ইলিশ মাছ, ধান ও গমের সংযক্ত সংকর, অক্সিজেন বৃক্ষ ইত্যাদি জনপ্রিয়।
আবদুল্লাহর বাবা জনাব আবু বকর সিদ্দিক সাহেব ব্যবসায়ী মানুষ। বৎসরের অনেকটা সময়ই তিনি কাটিয়ে দেন বিদেশে। বাসায় সঙ্গ বলতে মা, ছোট বোন আর ভাবী। বড় ভাইয়াও ব্যবসার কাজে বাবার সঙ্গে থাকেন। আজ ‘ও’ বাসায় একা। বাবা ও মা হজ্বব্রত পালন করতে গেছেন সৌদি আরবে। ভাইয়া আছেন চায়নাতে, ব্যবসার কাজে। ভাবী ছোট বোনটিকে সঙ্গে নিয়ে গেছেন তার বাবার বাড়ি। আগামী কাল চলে আসবেন। এমনিতেই ভোরে উঠে ফজর নামাজ আদায় করা ওর দৈনন্দিন কাজের মধ্যে একটি। আজ যে কি হল? ভাবতে ভাবতে ফ্রিজের কাছে চলে এল আবদুল্লাহ্। ফ্রিজে খাবার সব কিছুই রেডি করা আছে। শুধু বের করে মাইক্রোয়েভ ওভেন একটু গরম করে নিলেই হল। দুপুর বারোটায় আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে।
কাযা ফজর নামাজ আদায় করে রুটি আর ভাজা গরুর মাংস দিয়ে নাস্তা সাড়ল আবদুল্লাহ্। নিজের পড়ার টেবিলে যখন বসল তখন ঘড়িতে বাজে পৌনে এগারোটা। মাথাটা ঝিমঝিম করছে আর শরীরের ম্যাজম্যাজানি তো আছেই। নতুন কিছু নয়, বিলম্ব করে ঘুম থেকে উঠার শাস্তি এটা।
হঠাৎ মনে হল, আজ প্রফেসর ড. জলিল স্যারের নিকট ওর নিজের তৈরী একটি সফটওয়্যার জমা দেয়ার কথা। সফটওয়্যারটি অনেকগুলো কাজ প্রায় একসঙ্গে সম্পন্ন করে ফলাফল প্রদর্শন করে। এটি এক ফোটা রক্ত থেকে গ্রুপিং, আরএইচ ফ্যাক্টর, কম্প্লিট ব্লাড কাউন্ট, ক্রস ম্যাচিং, রক্তে ত্রুটি, জিন বিন্যাস, জিন ত্রুটি ইত্যাদি বের করতে পারে। এমনকি জিন ম্যাচিংও করতে পারে এটি। গত রাতে দশটা নাগাদ সব কাজ শেষ করে রেখেছিল, এখন আরেকবার চেক দিলে ভালো হয়, ভাবল আবদুল্লাহ্। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটির জন্য প্রয়োজন একটি কম্পিউটার ও একটি যন্ত্রের। যন্ত্রটি দেখতে অধুনা ব্লাড গ্লুকোজ মাপার যন্ত্রের মতই। যার দুটি প্রকোষ্ঠ থাকে। একটি প্রকোষ্ঠে একজনের রক্তের ফোটা সংয়ুক্ত স্লাইড ও অন্য আরেকটিতে জিন ম্যাচিংয়ের জন্য আরেকজনের রক্তের ফোটা সংযুক্ত স্লাইড প্রবেশ করানো হয়। তারপর এটি কম্পিউটারের সাথে একটি ইউএসবি ক্যবলের সাথে কানেক্ট করা হয়। যন্ত্রটির মধ্যেই একটি কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরন অংশ আছে। রক্তের প্রাথমিক সব তথ্যাবলি এর মধ্যেই বের হয়ে যায় তারপর সব ডেটা চলে যায় কম্পিউটারে। ঐখানে থাকা সফটওয়্যারটি রান করলেই কিছুক্ষনের মধ্যে খুটিনাটি সব তথ্যাদি কম্পিউটারের মনিটরে ভেসে উঠে।
আবদুল্লাহ্ আরেকবার নিজের রক্ত দিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে নিল। উল্লেখ্য, যন্ত্রটি মূলত কাজ করে ইনপুট ডিভাইস হিসেবে, এর নাম দেয়া হয়েছে এম.এ. মাল্টিফাংশনাল ব্লাড ডিভাইস। এম. এ. দিয়ে মূলত মেহেদী আবদুল্লাহ্ বোঝানো হয়েছে। এর মধ্যে যে প্রোগ্রামটি দেয়া আছে সেটিও মূলত আবদুল্লাহর তৈরী। যাই হোক সফটওয়্যারটি পেন ড্রাইভে নিয়ে যন্ত্রটি নিজের ব্যাগে ভরে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এল ‘ও’। ভার্সিটিতে যেতে আধা ঘন্টা সময় লাগে। গ্যারাজ থেকে নিজের মটরসাইকেলটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল রাস্তায়। বাসা নিয়ে চিন্তা নেই। বাসায় চুরি করা কারো সাধ্যের বাহিরে। জানালা বা ভেন্টিলেটর ভেঙ্গে ঘরে ঢোকা এক কথায় অসম্ভব। বাড়ির প্রতিটি রুমে চালু আছে এ্যালার্ম। বাড়ির নীচে পাঁচজন দারোয়ান পাহাড়া দিচ্ছে। তাদের সাথে আছে তিনটি গ্রে-হাউন্ড। বাড়ির সদর দরজা একটিই। দরজায় লাগানো আছে সিকিউরিটি লক। বাহির থেকে কেউ ভেতরে ঢুকতে চাইলেই তাকে দুটি পরীক্ষা দিতে হবে। প্রথমটি হচ্ছে সিকিউরিটি কোড। বাড়ির প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা কোড। দরজায় নির্দিষ্ট সবুজ বাটনে চাপ দিলে একটি যান্ত্রিক কন্ঠ কোড জানতে চাইবে। কোড বলা হলে যদি ম্যাচ করে তাহলে আগন্তুককে দরজার পাশে থাকা দুটি ছোট গর্তে দু চোখ দিয়ে তাকাতে হবে। অর্থাৎ রেটিনা স্ক্যান হবে। রেটিনা স্ক্যান ম্যাচ হলে বাসার আভ্যন্তরের কলিং বেল বেজে উঠবে। ভেতর থেকে দরজা খুলতে হবে। উপরোক্ত পদ্ধতি দুটোর প্রথমটিতেই যদি কেউ অকৃতকার্য হয় তাহলে সাথে সাথে এ্যালার্ম বেজে উঠবে। এটা গেল বাসার সিকিউরিটি ব্যবস্থা।
ওর মটরসাইকেলও তিনধাপ সিকিউরিটির ব্যবস্থা আছে। প্রথমটি হল কোড, দ্বিতীয়টি ভয়েস আর তৃতীয়টি হল বৃদ্ধাঙ্গুলি ছাপ বা টিপসই। মটরসাইকেলের সামনের দিকে স্পিড ওয়াচের নীচে একটি ক্যালকুলেটরের মত যন্ত্র বসানো আছে। প্রথমে সেখানকার নির্দিষ্ট সবুজ বাটনটিতে চাপ দিয়ে নির্দিষ্ট কোড চাপতে হয় তারপর ভয়েস দিতে হবে অর্থাৎ আবদুল্লাহর কন্ঠে তার নিজের নাম বলতে হবে। এরপর টিপসই দিতে হবে। উপরোক্ত তিনটি পদ্ধতির প্রথমটিতেই অকৃতকার্য হলে আবদুল্লাহর মোবাইলে একটি এসওএস মেসেজ চলে আসবে আর মটরসাইকেলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে লক হয়ে যাবে। এই লক একমাত্র আবদুল্লাহই খুলতে পারবে তখন।
আবদুল্লাহ্ ভার্সিটিতে ঢুকেই প্রফেসর ড. জলিলের সাথে দেখা করে সফটওয়্যারটি ও যন্ত্রটি তাকে দিয়ে দিল এবং এর ব্যবহার দেখিয়ে দিল। এই যন্ত্রটির উপর একমাস ক্লিনিকাল টেস্ট চলবে তারপর অনুমোদন দেয়া হবে। অনুমোদন পেলে লারনার্স ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ওয়ার্ল্ড হেলথ অগেনাইজেশন আবদুল্লাহকে প্রায় এক লক্ষ ডলারের সম্মানী প্রদান করবে। তবে যন্ত্রটির সর্বস্বত্ব থাকবে আবদুল্লাহর নামেই।
দুপুর আড়াইটার দিকে টিফিন। আবদুল্লাহ্, জসিম, মাহাবুব, আরিফ ও পলাশ ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছে। প্রসঙ্গ বারমুডা ট্রায়াঙ্গল।
আসলেই কি এ ধরনের কিছু আছে বলে তোদের মনে হয়? আবদুল্লাহর জিজ্ঞাসা।
কেন থাকবে না, জসিম বলল।
জগতে এমন অনেক কিছু ঘটে যার বিজ্ঞানসম্মত কোন ব্যাখ্যা নেই, পলাশ বলল।
বুঝলাম, কিন্তু বিশাল বিশাল জাহাজ, বিমান যাত্রীসহ হাওয়া হয়ে যাচ্ছে, কোন চিন্হ না রেখেই এটাতো বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না, মাহাবুবের জবাব।
তোর বিশ্বাস অবিশ্বাস দিয়ে কিছু এসে যায় না। ব্যপারগুলোযে ঘটছে এটাই আসল কথা আর সত্য, আরিফের পাল্টা জবাব। এ দুটো ছেলে সারাক্ষন টম এন্ড জেরির মত একজন আরেকজনের পেছনে লেগেই থাকে।
দয়া করে তোরা থামবি, পলাশের অনুরোধ।
আচ্ছা, ঘটনাগুলো যে বা যার প্রভাবে ঘটছে তার দুটি কারন থাকতে পারে বলে বিশেষঞ্জরা মনে করেন, আবদুল্লাহ্ বলতে থাকল, প্রথমটি হচ্ছে ভিনগ্রহ কোন বুদ্ধিমান প্রানী এসব ঘটাচ্ছে আরেকটি হচ্ছে চুম্বকীয় প্রভাব। শেষোক্তটি আমার কাছে বেশ গ্রহনযোগ্য মনে হয়। চুম্বকীয় প্রভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটানো সম্ভব বিজ্ঞানীরা সেটা প্রমান করেছেন।
তুই ঠিকই বলেছিস, আমার কাছেও চুম্বকীয় প্রভাবকেই দায়ী মনে হয়, আরিফের জবাব, তাছাড়া ভীনগ্রহ প্রানীর ব্যপারে জোড়ালো কোন প্রমান পাওয়া যায় নি।
এই চুম্বকীয় প্রভাবটা কি মহাকর্ষ বলের প্রভাবে সৃষ্টি নাকি? জসিমের জিজ্ঞাসা।
হতে পারে, আমারতো মনে হয় মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ দুটোই দায়ী এর পেছনে, আবদুল্লাহর জবাব। ভার্সিটিতে আসার পরপরই প্রফেসর ড. সালাম স্যারের সাথে কথা বলেছি। স্যারের মতে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মত কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব। শুধু তাই না, উনি প্যারালেল ওয়ার্ল্ডের অস্তিত্বও বিশ্বাস করেন। উনি ভুত-প্রেত নিয়ে কার্ল সাগানের ব্যাখ্যাও বিশ্বাস করেন।
ভুত-প্রেত সম্পর্কে কার্ল সাগানের ব্যাখ্যাটা একটু শোনাতো, পলাশের প্রস্তাব।
কার্ল সাগানের মতে, আবদুল্লাহ্ বলতে আরম্ভ করল, আমরা হ্যালুসিনেশনের কারনে এ ধরনের ভুত-প্রেত জাতীয় কিছু দেখতে পারি, যা এক কথায় কল্পনা। এছাড়াও সুস্থ্য মস্তিষ্কে যদি এ রকম কিছু দেখি তাহলে সেটা সত্যিই দেখি।
তারমানে ভুত-প্রেত আছে? জসিমের জিজ্ঞাসা।
আরে সবটা শেষ করি আগে, আবদুল্লাহর জবাব।
হ্যা, হ্যা নে শেষ কর, মাহাবুব বলল।
ঐ জাতীয় যাই দেখি না কেন সেটা আসলে ভুত বা প্রেত নয়, আবদুল্লাহ্ বলতে থাকল, সেটা মানুষ এবং এগুলো ভবিষ্যৎ জেনারেশন থেকে এসেছে। মনে হয় একটু কঠিন করে ফেললাম। ভেঙ্গে বলছি। আজ থেকে এক হাজার বৎসর আগের কথা চিন্তা কর। এখনকার প্রযুক্তি আর তখনকার প্রযুক্তি কি এক রকম ছিল? না, ছিল না। এখনকার গাড়ি, বিমান, টি ভি, রেডিও, কম্পিউটারের কতা তখনকার মানুষের চিন্তাতেও আসে নি। ঘরে বসে আজ আমরা হাজার হাজার মাইল দূরের ঘটনাও লাইভ দেখতে পাচ্ছি। আগে যেখানে যেতে মাসের পর মাস সময় লাগত সেখানে এখন পৌছে যাচ্ছি কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে। এটা গেল বর্তমানের সাথে অতীতের তুলনা। এখন বর্তমানের সাথে ভবিষ্যতের তুলনা। আজ থেকে এক হাজার বৎসর পরের কথা চিন্তা কর। তখন যদি মানুষ আলোর গতিতে চলাচল করে তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আমরা টাইম মেশিনের কথা চিন্তা করছি, হতে পারে তখন টাইম মেশিন হবে তাদের সাধারন যানবাহন। এখন যেহেতু বলা হয়, আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর প্রথম থেকে শেষ পযর্ন্ত সব কিছুই সৃষ্টি করে রেখেছেন, শুধু যত সময় যাবে ততই আবির্ভাব ঘটবে তাহলে ব্যপারটি কি রকম দাড়ায়? ভবিষ্যতের তারা যদি মনে করে যে, অতীতে গিয়ে দেখবে কে কি করছে, তাহলে কেমন হয়? হয়ত তখন এ ধরনের প্রযুক্তি বেরুবে যেটা টাইম মেশিনের মত। তো তারা বর্তমানে এল, সে বর্তমান মানুষদের দেখল, বর্তমানের মানুষেরা তাকে দেখে ভুত বা প্রেত মনে করল কারন তাদের আকৃতিতে এসেছে পরিবর্তন। তারা এল সত্যিই কিন্তু পৃথিবীর মানুষের কোন ক্ষতি করতে পারবে না বা পৃথিবীর মানুষরাও তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। যদি সেটা সম্ভব হতই, তাহলে অরাজকতা লেগে যেত, দেখা যেত পলাশ গিয়ে তার দাদার সাথে ঝগড়া লাগিয়ে দিয়েছে। মারামারি অবস্থা। হয়ত দূর্ঘটনাবসত খুনই করে ফেলত। তার ফলে তার বাবার জন্ম হত না, তার বাবার জন্ম না হলে সেও তো জন্মাত না। আর এ কারনেই আমরা তাদের দেখতে পাই সত্যি, কিন্তু কিছুই করতে পারি না বা তারাও পারে না। এটাই হচ্ছে কার্ল সাগানের ব্যাখ্যা।
কিরে পলাশ, তোর কি মনে হয়, তুই তো দাদাকে….হা: হা: হা: আরিফের টিটকারী।
আরে দূর, আমার দাদাকে নয় আমি তোর দাদাকে…হা: হা: হা: তাতে পৃথিবীতে তোর মত একজন ইবলিশের আগমন বন্ধ থাকত, পলাশের টিটকারোত্তর।
ব্যটা শোন, তুই যেই টাইম মেশিনে চড়ে আসতি সেটার সব নাটবল্টু খুলে আমি ডাস্টবিনে ফেলে দিতাম বুঝেছিস? আরিফের পুনরায় টিটকারী।
তোরা চুপ কর, আবদুল্লাহ্ বলল, আমি প্যারালেল ওয়ার্ল্ড সম্পর্কে বেশ আগ্রহী। প্যারালেল ওয়ার্ল্ড কখন পৃথিবীর কোন অঞ্চল দিয়ে যায় সেটা কেউই বলতে পারে না। আমার ওটার মধ্যে যাওয়ার খুব ইচ্ছে হচ্ছে, দেখা দরকার ব্যপারটা আসলে কি? হতে পারে সেখানকার প্রযুক্তি বর্তমানের পৃথিবীর প্রযুক্তি থেকেও কয়েক হাজার বৎসর এগিয়ে।
তোর কথাগুলো পাগলের প্রলাপের মত শোনাচ্ছে, জসিম বলতে লাগল, আরে ঐখানে যাওয়া কি এতই সহজ, আর সেখান থেকে কারো ফিরে আসারও তো কোন প্রমান নেই।
এমনও তো হতে পারে সেখান থেকে কেউ ফিরে আসতে চায় না, হয়ত অবস্থাটাই এমন যে, সেখানে যা ইচ্ছে তাই পাওয়া যায় বা করা যায়, সবকিছু একেবারে মনের ইচ্ছাধীন আবদুল্লাহর জবাব।
হ্যা সেটা হওয়াও অসম্ভব না, জসিম বলল।
চল টিফিন শেষ, মাহাবুব সবাইকে তাড়া লাগাল। ছেলেরা সবাই ক্লাসরুমে চলে এল।
রাতে বাসায় নিজের জড়ার টেবিলের সামনে আবদুল্লাহ্ বসে আছে। মাথায় একটাই চিন্তা, প্যারালেল ওয়ার্ল্ড। কিভাবে সেখানে যাওয়া সম্ভব? প্যারালেল ওয়ার্ল্ডে যাওয়ার প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি ওকে গ্রাস করল। অনেক ভেবে চিন্তে কিছু তথ্য ও একত্র করতে সক্ষম হল।
১। প্যারালেল ওয়ার্ল্ডের জন্য ত্রিভুজ আকৃতির একটি পরিবেশ প্রয়োজন যা কৃত্রিম ট্রায়াঙ্গলের মত কাজ করবে।
২। সবুজাভ স্বচ্ছ কাচ বেষ্ঠিত হলে উত্তম। সবুজাভ হওয়ার কারন হচ্ছে সবুজ প্রকৃতির প্রধান উপাদান বৃক্ষের নিদর্শন।
নাহ্, এটা কোন যুক্তিই হল না, নিজের কাছেই উদ্ভট লাগছে, আবদুল্লাহ ভাবল।
৩। চুম্বকীয় প্রভাব।
৪। মস্তিষ্কের নিউরন থেকে কার্বন, অক্সিজেন প্রভৃতি দ্বারা প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি বাহিরে প্রেরন করা, যা চুম্বকীয় প্রভাবের সাথে মিশে এক ধরনের মিশ্র প্রভাব সৃষ্টি করবে।
ব্যাস এতটুকু করে চেষ্টা করা যেতে পারে। উপরের প্রথম ও দ্বিতীয়টি একই সাথে করা সম্ভব। কাচের তৈরী ত্রিভুজ আকৃতির একটি ঘর তৈরী করে তার মধ্যে কৃত্রিম গ্রীন হাউজ তৈরী করলেই সবুজাভ পরিবেশ সৃষ্টি হবে। চুম্বকীয় প্রভাবের ব্যবস্থা করবেন ড. সালাম স্যার। উনি লারনার্স ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান। আর চতুর্থটিও সম্ভব। আবদুল্লাহ্ মেডিটেশনে নিয়মিত।
কাল সকালে ভোরে উঠে প্রথম ও দ্বিতীয়টির ব্যবস্থা করে ফেলতে হবে ইনশাআল্লাহ, আবদুল্লাহ্ ভাবল। স্টাডি, নামাজ ও রাতের খাবার খেয়ে ও তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ল। ভোরে ফজর নামাজ পড়েই কম্পিউটারের সামনে বসে একটি গ্রীন হাউসের সর্বনিম্ন মাপ বের করল ‘ও’ ইন্টারনেট থেকে। এরপর ঐ মাপের চারভাগের একভাগ বের করে ‘ও’ কাচ কিনে আনাল। দারোয়ানদের একজনকে দিয়ে একজন রাজমিস্ত্রিকে ডেকে এনে মাপ বুঝিয়ে দিয়ে ত্রিভুজ আকৃতির একটি হাউজ তৈরী করাল। এবার গাছ সংগ্রহের পালা। ঘড়িতে তখন সকাল এগারোটা। গাছ আজ আর কেনা হবে না। ভার্সিটিতে ছুটল আবদুল্লাহ্।
ভার্সিটিতে এসেই প্রফেসর ড. সালাম স্যারের সাথে দেখা করল আবদুল্লাহ্। স্যার জানালেন চৌম্বকীয় প্রভাব সমৃদ্ধ যন্ত্র দুই দিনের মধ্যেই তৈরী করে দেয়া সম্ভব। সকল খরচ বহন করবে আবদুল্লাহ্।
পরের দুই দিন কাটল খুব ব্যস্ততায়। বিভিন্ন রকম গাছ গাছালি এনে কৃত্রিম ট্রায়াঙ্গলকে তৈরী করল গ্রীন হাউজে। তৃতীয় দিনের মাথায় চুম্বকীয় প্রভাব সম্বলিত তিনটি দন্ত এনে ট্রায়াঙ্গলের তিন কোনায় বসিয়ে দেয়া হল। দন্ড তিনটিই চুম্বকের তৈরী। তার উপর তামার তার দিয়ে কয়েলের মত পেচানো। সমস্ত দন্তটি আগাগোড়া ফেল্ট দিয়ে মোড়া, যাতে বিদ্যুৎ বাহিরে পরিবাহিত হতে না পারে। প্রতিটি দন্ড একটির সাথে অন্যটি আবরনী তার দিয়ে যুক্ত। আবদুল্লাহ্ সব আয়োজন করেছে তাদের বাড়ির পেছনে। দারোয়ানরা সবাই বেশ কৌতুহলী তবে আবদুল্লাহর কঠোর নিষেধ আছে বাড়ির পেছনে কেউই আসতে পারবে না টানা তিনদিন। দারোয়ান, ছোট বোন বা ভাবি কেউই না। ‘ও’ বলেছে কেউ এলেই ওর পরীক্ষার সমস্যা হবে। ভার্সিটি থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নিল আবদুল্লাহ্।
দিনটি শুক্রবার। রাতের খাবার খেয়ে এবং নামাজ আদায় করে চলে এল গ্রীন হাউজে। চুম্বকীয় দন্ডগুলোতে বৈদ্যুতিক সংযোগ দেয়া হয়েছে। বাড়ীর পেছনের বৈদ্যুতিক বাতি থেকেই কিছু আলো এসে পড়েছে গ্রীন হা্উজে। একরকম আলো আধারীর মত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মেডিটেশনের জন্য উৎকৃষ্ট। আবদুল্লাহ্ পদ্মাশনে বসে পড়ল। এমনিতেই শরীর কেমন যেন ঝিরঝির করছে। মনে হয় চুম্বকীয় প্রভাবের ফল। কতক্ষন মেডেটেশনে ছিল বলতে পারবে না, হঠাৎই চোখে তীব্র আলোর উপস্থিতি অনুভব করল। তারপরেও চোখ খুলল না। হঠাৎ কাধ ধরে ঝাকুনি। এবার চোখ খুলতে হল। একটি প্ল্যাটফর্মে দাড়িয়ে আছে আবদুল্লাহ্। এক উজ্জল আলো চারদিকে। বর্তমানের এনার্জি ল্যাম্পগুলো থেকেও কয়েকশত গুন উজ্জল কিন্তু দৃষ্টি সয়ে যাচ্ছে। প্ল্যাটফর্মটা এয়ারপোর্টের ইমাগ্রেশন সেন্টারের মত। আশপাশের মানুষজন সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত। পুরুষরা সবাই স্যুট পরিহিত আর মহিলারা বোরখায় আবৃত। ওকে যে ঝাকাচ্ছিল তারও স্যুট পরিহিত কিন্তু দুই কাধে ব্যাজ লাগানো। বোজা গেল উনি সামরিক দায়িত্ব পালনে রত।
জনাব আপনার নাম? শুদ্ধ বাংলায় জিজ্ঞেস করল লোকটি।
আবদুল্লাহ্, মেহেদী আল আবদুল্লাহ্, নিজের নাম বলল ‘ও’।
প্যারালেল ওয়ার্ল্ডে স্বাগতম। আপনি কোথায় যেতে চান? এখানে যে কেউ যেকোন সময় যেকোন স্থানে যেতে পারে, তার কোন ভাড়া বা কোন অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না একমাস পযর্ন্ত।
আবদুল্লাহ্ কিছুক্ষন ভাবল, সম্ভবত আমি এখন বাংলাদেশেই আছি, বর্তমানে সর্বাপেক্ষা উন্নত প্রযুক্তি হচ্ছে আমেরিকান প্রযুক্তি। তাই সেখানে যাওয়াই স্থির করল ‘ও’।
লোকটি নিজের নাম জানাল আবুল কাশেম। আবদুল্লাহকে প্রথমে একটি ওয়াশ রুমে ঢুকিয়ে দেয়া হল। সেকানে কয়েকটি রোবট বসে গল্প করছিল। দেখতে হুবহু মানুষের মত। সকলেই পুরুষের বেশে। একধরনের সুগন্ধিযুক্ত পানি দিয়ে তারা আবদুল্লাহকে গোসল করিয়ে স্যুট পড়িয়ে দিল। এরপর আরেকটি রুমে ঢুকিয়ে দেয়া হল। এখানেও কয়েকটি রোবট। ‘ও’কে একটি চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে কাচ দিয়ে ঘীরে দেয়া হল। সম্পূর্ন রুম অন্ধকার করে দিয়ে এক ধরনের লেজার রশ্মি ছড়িয়ে দেয়া হল গোটা রুমময়। এ অবস্থা মিনিট পাচেক স্থায়ী হল। এরপর ’ও’কে আবার মি. আবুল কাশেমের হাতে হস্তান্তর করা হল।
এসব কি হল? আবদুল্লাহর জিজ্ঞাসা।
প্রথম রুমে আপনার সম্পূর্ন দেহ জীবানুমুক্ত করে জীবানুমুক্ত পোষাক পড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয় রুমে লেজার রশ্মি দিয়ে আপনার দেহের সকল রোগ জীবানু ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আপনি এখন নিরোগ। প্যারালেল ওয়ার্ল্ড সব ধরনের ধুলোবালি ও রোগ জীবানু মুক্ত। মি. কাশেম আবদুল্লাহকে একটি যন্ত্রে বসিয়ে দিলেন। যেটি দেখতে অনেকটা মটর সাইকেলের মতই। বলা যায় একটি চেয়ারের সাথে মটর সাইকেলের সামনের অংশ জুড়ে দেয়া হয়েছে। কোন হ্যান্ডেল বা স্টীয়ারিং নেই। শুধু একিট স্ক্রীন দেয়া। যা দুটি অংশে বিভক্ত। একটি অংশে যানটির সকল তথ্যাদি দেখা যাচ্ছে, অন্য আরেকটি অংশে ম্যাপ। মি. কাশেম, আবদুল্লাহকে সব শিখিয়ে দিলেন।
আবদুল্লাহ স্ত্রিনের দিকে মুখ এনে বলল, ইউএসএ। সাথে সাথে আমেরিকার ম্যাপ চলে এল। এবার ও বলল ওয়াশিংটন ডিসি। বলতে বলতেই ও কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটি ঝাকি খেল। ব্যাস সামনে থেকে সবকিছু উধাও। ‘ও’ নিজেকে অন্য আরেকটি প্ল্যাটফর্মে আবিষ্কার করল। সাদা চামড়ার একজন পুলিশ এসে ওকে বলল, ওয়েলকাম টু ওয়াশিংটন ডিসি। দিস ইজ প্ল্যাটফর্ম ওয়ান ও ওয়ান। আই এম এন্ড্রু হল। নাইস টু মিট ইউ মি. আবদুল্লাহ্।
আবদুল্লাহ্ যে যন্ত্রটিতে বসে আসে সেখানে একটি অংশ থেকে ভয়েস কনভার্টার এক্টিভ হওয়ার কমান্ড দিল। হোস্ট ল্যাংগুয়েজ বাংলা আর গেস্ট ল্যাংগুয়েজ ইংরেজী। অর্থাৎ ‘ও’ বাংলা বলবে অন্যরা শুনবে ইংরেজীতে। পুলিশ কর্মিটি জানাল আবদুল্লাহ্ ইচ্ছে করলে যেকোন স্থানে ঘুরে দেখতে পারে একমাস পযর্ন্ত। খেতে বা থাকতে হলে যেকোন হোটেলে ঢুকে পড়লেই হল। ওর স্যুটে সব নিয়ন্ত্রনের মাধ্যম দেয়া আছে। শুধু কমান্ড দিলেই হল। ওর বাহনটির কোড হচ্ছে ‘আবদুল্লাহ্ বিডি ওয়ান হানড্রেড সিক্সটিন। ওর কোথাও যেতে ইচ্ছে করলে এই কোডটি বললেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে যানটি ওর সামনে চলে আসবে। ভয়েস কনভার্টার স্যুটের মধ্যেই দেয়া আছে।
প্যারালেল ওয়ার্ল্ডে আবদুল্লাহর কাজ হচ্ছে আমেরিকার চিকিৎসা প্রযুক্তি দেখা প্রথমে। তারপর একে একে বাকীগুলো। তারপর পৃথিবীতে ফেরত আসা। এখানে থাকার কোনরূপ ইচ্ছেই নেই ওর। কেউ ফেরত না যাওয়ার কারনটি ও এখন বুঝতে পারছে। এখানে রোগ বলতে কোন শব্দই নেই। খাবার নিয়ে চিন্তা নেই। সবকিছু নিয়ন্ত্রন করে দেশের সরকার। সকলেই কোন না কোন গবেষনার কাজে জড়িত। আবদুল্লাহকে একমাস পর ওর পছন্দঅনুযায়ী এ রকম কোন একটি গবেষনাগারে ঢুকিয়ে দেয়া হবে। সরকার সবার মৌলিক অধিকারগুলো বিনামূল্যে সরবরাহ করে। এই পৃথিবীতে নেই ভুমিকম্প বা কোন ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগের প্রভাব। দিন রাত্রি এখানে সমান সমান। আবদুল্লাহ আমেরিকান একজনের সাথে কথা বলল। লোকটি জানাল যে, এই প্যারালেল ওয়ার্ল্ডে কেউ ত্রিশ মিনিটের বেশী অবস্থান করলেই আর ফেরত যেতে পারে না। ফেরত যাওয়ার যদি পদ্ধতি থেকেও থাকে সেক্ষেত্রে সেটা আর কাজ করবে না। আবদুল্লাহ্ ঘড়ি দেখল। ‘ও’ এখানে এসেছে প্রায় আঠার মিনিট। লোকটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে কমান্ড দিয়ে ওর বাহনটি এনে চলে এল সেই প্ল্যাটফর্মে। যেটা বাংলাদেশে অবস্থিত। ‘ও’ বুঝে গেছে সমগ্র পৃথিবীর এখন চিকিৎসা পদ্ধতি বলতে একমাত্র লেজার রশ্মি। অন্য প্রযুক্তিগুলো দেখা সম্ভব না। সময় নেই। এই লেজার রম্মির তরঙ্গ বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে এর মধ্যকার উপাদান গুলি কি কি। পুনরায় মি. কাশেমের সাথে দেখা করল আর জানাল লেজার রশ্মিটির কথা ও পৃথিবীতে ফেরত যাওয়ার কথা। পৃথিবী থেকে একজন এসে আবার ফেরত যেতে চাইছে, এটা শুনে তিনি যারপরনাই অবাক হলেন। পৃথিবীতে যেতে চাইলে অত কিছু করতে হয় না, শুধু নিজের পরিহিত স্যুটের লাল বাটনটি চাপ দিলেই হল। ত্রিশ মিনিট পর এই বাটনটি আর কাজ করবে না। আবদুল্লাহ্ ঘড়ি দেখল। হাতে এখনও পাচ মিনিট বাকী আছে। ’ও’ আবারও লেজার রশ্মি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল। ভদ্রলোক জানালেন এ রশ্মিটি প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরী। তা যথার্থ বলতে পারবে যারা এর গবেষনার কাজে জড়িত। আসলে এই পৃথিবীর সব প্রযুক্তিই প্রাকৃতিকে গবেষনা করে বের করা। প্রকৃতিই সব।
আর মাত্র দুই মিনিট সময় বাকী আছে। শেষ প্রশ্নটি করল আবদুল্লাহ্। আচ্ছা স্যার, আমার শরীর পৃথিবীতে গিয়েও কি নিরোগ থাকবে?
মি. কাশেম জানালেন, পৃথিবীতে যাওয়ার পর পৃথিবীর রোগজীবানু দ্বারা ’ও’ আবার আক্রান্ত হবে। মি. কাশেমকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে আবদুল্লাহ্ লাল বাটনে চাপ দিল। আবারও ঝিমঝিমানি এবং চিরচেনা পরিবেশ। ‘ও’ বসে আছে সেই গ্রীন হাউজটিতেই। খুব বেশিতো আর সময় কাটেনি। বড়জোড় চল্লিশ কি পঞ্চাশ মিনিট। আসলেই কি ও প্যারালেল ওয়ার্ল্ডে গিয়েছিল নাকি সবটাই মেডিটেশনের ফল? কথা একটাই প্রকৃতিতেই রয়েছে সবকিছুর সমাধান। আবদুল্লাহ্ ওর রুমে চলে এল। ভাবল আর যাই হোক, ওর এই রিসার্চের কথা গোপন রাখতে হবে। তা না হলে পৃথিবীর সকলেই প্যারালেল ওয়ার্ল্ডে যেতে চাইবে। অফুরন্ত সুখশান্তি কে না চায়? ওহ্ ভুল হয়ে গেছে, মি. কাশেমকে জিজ্ঞেস করা হয়নি প্যারালেল ওয়ার্ল্ডে মৃত্যু আছে কিনা?
যাই হোক, কাল কলেজে যেতে হবে। এক সপ্তাহ ছুটি কাটানো হল না। আমিই বোধহয় প্রথম মানুষ যে প্যারালেল ওয়ার্ল্ডে গিয়েও ফিরে এলাম, ভাবতে ভাবতে বিছানায় পিঠ ঠেকাল আবদুল্লাহ্।
প্রিয় বন্ধুরা, এই বাংলা ব্লগ-এ আপনারা পড়ছেন সায়েন্স ফিকশন : প্যারালেল ওয়ার্ল্ড