.....


আজ সকাল থেকেই আবদুল্লাহকে কেমন যেন মনমরা মনে হল। ব্যপারটা কি জিজ্ঞেস করেও জানা গেল না। নিজের মনে বিড়বিড় করে কি যেন বলছে আর বারবার ভ্রু কোচকাচ্ছে। তিনমাসের জন্য ও মিরপুরের ৭ নম্বরে মেস ভাড়া করেছে। ওর পাশের রুমেই আমি থাকি। আমার নাম কামরুল। কামরুল হাসান, পেশা-ছাত্র। মিরপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে পড়ছি অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে ইংলিশে। আবদুল্লাহর সাথে পরিচয় এই মেসেই। আমি এই মেসে আছি গত ছয়মাস যাবত আর ও এসেছে মাত্র দশ দিন। ঢাকায় ওদের নিজেদের বাড়ি আছে, তারপরেও এই বস্তিটাইপ মেসে এসেছে থাকার জন্য, এর কারন জিজ্ঞেস করতেই সহাস্যে উত্তর এল, গবেষণা করতে। আমি মনে করেছিলাম ও যেহেতু লারনার্স ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ছে তাহলে হয়ত এই বিষয়েই কোন গবেষনা হবে। তারপরেও জিজ্ঞেস করলাম।

কি গবেষণা? -উত্তর এল পরাবাস্তব জগৎ নিয়ে গবেষণা। বাড়িতে এসব করতে নিষেধ করায় মেসে এসে উঠেছি।

ওর রুমে আজব আজব জিনিসে ভরা। প্রানীর হাড় (অজানা), বড় শামুকের খোল, রঙ-বেরঙের মোমবাতি, নানান ধরনের পাথর, দাবার বোর্ডের মত মস্ত বড় বোর্ড, বিভিন্ন ধরনের পাখির পালক, ব্যারোমিটার, থার্মোমিটার, নিক্তি, বিশেষভাবে সংরক্ষিত জীবন্ত পিপড়ে, বোতল ভর্তি জোঁকসহ আরো অনেক নাম না জানা বস্তু। এসব দেখে গবেষনার ধরন ঠিক বোঝা গেল না।

আবদুল্লাহ্ অধিকাংশ সময়ই রুমের ভেতর থাকে। বের হয় খুব কম। প্রয়োজন ছাড়া একটি কথাও বলে না। আজ হঠাৎ করেই মনমরা লাগছে ওকে। সারাদিন এই অবস্থা চলল। অবশ্য রুম থেকে যতবার বের হয়েছে ততবারই মনমরাই দেখেছি। রাত ঠিক সাড়ে বারোটার পর ও অপ্রত্যাশিতভাবে আমার রুমে এল। এর আগে কখনই আমার রুমে ও আসেনি।

এতরাতে এসে ডির্স্টাব করলাম না তো? আবদুল্লাহর প্রশ্ন, চেহারা থেকে মনমরা ভাব উধাও। তার স্থলে স্থান নিয়ে মুচকি হাসি।

আরে না,না। এমনিতেই আমার ঘুমাতে ঘুমাতে দেড়টা-দুটো বাজে। তা কি খবর? আমি বললাম।

ভালো খবর, আজ রাত দুটো নাগাদ বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চল বিশেষ কের সুন্দরবন নিশ্চিন্হ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। বিজ্ঞানীদের এরকমই ভাষ্য ছিল। সেটি আর ঘটবে না। বঙ্গোপসাগরে যে ঘূর্নিঝড়টির আবির্ভার ঘটেছে সেটি হঠাৎ করে মহাসাগরের মাঝে এসে রাত একটার দিকে থেমে যাবে। খবরটি পেলাম এই মাত্র। তাই তোমাকে জানাতে এলাম।

ও আচ্ছা, তোমার সারাদিনের মনমরা অবস্থার এই তাহলে কারন? তা খবরে বলেছে নাকি?

আরে নাহ, খবরের লোকজন জানবে কোথা থেকে। এখনও তো একটা-ই বাজে নি। ঘূর্নিঝড় থামবে একটা-য়। তারপরেতো তারা খবর পাবে।

তাহলে তুমি ভবিষ্যৎবানী করলে কিভাবে? -আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

অলৌকিকতায় বিশ্বাস কর তুমি? -আবদুল্লাহর জিজ্ঞাসা।

আমি উত্তর দেয়ার আগেই ও বলল, অলৌকিকতা, প্রকৃতির সন্তানদের আচরনসহ আরো কিছু একসাথে অবজারভেশন করে এই সিদ্বান্তে পৌছতে হয়েছে আমাকে। এই বলে ও নিজের রুমে চলে গেল।

পাঠক রাত একটায় কিন্তু সত্যিই ঘূর্নিঝড়টি থেমে গিয়েছিল। বিজ্ঞানীরা ঘূর্নিঝড়ের এমন আচরনে বেশ অবাক হয়েছেন। উপকূলবাসীদের উল্লাসের দিনটি মনে রাখার মত ছিল।

Leave a Reply

Subscribe to Posts | Subscribe to Comments

ই-মেইল সাবস্ক্রিপশন

Enter your email address:

Delivered by FeedBurner

ক্যাটাগরীসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Protected by Copyscape

ব্লগটি মোট পড়া হয়েছে

বাঙলা ব্লগ. Powered by Blogger.

- Copyright © মেহেদী হাসান-এর বাঙলা ব্লগ | আমার স্বাধীনতা -Metrominimalist- Powered by Blogger - Designed by Mahedi Hasan -