.....


আসসালামু আলাইকুম।

সবাই কেমন আছেন? টেকনোলজি ব্লগে ব্যবসা সম্পর্কিত টিউনে এতটা সাড়া পাওয়া যাবে আমি ভাবিনি! বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ঘুনে ধরা অর্থনীতির হাল ধরার মত যোগ্য মানুষ এখনও রয়েছে। যাই হোক ব্যবসা সম্পর্কিত আমার পূবের চারটি পোষ্ট ছিল –


বিস্তারিত লিখা সত্ত্বেও অনেকে মেইল করেছেন এই লিখে যে, তারা ব্যাপারটি বুঝতে পারছেন না। তাদের কাছে বিষয়টি জলবৎ তরলং করার জন্যই আজকের এই প্রয়াস।

ধাপ : ১
স্টকলট কি তা নিশ্চয়ই আপনারা বুঝে গেছেন। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার হচ্ছে বায়ারের অর্ডারকৃত পণ্য কোন কারনে বায়ার না নিলে তখনই সেটা স্টকে পরিনত হয়। ভালো বায়াররা সাধারনত পণ্য স্টক হতে দেয় না। ডিসকাউন্ট দিয়ে হলেও পণ্য তারা ইমপোর্ট করে নিয়ে যায়। তাহলে বোঝা যাচ্ছে সব সময়ই যে স্টক পাওয়া যাবে, এটা আশা করা যায় না। আর স্টক হলেই যে সেটা আপনি পাবেন, সেটা ভাবারও কোন কারন নেই। প্রচুর লোক বর্তমানে স্টকলট ব্যবসার সাথে জড়িত। তাদের অনেকেরই নিজস্ব বায়ার রয়েছে। তারা স্টক কিনেই এক্সপোর্ট করে দেয়। তাহলে এখন উপায়? আপনারা নিশ্চয়ই প্রশ্ন করবেন, “আরে ভাই, ব্যবসার আশা জাগিয়ে এখন এগুলো কি বলছেন?” আসলে কোন ব্যবসা আরম্ভ করার আগে সেটার প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে জেনে নিতে হয়। আপনারা জানলেন স্টক সবসময় পাওয়া যায় না, তারমানে “বারো মাসি” ব্যবসা নয়। কিন্তু আমরা চাচ্ছি বারো মাস ব্যবসা করতে, সেটা কিভাবে সম্ভব বা আদৌ সম্ভব কিনা?

আমার কথা, হ্যা সম্ভব।
কিন্তু কিভাবে?
বলছি। মন দিয়ে শুনুন। সবচেয়ে ভালো হয় মনে গেঁথে নিন।

ধাপ – ২
যতই প্রতিবন্ধকতা থাকুক আমি ধরে নিচ্ছি আপনি ব্যবসা করতে চাচ্ছেন। কোন ব্যবসা শুরু করার পূর্বে সঠিক পরিকল্পনা করলে সেই ব্যবসার প্রায় ৮০% কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়। কয়েকজন মিলে ব্যবসা আরম্ভ করুন। কয়েকজন কেন বলছি? নতুনরা এতে উপকৃত হবেন বেশি। একেক জনের মাথায় একেক রকম বুদ্ধি। আপনি একা হলে একই সময় বিভিন্ন জায়গায় যেতে পারবেন না। তাছাড়া প্রাথমিক বিনিয়োগের একটি ব্যাপার রয়েছে। কয়েকজন বলতে বন্ধু-বান্ধব হতে পারে আবার আত্মীয়-স্বজনও হতে পারে। সম্পূর্ণ ব্যাপারটি নিয়ে নিজেরা আলোচনা করুন। আপনাদের নিজ নিজ অঞ্চলের (থানা, জেলা) চাহিদা বুঝুন। হ্যা, ঠিকই ধরেছেন, আমি প্রথমে লোকাল ব্যবসার কথাই বলছি যেহেতু আমরা বারো মাস ব্যবসা করতে চাচ্ছি। লোকালের পরই আন্তর্জাতিক পেয়ে যাবেন।

ধাপ - ৩
নিজেরা বা অন্যকে দিয়ে কিছু কাপড়ের (টি-শার্ট, পোলো শার্ট, বেসিক শার্ট, পাইলট শার্ট ইত্যাদি) ডিজাইন করান। ইন্টারনেট সার্চ করে লেটেস্ট কিছু ডিজাইন বের করুন, হতে পারে কোন বিখ্যাত ব্যক্তির উক্তি, ছবি, দৃশ্য, বিশেষ দিবসের কোন ছবি বা বার্তা ইত্যাদি। এবার ছবিগুলো টি-শার্টের মধ্যে বসিয়ে পাঠিয়ে দিন এমন কারো কাছে যারা পোষাক তৈরী করে। তারা আপনাকে এর খরচ জানাবে। এখন আপনি বেশ কয়েকটি কালার ও স্টাইলের স্যাম্পল বানিয়ে নিন।

ধাপ - ৪
তো আমাদের হাতে স্যাম্পল আছে। এখন বায়ার পাব কোথায়? ভালো প্রশ্ন। বায়ারকে আপনি দুইটি শ্রেনীতে ভাগ করতে পারেন।

১. স্থানীয় বায়ার ও
২. বিদেশী বায়ার।

স্থানীয় বায়ার আবার দুই প্রকার।
১. আপনি শো-রুম দিয়ে কাপড় বিক্রি করলে ও
২. আশপাশের কাপড়ের দোকান, শো-রুম ও অন্যান্য দোকানে কাপড় বিক্রি করলে।

আপনি আপনার স্যাম্পলগুলো নিয়ে নিজ এলাকা, থানা, জেলার বড় বড় মার্কেটগুলোতে ঘুরে আসুন। আনুমানিক লিস্ট করুন কোন দোকানদার কত পিস পোষাক প্রতি মাসে আপনার কাছ থেকে নিতে পারবে। সে অনুযায়ী আপনি অর্ডার দিন।

বিদেশী বায়ারকে দুই ভাগে ভাগ করতে পারি।
১। বিদেশে থাকা আপনার আত্মীয়-স্বজন ও
২। প্রকৃত বিদেশী বায়ার।

এবার আপনি আপনার কাছে থাকা স্যাম্পলগুলোর ছবি বা স্যাম্পলগুলোই (১ পিস করে) কুরিয়ার সার্ভিসে পাঠিয়ে দিন আপনার বিদেশে থাকা আত্মীয়ের কাছে। এর পূর্বে ওনার সাথে সামগ্রিক ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা সেরে নিতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে সাধারনত শর্ট কোয়ান্টিটির পোষাক রপ্তানী করা লাগে। সেক্ষেত্রে তাদের চাহিদা অনুযায়ী আপনি ১০০০-৫০০০ পিস অর্ডার দিতে পারেন।

এবার হচ্ছে প্রকৃত বিদেশী বায়ার খোঁজার কাজ। এই কাজটি খুব একটা কঠিন নয়। প্রথমেই রেজিষ্ট্রেশন করুন www.alibaba.com ও www.linkedin.com এই দুটি সাইটে। সাইট দুটি বায়ার ও সেলারদের স্বর্গক্ষেত্র বলা যেতে পারে। আপনি alibaba-র Buying Leads সেকশনে অসংখ্য স্টক বায়ার খুঁজে পাবেন। আর linkedin এর বিভিন্ন গ্রুপে যোগ দিন। নিজেই দেখবেন বায়াররা এসব গ্রুপে নিজেদের চাহিদার কথা আলোচনা করছে। আপনি এভাবে বায়ার খুঁজে নিয়ে তাদেরকে আপনার স্যাম্পলগুলোর ছবি, মেজারমেন্টসহ যাবতীয় বিস্তারিত তথ্য মূল্যসহ (অবশ্যই ডলারে) মেইল করুন। এভাবে আপনি হয়ত খুব ভালো ভালো নিয়মিত বায়ারও পেয়ে যেতে পারেন।

ধাপ - ৫
আপনার স্যাম্পলগুলোর মেজারমেন্ট বা মাপ কি হবে? আপনি যদি দেশের মার্কেট বা এশিয়ার কোন দেশে পোষাক পাঠাতে চান সেক্ষেত্রে সেগুলোর মাপ হবে ‘এশিয়ান’। আমেরিকার গুলো হবে ‘ইউএসএ মেজারমেন্টে’। বাদবাকীগুলো হবে ‘ইউরোপ মেজারমেন্টে’। আপনি চাহিদা অনুযায়ী সবসময় স্যাম্পল তৈরী রাখুন। মনে রাখবেন স্যাম্পল তৈরী কোন খরচের মধ্যে পরে না বরং এটা ইনভেস্ট বা বিনিয়োগ।

এভাবে আপনি বেশ কয়েকধাপে ব্যবসা করতে পারেন। দেশের মার্কেটে এবং বিদেশে। আপনারা ৫ জন বন্ধু মিলে ব্যবসা শুরু করলে দেখা যাবে ১০ জন বা ততোধিক আত্মীয় বা পরিচিত পেয়ে যাবেন যারা বিদেশে থাকে। এদের মধ্যে অন্তত চারজন হলেও আগ্রহ দেখাবে। তন্মধ্যে দুইজনও যদি আপনাদের কাছ থেকে পোষাক নেয় তাহলেই হবে। দেশীয় মার্কেট আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে এবং বিদেশী বায়ারদেরকে শর্ট কোয়ান্টিটির পণ্য দিতে দিতে দেখবেন যে ১২ মাসই আপনি ব্যবসা করছেন। আজ এ পর্যন্তই। সবাই ভালো থাকবেন।

Leave a Reply

Subscribe to Posts | Subscribe to Comments

ই-মেইল সাবস্ক্রিপশন

Enter your email address:

Delivered by FeedBurner

ক্যাটাগরীসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Protected by Copyscape

ব্লগটি মোট পড়া হয়েছে

বাঙলা ব্লগ. Powered by Blogger.

- Copyright © মেহেদী হাসান-এর বাঙলা ব্লগ | আমার স্বাধীনতা -Metrominimalist- Powered by Blogger - Designed by Mahedi Hasan -