.....


রানা প্লাজা ধসের পর দেশের পণ্য রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ভালো রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রপ্তানি পরিস্থিতির সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান।

প্রশ্ন: নানা আশঙ্কা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ শতাংশের বেশি। তবে নির্বাচন ঘিরে বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে রপ্তানির এই ধারা কি বজায় থাকবে?
সেলিম রায়হান: রপ্তানির এই ধারা বজায় থাকবে কি না, তা সুনির্দিষ্টভাবে এখনই বলা খুব কঠিন। তবে এটা এখন প্রমাণিত যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সংঘাত-সহিংসতার মধ্যেও বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তারা এগিয়ে যেতে সক্ষম। তাঁরা এসব প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও কীভাবে উৎপাদন চালিয়ে যেতে ও রপ্তানি অব্যাহত রাখতে হয়, তা জানেন। সুতরাং, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা রপ্তানিতে খুব বড় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। বিশ্ববাজারে মন্দাভাব থাকলে বরং নেতিবাচক প্রভাবটা বেশি পড়ে। বাইরে চাহিদা কমে গেলে বাজার সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

প্রশ্ন: বর্তমানে বিশ্ববাজারের পরিস্থিতিটা কী রকম?
সেলিম রায়হান: বিশ্ববাজার এখন চাঙা হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকের চাহিদা কিছুটা উর্ধ্বমুখী। আর বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের বেশির ভাগই তো তৈরি পোশাকনির্ভর। সুতরাং বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ভালো প্রবৃদ্ধি যখন ঘটে, তখন তা হয় প্রধানত পোশাক খাতের কারণে।

প্রশ্ন: আশঙ্কা ছিল রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের পোশাক খাত বিরাট বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। রপ্তানির এই তথ্য কী তাহলে এটাই দেখায়, যা বাংলাদেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা কাটিয়ে উঠেছে?
সেলিম রায়হান: বিষয়টি এভাবে দেখা ঠিক নয়। এই ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে এখন আমরা যেভাবে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছি, যেভাবে বলা হচ্ছে যে আমরা বিপযর্য় কাটিয়ে উঠছি, তাতে করে বরং মনে হচ্ছে যে রানা প্লাজা ধস ও এক হাজারের বেশি শ্রমিকের প্রাণহানি তেমন বড় ঘটনা নয়। কেননা, রপ্তানি তো বাড়ছেই। এই দৃষ্টিভঙ্গি মোটেও ঠিক নয়। বাংলাদেশের পোশাক খাত প্রকৃত বিচারে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বাইরের দেশগুলোর ভোক্তারা এখন বাংলাদেশে প্রস্তুত করা পোশাক নিয়ে অনেক বেশি সংবেদনশীল। অনেক বড় বড় বিপণিবিতান তো কিছুদিন বাংলাদেশি পোশাক তাক থেকে সরিয়েই ফেলেছিল। কাজেই রানা প্লাজার বিষয়টি বিস্মৃত হওয়ার কোনোই সুযোগ নেই। বরং এখন বাংলাদেশের পোশাকশিল্পকে টেকসই উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করা প্রয়োজন।

প্রশ্ন: তাহলে কি বলতে চাচ্ছেন যে এত বছরেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প যথেষ্ট টেকসই পর্যায়ে উন্নীত হতে পারেনি?
সেলিম রায়হান: অনেকটা তাই। আমাদের পোশাকশিল্পের বিকাশ বহুলাংশে অপরিকল্পিত। এখানে মান নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি রয়েছে। অনেক শিল্প মালিকই শ্রমিকদের বঞ্চনার অনুভূতির প্রতি মনোযোগী নন। বরং অতি মুনাফার প্রবণতা তাঁদের একটা স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গেছে। মুনাফা হচ্ছে দেখে অনেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এখানে বিনিয়োগ করতে। কিন্তু তাঁরা সুপরিকল্পিতভাবে কারখানা নির্মাণের চিন্তা করেননি। ভাড়া বাড়িতে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে গড়ে উঠেছে শত শত কারখানা। বড় সমস্যা হলো, পোশাকশিল্পকে নিবিড়ভাবে তদারক করার কোনো দায়িত্বপূর্ণ সংস্থা নেই। এখানে সুশাসনের প্রচণ্ড অভাব রয়েছে। রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব। এই জায়গায় উন্নতি না হলে ভবিষ্যতে পোশাকশিল্প বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে।


প্রশ্ন: শ্রমিকদের জীবনমান ও ন্যায্য মজুরি উপেক্ষা করার অভিযোগও আছে। এটা থেকে উত্তরণের উপায় কী?
সেলিম রায়হান: শ্রমিকদের জীবনমান ও ন্যায্য মজুরি উপেক্ষা করে যে বেশি দিন চলা সম্ভব নয়, তা তো বারবারই দেখা যাচ্ছে। এই যে এখন প্রায়ই শ্রমিকেরা নানা দাবিতে রাজপথে নেমে আসছেন, সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন, এটা কিন্তু পোশাকশিল্পের অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনারই ফল। সরকারকে তাই শ্রমিকদের বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগী হতে হবে। মালিকদেরও ইতিবাচকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে বাইরের দুনিয়ায় বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ভাবমূর্তি বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ভাবমূর্তি নষ্ট হলে গোটা শিল্প কখনোই টেকসই পর্যায়ে দাঁড়াতে পারবে না, নাজুকতা থেকে যাবে।

প্রশ্ন: সরকার ও মালিকদের পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতাদেরও তো কিছু দায়িত্ব রয়েছে।
সেলিম রায়হান: ক্রেতারাও ধোয়া তুলসীপাতা নন। শ্রমিকদের একটু ভালো মজুরি দেওয়া, কারখানার পরিবেশ উন্নত করা এসব কাজে যে বাড়তি অর্থ প্রয়োজন, তার জন্য ক্রেতারাও কেউ বাড়তি ব্যয় বহন করতে চান না। অথচ তাঁরা সস্তায় বাংলাদেশ থেকে পোশাক নিয়ে ভালো ব্যবসা করে আসছেন বছরের পর বছর। কাজেই তাঁদের ওপরও চাপ তৈরি প্রয়োজন। আসলে সরকার-মালিক-ক্রেতা মিলে ত্রিপক্ষীয় কাজ করলে তা পোশাক খাতের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

তথ্যসূত্র : ওয়েবসাইট থেকে।

Leave a Reply

Subscribe to Posts | Subscribe to Comments

ই-মেইল সাবস্ক্রিপশন

Enter your email address:

Delivered by FeedBurner

ক্যাটাগরীসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Protected by Copyscape

ব্লগটি মোট পড়া হয়েছে

বাঙলা ব্লগ. Powered by Blogger.

- Copyright © মেহেদী হাসান-এর বাঙলা ব্লগ | আমার স্বাধীনতা -Metrominimalist- Powered by Blogger - Designed by Mahedi Hasan -