.....
- Back to Home »
- আমার লেখা , স্বরচিত গল্প »
- বাজারে একদিন (স্বরচিত গল্প)
রাস্তার পাশেই ডাস্টবিন। বক্কর সাহেব পকেট থেকে রুমাল বের করে নাকে চাপা দিলেন। এ মুহূর্তে তার মাথায় একটি বরের পাগড়ি পরিয়ে দিলে যে কেউ তাকে বর ভেবে ভুল করতে পারে। যাক এমনটি হয়নি। কারন আশেপাশের অনেকেই নাকে রুমাল অর্থাত বক্কর সাহেবের পদাঙ্ক অনুসরন করেছে। কিছুদূর অগ্রসর হয়েই চেখে পড়ল চিরচেনা আরেকটি জিনিস। ম্যানহোল সেটি। যার ঢাকনা কবে নাগাদ নিখোজ হয়েছে তা কেউ স্বরন করতে পারে না। বক্কর সাহেব অতি সাবধানে সেটির পাশ কাটালেন। এইতো আর দশ কদম পরেই বাজার। বক্কর সাহেব তার প্যান্টের নিচের বাড়তি অংশটুকু গুটালেন। কারন বাজারে ঢুকলেই মত্স ধোয়ার পানিতে সৃষ্ট কাদায় তার মহা মূল্যবান না হলেও মহা উপকারী ও বিশ্বস্ত প্যান্টটির বারোটা বাজার পর তেরোটায় যেতে তেমন বিলম্ব হবে না। ইতিমধ্যেই তার নাকে বাজারের উৎকৃষ্ট (নাকি নিকৃষ্ট !) পচা মাছের গন্ধ পৌছাতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে তৈরী পারফিউমগুলোর সাথে এ ব্যাপারটির বেশ অমিল খুজে পেয়েছেন বক্কর সাহেব। বাংলাদেশের পারফিউমগুলো শরীরে স্প্রে করার বিশ মিনিটের মধ্যে নিজেদের স্থায়িত্ব হারায়। তখন আশেপাশের লোকজন দূরে থাক নিজেই ঘ্রান নিতে ব্যর্থ হতে হয়। অথচ এই পচা মাছগুলোর গন্ধ প্রায় আধা মাইল দূর থেকেই নাসিকাগোচর হয়।
বক্কর সাহেব এখন এক মাছ ব্যবসায়ীর সামনে। লোকটি ডালায় এক ভাগ মাঝারী সাইজের পুটি মাছ নিয়ে বিক্রির প্রহর গুনছে। বক্কর সাহেব দাম জিজ্ঞেস করলে ওপাশ থেকে পঞ্চাশ টাকা প্রতিউত্তর পাওয়া গেল। হায়রে এ কয়টা অর্ধপচা মাছের দাম এত! বক্কর সাহেব ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বেশ আতংকিত হয়ে পরলেন। ইদানিং ইলিশের প্রাচুর্যে দেশ নাকি ভাসছে। দেখা যাক ইলিশের দাম কেমন। বক্কর সাহেব পুটিগুলোর দাম বিশ টাকা বলে চলে এলেন ইলিশের দোকানের সামনে। এক বিঘা একটি ইলিশের দাম জানা গেল ষাট টাকা। লোকটি বত্রিশ দাত (অবশ্য কমও হতে পারে) বের করে মাছের দাম বলায় বক্কর সাহেবের মত নিপাট ভদ্রলোকের মেজাজ সপ্তমে উঠল। তিনি নিজেকে সংযত করে বললেন, এতটুকু মাছের দাম ষাট ? ব্যবসায়ী আবার তার দন্তকতিপয় প্রদর্শন করে বলল, জি স্যার, হইব না, ইলিশ বইলা কথা।
বক্কর সাহেবের বাজেট চল্লিশ টাকা। তিনি যদি ষাট টাকার মাছ কিনেন তাহলে অন্য সকল তরকারী গুলো কিনতে তার সমস্যা হয়ে যাবে। অগত্য বক্কর সাহেব পয়ত্রিশ টাকা দিয়ে একভাগ টেংরা কিনলেন। এবার তিনি তরকারী বাজার গেলেন আরেকপ্রস্থ সংগ্রামের জন্য। আলু ১৭ টাকা, কচুর লতি ২০ টাকা.........বক্কর সাহেবের পকেটে সম্বল মাত্র ৬৫ টাকা। প্রায় আধা ঘন্টা ঘোরাঘুরির পর তিনি এককেজি আলু ,বেগুন, দু টাকার ধনে পাতা, পাঁচ টাকার মরিচ ও দুটো মাঝারি সাইজের কাঁচা পেঁপে নিয়ে বাড়ি এলেন। এ রকম প্রায় প্রত্যেক বক্কর সাহেবের জন্য বাজার করাই নয় বরং জীবনের চলার প্রতি পদে পদেই সংগ্রামে লিপ্ত হতে হয়। কতদিন চলবে তাদের সংগ্রাম কে জানে। এটাই গ্রামবাংলার চিরন্তন গল্প।
গল্পটি বেশ কয়েক বছর আগে লিখা, তাই বর্তমান বাজারের সাথে মাছ বা তরকারির মূল্যে পার্থক্য থাকাটাই বাঞ্চনীয়।