.....



লেখক: শাহনেওয়াজ খান সুমন-ঝিনাইদহ
২০ বছর আগের কথা, খালি হাতে এদেশে এসেছিলেন কৃষক আলা উদ্দিন। সাথে নিয়ে এসেছিলেন আধা কেজি ফুলের বীজ। উঠেছিলেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সেজিয়া গ্রামের আনসার আলীর বাড়িতে। সেখানে বেড়ারঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করেন। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে করেন ফুলের চাষ। গড়ে তোলেন নদিয়া নার্সারী।

তার এই ফুল চাষ আজ গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। সেজিয়া গ্রামের ৩ শত বিঘা ছাড়াও পাশ্ববর্তী গ্রাম গুলোর শত শত বিঘা জমিতে ফুলের চাষ হচ্ছে। নার্সারী থেকে চারা নিয়ে এলাকার অনেকে বাগান বানিয়েছেন। এভাবে পরিশ্রম করে কৃষক আলা উদ্দিনও আজ অর্ধকোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

কৃষি সাফল্য দেখতে সরেজমিনে সেজিয়া গ্রামে গেলে কথা হয় সফল কৃষক আলা উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, তার প্রকৃত বাড়ি ছিল ভারতের নদিয়া জেলায়। বাবা দাউদ আলী মন্ডলের আর্থিক অবস্থা খুব বেশী ভালো না হওয়ায় বেশী পড়ালেখা করতে পারেননি। অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা শেষে বেকার জীবন কাটাচ্ছিলেন। এরই মাঝে বাড়ির কাউকে কিছু না বলে আলাউদ্দিন বাংলাদেশে চলে আসেন। ১৯৯০ সালের দিকে তিনি যখন এদেশে আসেন তখন বাড়ি থেকে কিছুই আনেননি। খালি হাতে আসার সময় বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছিলেন কিছু ফুলের বীজ। যা দিয়ে তিনি অত্র এলাকায় ফুলের চাষ ছড়িয়ে দিয়েছেন।

আলা উদ্দিন জানান, এদেশে এসে তিনি প্রথমে সেজিয়া গ্রামের আনসার আলীর বাড়িতে ওঠেন। আনসার আলী তার বাড়ির পাশে একটু জায়গা দিয়েছিলেন ঘর বেঁধে থাকার জন্য। শর্ত ছিল তার ক্ষেতে কাজ করতে হবে। আলা উদ্দিন আনসার আলীর বাড়িতে কাজ করার পাশাপাশি নিজেও জমি বর্গা নিয়ে ফুল চাষ শুরু করেন। সে সময় ওই এলাকার কেউ ফুলের চাষ বুঝতো না। তিনি ফুল চাষ করবেন জেনে জমির মালিকরা প্রথম পর্যায়ে জমি বর্গা দিতে চাননি। তার অনুরোধে কয়েকজন এগিয়ে এলে শুরু হয় ফুল চাষ। আজ অত্র এলাকায় ফুল চাষ ছড়িয়ে পড়েছে।

কৃষক আলা উদ্দিন জানান, মাত্র চার বছর ফুলের চাষ করে তিনি বেশ কিছু পয়সা জমান। এরপর জায়গা কিনে সেখানে ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করেন। ছেড়ে দেন আনসার আলীর জায়গা। নিজের জমিতে বাড়ি বানাবার পর স্ত্রী ফাতেমা খাতুনকে নিয়ে আসেন। নিজের সংসার সাজানোর পাশাপাশি মাঠে চাষও বাড়াতে থাকেন কৃষক আলা উদ্দিন। কঠোর পরিশ্রম আর উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে আলা উদ্দিন ২০ বছরে সফলতা এনেছেন। ইতোমধ্যে সেজিয়া গ্রামে ২৫ শতক জমির উপর একতলা পাঁকা বাড়ি বানিয়েছেন। সাজানো গোছানো বাড়ির এক পাশে রয়েছে একটি পুকুর। চারিপাশে রয়েছে ফুল ও ফলের বাগান। মাঠে চাষযোগ্য আড়াই বিঘা জমি কিনেছেন। এছাড়া লিজ নিয়েছেন ২০ বিঘা জমি। যেখানে ফুল, ফলের গাছ ছাড়ার নানা চাষাবাদ রয়েছে। বর্তমানে তার ৬ বিঘা জমিতে ফুলের চাষ রয়েছে। আলা উদ্দিন জানান, ফুলের চাষ লাভজনক হলেও অনেকটা লটারীর মতো। এই চাষে কথনও লাভ আবার কখনও লোকসান হয়ে থাকে। বর্তমানে ভারত থেকে নানা জাতের ফুল আসায় এদেশের কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি এই ফুল চাষের তাৎক্ষনিক ক্ষতি মোকাবেলা করতে ফুলের পাশাপাশি অন্যান্য চাষাবাদ করেন বলে জানিয়েছেন।

সেজিয়া গ্রামের আলি আকবার জানান, আলা উদ্দিনের কারনে আজ তাদের এলাকায় ফুল চাষের বিস্তার ঘটেছে। এই ফুল চাষ করে অনেকে স্বাভলম্বি হয়েছে। তিনি নিজেও তিন বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করেছেন। আলী আকবার আরো জানান, পাশ্ববর্তী ভারতে এই ফুলের চাষ হয় বলে তারা শুনতেন। এরপর আলা উদ্দিন সেখান থেকে ফুল চাষের ধারনা নিয়ে এসে তাদের অঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়েছে। যা কৃষকের লাভবান করার পাশাপাশি দরিদ্র মহিলা ও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

কৃষক আলা উদ্দিন জানান, ২০০০ সালের বন্যায় তিনি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন। সে সময় তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষতিগ্রস্ততের সহযোগীতার আশ্বাস দেন। পরে ওই সহযোগীতার টাকা পেয়ে আবার সোজা হয়ে দাড়ান কৃষক আলা উদ্দিন। বর্তমানে তার ছেলে কামাল উদ্দিন বাবার ফার্ম দেখাশুনা করছেন। ছেলেকে বি.এ পর্যন্ত পড়ানোর পর ফার্মের দায়িত্ব দিয়েছেন। দুই মেয়ে ফেরদৌসী খুতান ও কুলসুম আক্তারকে বিয়ে হয়েছে। বর্তমানে তার নদিয়া নার্সারী ও নদিয়া সীড ফার্মে সব সময় ১৫/১৬ জন কাজ করছেন। তিনি দাবি করেন সহজ শর্তে কৃষি ঋন দিলে কৃষকরা চাষ কাজে আরো এগিয়ে যেতে পারবে। তিনি নিজেও অনেক ধর্ণা দিয়ে কৃষি ঋন পাননি বলে জানিয়েছেন।

তথ্যসূত্র: দি-এডিটর

Leave a Reply

Subscribe to Posts | Subscribe to Comments

ই-মেইল সাবস্ক্রিপশন

Enter your email address:

Delivered by FeedBurner

ক্যাটাগরীসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Protected by Copyscape

ব্লগটি মোট পড়া হয়েছে

বাঙলা ব্লগ. Powered by Blogger.

- Copyright © মেহেদী হাসান-এর বাঙলা ব্লগ | আমার স্বাধীনতা -Metrominimalist- Powered by Blogger - Designed by Mahedi Hasan -