.....



বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ সামাল দিতে ভার্টিক্যাল (লম্বালম্বী) চাষাবাদের দিকে ঝুকছে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব। তাই দেশের বিজ্ঞানীরা হরাইজন্টাল (সমান্তরাল) চাষাবাদের পাশাপাশি নতুন ওই চাষাবাদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে পরামর্শ দিচ্ছেন সরকারকে।   এক্ষেত্রে বাড়ির ছাদ উপযুক্ত স্থান। ইতিমধ্যেই গবেষকরা বাড়ির ছাদে সবজি চাষের বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবণ করলেও একইসাথে মাছ-সবজির সমন্বিত চাষের কথা কেউ ভাবেননি আগে। জিরো কস্ট বা প্রায় বিনা খরচেই এমনি এক পদ্ধতির বাস্তব দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড.এম এ সালাম।

দীর্ঘ ২০ বছরের অভিজ্ঞতা ও লন্ডন-নিউয়র্কের মত উন্নত শহরে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তিনি সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে উদ্ভাবণ করেছেন পরিবেশ বান্ধব একোয়াপনিক্সের মাধ্যমে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ পদ্ধতি এবং উৎপাদনও পেয়েছেন প্রায় তিনগুন। একোয়াপনিক্স হচ্ছে হাইড্রোপনিক্স ও একোয়াকালচারের সমন্বয়ে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি যেখানে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ করা যায়। প্রয়োজন পড়ে না কোনো মাটির। অল্প জায়গায় শুধুমাত্র সামান্য পানি ব্যবহার করে একইসাথে প্রচুর শাক-সবজি ও মাছ উৎপাদন করা যায়। এই পদ্ধতি খড়া ও উপকূলীয় লবনাক্ত অঞ্চলের জন্য  খুবই উপযোগী কারন এতে প্রায় ৯৭ শতাংশ পানি কম লাগে।

মাছ চাষের জন্য ব্যবহৃত ট্যাঙ্কের অ্যামোনিয়া সমৃদ্ধ পানি গাছের শিকড়ে অবস্থিত ডি-নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া ভেঙ্গে গাছের খাদ্য উপযোগী নাইট্রেটে পরিনত করে  ফলে গাছের জন্য আলাদা কোনো খাবার বা সারের প্রয়োজন হয় না। অপরদিকে গাছ মাছের ট্যাঙ্কের পানিকে দূষণমুক্ত করে পুনরায় মাছের ট্যাঙ্কে ব্যবহার উপযোগী করে তোলে ফলে মাছের উৎপদানও বেড়ে যায় অনেক। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র মাছের খাবার সরবরাহ করা প্রয়োজন পড়ে। তবে কেউ ইচ্ছা করলে বিনা খরচেই সেই খাবারও তৈরি করতে পারে ঘরে বসে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাড়ির ছাদে কাজ শুরু করেন ড. সালাম। এলক্ষ্যে এক টনের একটি প্লাষ্টিকের ট্যাঙ্কে ৮০০ লিটার পানিতে ৬০টি তেলাপিয়া ছাড়েন তিনি। পাশাপাশি সাড়ে পাচ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি কাঠের আলনা তৈরী করে তাতে তিন সারিতে মোট ৩৬ টি প্লাস্টিকের পানির বোতল যুক্ত করেন। বোতলগুলির তলার কাছাকাছি দুই পাশ দিয়ে কেটে জানালার মত রাখা হয়।



বোতলগুলিকে উল্টাটা করে ভিতরে একটু করা স্পঞ্জ দিয়ে তার উপর নুড়ি পাথর স্থাপন করে বোতল প্রতি দুটি করে গাছ লাগান। এতে একটি আলনায় ৩৬ টি বোতলে ৭২টি গাছ লাগানো সম্ভব হয়। এবার মাছের ট্যাঙ্কের পানি ৭ ফুট উঁচুতে একটি ৩০ লিটারের বালতিতে তুলে সেখান থেকে সাইফোন প্রক্রিয়ায় ফোটাফোটা করে উপরের ১২টি বোতলে পানি দেওয়া হয়। এই পানি পর্যায়ক্রমে উপর থেকে নিচে আরও দুটি বোতলের মধ্য দিয়ে গড়িয়ে একটি পাত্রে এসে জমা হয় যা পুনরায় মাছের ট্যাঙ্কে ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রতি দিন ১৬-১৮ ঘন্টা পানি প্রবাহের প্রয়োজন।  একোয়াপনিক্স পদ্ধতিতে সবজি চাষের জন্য কোন প্রকার সার বা মাটির প্রয়োজন হয় না। তবে মাছকে নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। বাজার থেকে কিনে মাছকে যাতে খাদ্য দিতে না হয় তার জন্য কালো সৈনিক (Black Soldier Fly) পোকার লার্ভার উৎপাদন প্রক্রিয়া উৎদ্ভাবন করেছেন তিনি যা মাছের খুব প্রিয় খাদ্য। এ পোকা পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় মাত্র ৫-৮ দিন বাঁচে। পূর্ণবয়স্ক পোকার কোন মুখ থাকে না এবং এরা কোন রোগ জীবাণুর বাহক হিসাবেও কাজ করে না।

প্রাপ্ত বয়স্ক পোকা শুধুমাত্র প্রজননে অংশ গ্রহণ করে তার জীবন শেষ করে ফলে মানুষের জন্যও এটি ক্ষতিকর নয়। এই পোকার ডিম ও লার্ভা লালন-পালনের জন্য একটি বিশেষ চেম্বার তৈরী করে তার মাঝে রান্না ঘরের তরিতরকারীর খোসা ও গম পচা রেখে এই পোকাকে ডিম দেওয়ার জন্য আকৃষ্ঠ করা হয়। ফলে দলে দলে এই পোকা এসে এই চেম্বারে ডিম দেয়। ডিম থেকে লার্ভা বের হয়ে পচনশীল বর্জ্য খেয়ে বড় হয় এবং লার্ভা দশার শেষ পর্যায়ে চেম্বার হতে বের হয়ে কোকন অবস্থায় কিছুদিন থাকার পর পূর্ণাঙ্গ পোকাড় উদ্ভব হয়। এই পূর্ণাঙ্গ পোকাকে একটি মশারির সাহয্যে আটকে রেখে এদের বড় কলোণীর সৃষ্টি করা হয়েছে। এই কালো সৈনিক পোকার লার্ভা মাছের খুব প্রিয় খাদ্য যাতে ১৭-১৮ শতাংশ প্রোটিন, ১১ শতাংশ লিপিড এবং বিভিন্ন প্রকার খনিজ লবন রয়েছে যা মাছের দ্রুত বর্ধনে সাহায্য করে। খুব সহজের এই পদ্ধতি অবলম্বন করে গ্রাম বাংলার বেকার যুবক-যুবতীগণ সহজেই আত্নকর্ম সংস্থান করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

তাছাড়া এই পদ্ধতিতে খুব কম খরচে বাড়ির আঙ্গিনায় মাছ ও শাকসবজির চাষ করে পারিবারিক প্রোটিনের চাহিদাও মিটানো সম্ভব। তাছাড়া এ পদ্ধতিতে কোনো রাসায়নিক সার বা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না বলে এটি মানব দেহের জন্য সম্পূর্ণ ঝুকিমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব একটি পদ্ধতি। সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যদি আগ্রহী কৃষকদের সঠিক প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে তবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন অধ্যাপক ড.এম এ সালাম।

তথ্যসূত্র : বিডি উদ্যোক্তা

{ 1 comments... read them below or add one }

  1. Thanks for sharing, nice post! Post really provice useful information!

    FadoExpress là một trong những top công ty chuyển phát nhanh quốc tế hàng đầu chuyên vận chuyển, chuyển phát nhanh siêu tốc đi khắp thế giới, nổi bật là dịch vụ gửi hàng đi mỹ, gửi hàng đi nhậtgửi hàng đi pháp và dịch vụ chuyển phát nhanh đi hàn quốc uy tín, giá rẻ

    ReplyDelete

ই-মেইল সাবস্ক্রিপশন

Enter your email address:

Delivered by FeedBurner

ক্যাটাগরীসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Protected by Copyscape

ব্লগটি মোট পড়া হয়েছে

বাঙলা ব্লগ. Powered by Blogger.

- Copyright © মেহেদী হাসান-এর বাঙলা ব্লগ | আমার স্বাধীনতা -Metrominimalist- Powered by Blogger - Designed by Mahedi Hasan -