.....

Archive for July 2016

বাড়ীর ছাদে সহজ পদ্ধতিতে সব্জী চাষ



বর্ধিত জনসংখ্যার চাপ সামাল দিতে ভার্টিক্যাল (লম্বালম্বী) চাষাবাদের দিকে ঝুকছে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব। তাই দেশের বিজ্ঞানীরা হরাইজন্টাল (সমান্তরাল) চাষাবাদের পাশাপাশি নতুন ওই চাষাবাদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে পরামর্শ দিচ্ছেন সরকারকে।   এক্ষেত্রে বাড়ির ছাদ উপযুক্ত স্থান। ইতিমধ্যেই গবেষকরা বাড়ির ছাদে সবজি চাষের বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবণ করলেও একইসাথে মাছ-সবজির সমন্বিত চাষের কথা কেউ ভাবেননি আগে। জিরো কস্ট বা প্রায় বিনা খরচেই এমনি এক পদ্ধতির বাস্তব দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছেন ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড.এম এ সালাম।

দীর্ঘ ২০ বছরের অভিজ্ঞতা ও লন্ডন-নিউয়র্কের মত উন্নত শহরে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তিনি সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে উদ্ভাবণ করেছেন পরিবেশ বান্ধব একোয়াপনিক্সের মাধ্যমে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ পদ্ধতি এবং উৎপাদনও পেয়েছেন প্রায় তিনগুন। একোয়াপনিক্স হচ্ছে হাইড্রোপনিক্স ও একোয়াকালচারের সমন্বয়ে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি যেখানে মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ করা যায়। প্রয়োজন পড়ে না কোনো মাটির। অল্প জায়গায় শুধুমাত্র সামান্য পানি ব্যবহার করে একইসাথে প্রচুর শাক-সবজি ও মাছ উৎপাদন করা যায়। এই পদ্ধতি খড়া ও উপকূলীয় লবনাক্ত অঞ্চলের জন্য  খুবই উপযোগী কারন এতে প্রায় ৯৭ শতাংশ পানি কম লাগে।

মাছ চাষের জন্য ব্যবহৃত ট্যাঙ্কের অ্যামোনিয়া সমৃদ্ধ পানি গাছের শিকড়ে অবস্থিত ডি-নাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া ভেঙ্গে গাছের খাদ্য উপযোগী নাইট্রেটে পরিনত করে  ফলে গাছের জন্য আলাদা কোনো খাবার বা সারের প্রয়োজন হয় না। অপরদিকে গাছ মাছের ট্যাঙ্কের পানিকে দূষণমুক্ত করে পুনরায় মাছের ট্যাঙ্কে ব্যবহার উপযোগী করে তোলে ফলে মাছের উৎপদানও বেড়ে যায় অনেক। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র মাছের খাবার সরবরাহ করা প্রয়োজন পড়ে। তবে কেউ ইচ্ছা করলে বিনা খরচেই সেই খাবারও তৈরি করতে পারে ঘরে বসে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাড়ির ছাদে কাজ শুরু করেন ড. সালাম। এলক্ষ্যে এক টনের একটি প্লাষ্টিকের ট্যাঙ্কে ৮০০ লিটার পানিতে ৬০টি তেলাপিয়া ছাড়েন তিনি। পাশাপাশি সাড়ে পাচ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট একটি কাঠের আলনা তৈরী করে তাতে তিন সারিতে মোট ৩৬ টি প্লাস্টিকের পানির বোতল যুক্ত করেন। বোতলগুলির তলার কাছাকাছি দুই পাশ দিয়ে কেটে জানালার মত রাখা হয়।



বোতলগুলিকে উল্টাটা করে ভিতরে একটু করা স্পঞ্জ দিয়ে তার উপর নুড়ি পাথর স্থাপন করে বোতল প্রতি দুটি করে গাছ লাগান। এতে একটি আলনায় ৩৬ টি বোতলে ৭২টি গাছ লাগানো সম্ভব হয়। এবার মাছের ট্যাঙ্কের পানি ৭ ফুট উঁচুতে একটি ৩০ লিটারের বালতিতে তুলে সেখান থেকে সাইফোন প্রক্রিয়ায় ফোটাফোটা করে উপরের ১২টি বোতলে পানি দেওয়া হয়। এই পানি পর্যায়ক্রমে উপর থেকে নিচে আরও দুটি বোতলের মধ্য দিয়ে গড়িয়ে একটি পাত্রে এসে জমা হয় যা পুনরায় মাছের ট্যাঙ্কে ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিতে প্রতি দিন ১৬-১৮ ঘন্টা পানি প্রবাহের প্রয়োজন।  একোয়াপনিক্স পদ্ধতিতে সবজি চাষের জন্য কোন প্রকার সার বা মাটির প্রয়োজন হয় না। তবে মাছকে নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ করতে হয়। বাজার থেকে কিনে মাছকে যাতে খাদ্য দিতে না হয় তার জন্য কালো সৈনিক (Black Soldier Fly) পোকার লার্ভার উৎপাদন প্রক্রিয়া উৎদ্ভাবন করেছেন তিনি যা মাছের খুব প্রিয় খাদ্য। এ পোকা পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় মাত্র ৫-৮ দিন বাঁচে। পূর্ণবয়স্ক পোকার কোন মুখ থাকে না এবং এরা কোন রোগ জীবাণুর বাহক হিসাবেও কাজ করে না।

প্রাপ্ত বয়স্ক পোকা শুধুমাত্র প্রজননে অংশ গ্রহণ করে তার জীবন শেষ করে ফলে মানুষের জন্যও এটি ক্ষতিকর নয়। এই পোকার ডিম ও লার্ভা লালন-পালনের জন্য একটি বিশেষ চেম্বার তৈরী করে তার মাঝে রান্না ঘরের তরিতরকারীর খোসা ও গম পচা রেখে এই পোকাকে ডিম দেওয়ার জন্য আকৃষ্ঠ করা হয়। ফলে দলে দলে এই পোকা এসে এই চেম্বারে ডিম দেয়। ডিম থেকে লার্ভা বের হয়ে পচনশীল বর্জ্য খেয়ে বড় হয় এবং লার্ভা দশার শেষ পর্যায়ে চেম্বার হতে বের হয়ে কোকন অবস্থায় কিছুদিন থাকার পর পূর্ণাঙ্গ পোকাড় উদ্ভব হয়। এই পূর্ণাঙ্গ পোকাকে একটি মশারির সাহয্যে আটকে রেখে এদের বড় কলোণীর সৃষ্টি করা হয়েছে। এই কালো সৈনিক পোকার লার্ভা মাছের খুব প্রিয় খাদ্য যাতে ১৭-১৮ শতাংশ প্রোটিন, ১১ শতাংশ লিপিড এবং বিভিন্ন প্রকার খনিজ লবন রয়েছে যা মাছের দ্রুত বর্ধনে সাহায্য করে। খুব সহজের এই পদ্ধতি অবলম্বন করে গ্রাম বাংলার বেকার যুবক-যুবতীগণ সহজেই আত্নকর্ম সংস্থান করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

তাছাড়া এই পদ্ধতিতে খুব কম খরচে বাড়ির আঙ্গিনায় মাছ ও শাকসবজির চাষ করে পারিবারিক প্রোটিনের চাহিদাও মিটানো সম্ভব। তাছাড়া এ পদ্ধতিতে কোনো রাসায়নিক সার বা কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না বলে এটি মানব দেহের জন্য সম্পূর্ণ ঝুকিমুক্ত ও পরিবেশবান্ধব একটি পদ্ধতি। সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যদি আগ্রহী কৃষকদের সঠিক প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে তবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন অধ্যাপক ড.এম এ সালাম।

তথ্যসূত্র : বিডি উদ্যোক্তা

শূন্য পুঁজিতে শুরু করা একজন সফল উদ্যোক্তা



ঘটনাটা ৩১ বছর আগের। এক তরুণী জীবিকার তাগিদে কাজ নেন পোশাক কারখানায়। মাননিয়ন্ত্রণকর্মী হিসেবে ৮০০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু। কাজে যোগ দিয়ে কিছু সময় যেতেই নিজের ভেতরই যেন পরিবর্তনের ডাক পেলেন—এভাবে হবে না। এগোতে হলে শিখতে হবে মেশিনের কাজ। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ধরলেন মেশিন। কাজের দক্ষতায় পেতে থাকেন পদোন্নতি। এবার সচল হলো স্বপ্নও। পোক্ত হয়ে একসময় কাজ ছেড়ে নিজেই গড়লেন প্রতিষ্ঠান। শূন্য হাতে শুরু করে তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা। তাঁর নাম বেবি হাসান। বিএস অ্যাপারেল নামের একটি বায়িং হাউসের কর্ণধার তিনি।

নিজের শ্রম ও মেধা দিয়ে সফল উদ্যোক্তাদের একজন হয়েছেন বেবি হাসান। তাঁর অধীনেই কাজ করছেন প্রায় অর্ধশত কর্মী। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পোশাক রপ্তানির কাজ করে তাঁর প্রতিষ্ঠান। বছরে লেনদেন প্রায় পাঁচ কোটি টাকা।
সফল ব্যবসায়ী হবেন, এমন কোনো লক্ষ্য নির্ধারণ করে কর্মজীবন শুরু করেননি বেবি। অনেকের মতো তাঁরও শুরুটা জীবিকার তাগিদেই। এসএসসি পাস করার পর পারিবারিক সিদ্ধান্তে ১৯৮১ সালে বিয়ে হয়ে যায় তাঁর। বিয়ের পরবর্তী বছর জন্ম নেয় কন্যাসন্তান। স্বামীর আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। তাই সংসারে কিছুটা স্বস্তি আনতে নিজেই চাকরি করার সিদ্ধান্ত নেন। শুরুতে পরিবারের কেউ উৎসাহ না দেখালেও পরে অবশ্য মেনে নিয়েছেন। ১৯৯১ সাল পর্যন্ত পোশাক কারখানায় কাজ করেন বেবি। একসময় উৎপাদন পরিচালকের দায়িত্বও পান।

সে সময়গুলোর কথা উঠতেই বেবি হাসানের চেহারায় দৃঢ়তা। বললেন, ‘দিনে ১৪ ঘণ্টা করে কাজ করতাম। সকাল আটটায় কাজ শুরু হতো, ফিরতাম রাত ১০টার দিকে। কোনো দিন কাজে অবহেলা করিনি। শুরুতে অনেক দূর যেতে হবে এমন লক্ষ্য ছিল না, তবে যখন কাজটাকে ভালোবেসে ফেললাম, তখন স্থির করলাম একটা পর্যায়ে যেতে হবে।’
নব্বইয়ে দশকের মাঝামাঝি প্রতিষ্ঠান বদলে একটি বায়িং হাউসে যোগ দেন বেবি। পাশাপাশি টুকটাক এ–সংক্রান্ত ব্যবসাও শুরু করেন। ২০০০ সালে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের একটি সংগঠনের সদস্য হন তিনি। হাতে তেমন নগদ টাকা ছিল না, তাই দ্বারস্থ হন ব্যাংকের। দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে হালিশহর কে ব্লকে ‘বিতনু’ নামের একটি বুটিকের শোরুম খোলেন। ওই বছরই চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় নারী উদ্যোক্তাদের সংগঠন উইম্যান এন্ট্রাপ্রেনিউরস অ্যাসোসিয়েশন (উই)। ওই সংগঠনের সদস্য হন বেবি। ২০০০ সালের শেষের দিকে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রায় ২০ জন অংশ নেন কলকাতার একটি কুটিরশিল্প মেলায়। সেখানে গিয়েই চোখ খুলে যায় তাঁর। তিনি বলেন, ‘ওই মেলায় গিয়েই ব্যবসা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। কী করে জানি সেদিনই ব্যবসার পোকা ঢুকে যায় মাথায়। মনস্থির করি, আমাকে ব্যবসায় সফল হতে হবে।’

২০০২ সালে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে একটি বায়িং হাউস দাঁড় করানো শুরু করেন। এরপর ২০০৯ সালে নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন বিএস অ্যাপারেল নামের পৃথক বায়িং হাউস। বছর বছর এই প্রতিষ্ঠানের কলেবর বাড়ছে। মা বেবি হাসানের সঙ্গে ছেলে সালাহউদ্দিন চৌধুরীও সম্প্রতি ব্যবসায় যোগ দিয়েছেন।

প্রায় শূন্য থেকে আজকের অবস্থানে আসার কৃতিত্বের ভাগ বেবি হাসান দিতে চান আরও দুজন নারীকে। একজন তাঁর মা ফরিদা খাতুন, অন্যজন ব্যবসায়ী নেতা মনোয়ারা হাকিম আলী। ১৯৯৮ সালে অসুস্থতায় ভুগে বেবি হাসানের মা মারা যান। মেয়ের চূড়ান্ত সাফল্য মা দেখে যেতে পারেননি, এই কষ্টই এখন তাড়িয়ে বেড়ায় তাঁকে। বেবি হাসানের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে হলেও তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রাম শহরে।

চাকরির পাশাপাশি সংসারের দেখভাল করতে হয়েছে। ফলে অবসর বলে কিছু ছিল না। কিন্তু তাতে দুঃখ নেই বেবির। তিনি বলেন, চাকরি বা ব্যবসা মেয়েদের জন্য খুব কঠিন, এমনটি কখনো মনে হয়নি। চেষ্টা থাকলে যেকোনো নারীই ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রে সফল হতে পারবেন।’ এসব কথা যখন বলছিলেন, তখন বেবির মুখে সাফল্যর তৃপ্তির হাসি। বললেন, ‘পরিচিত কোনো মেয়ে যখন চাকরি করার কথা বলেন, আমি তাঁদের উৎসাহ দিই ব্যবসা করো। কারণ, আমাদের একটাই লক্ষ্য, চাকরি করব না, চাকরি দেব।’

সূত্র : প্রথম আলো

ই-মেইল সাবস্ক্রিপশন

Enter your email address:

Delivered by FeedBurner

ক্যাটাগরীসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Protected by Copyscape

ব্লগটি মোট পড়া হয়েছে

বাঙলা ব্লগ. Powered by Blogger.

- Copyright © মেহেদী হাসান-এর বাঙলা ব্লগ | আমার স্বাধীনতা -Metrominimalist- Powered by Blogger - Designed by Mahedi Hasan -