.....


"ও" এখন জেলে। এতটুকু বয়সে সে কিশোর অপরাধী হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। জেল হয়েছে পাঁচ বৎসরের তাও আবার সশ্রম। যদি ওর জেলে যাবার কেস হিস্ট্রী জানতে চাওয়া হয় তাহলে যে কাহিনী বেরোবে তা হয়ত অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য হবে না। তারপরেও বলতে হবে, জানতে হবে। কারন আমরা প্রতিনিয়ত ভিন্ন ভিন্ন বিষয় থেকে ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষা গ্রহণ করি। এই ঘটনাটি হয়ত অনেকের কাছে শিক্ষনীয় হবে। তাহলে আরম্ভ করা যাক।

ছেলেটির নাম ড্যানিয়েল মরফি। ডাকনাম ড্যান। বয়স মাত্র পনের বৎসর। বাবা একজন উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মচারী। মা একটি প্রাইভেট ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে। ড্যানের জন্ম হয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ায়। কিন্তু বর্তমানে ওরা থাকে লস এ্যাঞ্জেলসে। জায়াগাটা আমেরিকায়। দেশটির পুরো নাম "ইউনাইটেড স্টেট অফ অ্যামেরিকা"। সংক্ষেপে ইউএসএ। ড্যানের বয়স যখন চার তখন ও ভর্তি হয় ক্যালিফোর্নিয়ার স্থানীয় এক স্কুলে। সেখান থেকেই ওর কম্পিউটারের হাতেখড়ি।

নয় বৎসর বয়সে ওরা চলে আসে লস এ্যাঞ্জেলসে। কারন বাবার বদলি হওয়া। মাও আবেদন করে লস এ্যাঞ্জেলসে পোস্টিং করে নেয়। এমনিতেই ওর জ্ঞান ভালো। নয় বৎসর হতে না হতেই ও অফিস এ্যাপ্লিকেশন,গ্রাফিক্স ডিজাইন,ভিজ্যুয়াল বেসিক,সি,সি++,সি#,সানজাভা,জাভা,প্যাসকেল ইত্যাদিতে পারদর্শী হয়ে ওঠে। বই পড়ে, শিক্ষক ও উপরের ক্লাসের ছাত্রদের সাহায্য নিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ও ক্রমে ক্রমে কম্পিউটারের অনেক প্রোগ্রামে আরও পারদর্শী হয়ে ওঠে। ক্যালিফোর্নিয়া স্কুলে প্রোগ্রামিঙে ও তিনবার একাডেমিক অ্যাওয়ার্ড জিতে নেয়।

ক্যালিফোর্নিয়ায় থাকা কালীন সময়ে ওর মা-বাবা ওর তেমন আদর যত্ন নিতে পারেনি। তারপরও পরিবেশ ভাল থাকায় ওর পড়ালেখায় তেমন কোন ব্যাঘাত ঘটেনি। অসত সঙ্গ বা অসত উপদেশও ওর কানে তখনও প্রবেশ করেনি। কিন্তু লস এ্যাঞ্জেলসে আসার পর থেকেই পরিবেশ উল্টে গেল। উজবুজ ও উড়নচন্ডী সব বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে ওর কোমল হৃদয় বিগড়ে গেল। ক্রমে ক্রমে ও শিখে উঠতে লাগল কিভাবে ওর পূর্ববর্তী শিক্ষাকে কাজে লাগিযে সফটওয়্যারকে হ্যাকিংয়ের কাজে লাগানো যায়। তিন চারটি ই-মেইল এ্যাকাউন্ট খুলে পাশাপাশি ও চালালো চ্যাটিং সাথে প্রাথমিকভাবে ক্রেডিট কার্ডের নাম্বার জোগাড় করা। বয়স, পরিচয়, বাসস্থান গোপন করে অথবা ভূল তথ্য দিয়ে চলতে থাকলো ই-ক্রাইম। একে একে ওর হাতে এল কয়েক হাজার ডলার।

এই মুহূর্তে ও একটি ওয়েবসাইট লঞ্চ করল যা কিনা পর্নো নির্ভর । চাইণ্ড, এ্যাডাল্ট সহ বিভিন্ন প্রকার পর্নো ছবি, ভিডিও দিয়ে ও সাজালো ওর সাইটকে। শুধুমাত্র ডো্মেইন কিনে ও নিজেই ডিজাইন করলো সাইটটি ঘরে বসে। ইন্টারনেটের বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে, বাজারের পাওয়া বিভিন্ন ডিভিডি থেকে ও পিকচার ও ভিডিও সংগ্রহ করলো। ধীরে ধীরে ওর ওয়েবসাইট বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠল। অনেক পর্নো নির্ভর প্রতিষ্ঠান ওর ওয়েবসাইটে নিজেদের অ্যাডের মাধ্যমে ওকে ডলার দিতে লাগল। ধীরে ধীরে ও যেন ফুলে ফেপে উঠতে লাগল। তবে এ সব কাজই চলতে লাগল ওর মা-বাবা এবং সকল প্রকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অগোচরে। বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় ওয়েবসাইটের নেটওয়ার্কে আঘাত করে ও হ্যাক করলো।

তবে ও যা ই করুক না কেন সব কিছুই করে সাইবার ক্যাফেতে শুধুমাত্র নিজের ওয়েবসাইট ডেভেলোপমেন্ট ছাড়া। একেক সময় একেক ক্যাফেতে ও যায়। সফটওয়্যার এর মাধ্যমে ক্যাফের পিসির ব্রাউজিং ইনফরমেশনসড সকল হিস্টোরী ও ডিলিট করে দেয়। যার ফলে কোন ধরনের ইনেকোয়ারী ওকে ধরতে পারে না। তাছাড়া ওর বাসার পিসিতে ও ঘন ঘন ইন্টারনেট ব্রডব্যন্ড লাইন বদলানোর মাধ্যমে ও চালালো ক্রাকিং। একটি ক্রাকিং চালিয়ে ও নিজের ইন্টারনেট ক্লায়েন্ট আইপি বদলিয়ে ফেলে। এভাবে ও প্রায় কয়েক মিলিয়ন ডলারের মালিক হল।

কিন্তু মানুষ মাত্রই ভূল হয়। আর সেটাই তার ধ্বংসের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার। একদা ও একটি শীর্ষস্থানীয় ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের জন্য সফটওয়্যার তৈরী করছিল প্রোগ্রামকোড লিখনের মাধ্যমে নিজের বাসার পিসিতে। ওয়েবসাইটটি ছিল একটি স্বনামধন্য হোটেলের। ওর উদ্দেশ্য ছিল হোটেলে এযাবত কালে যত লোক থেকেছে তাদের তথ্য যোগাড় করা। এসব তথ্য শহরের বড় মাফিয়া চক্রের কাছে মোটা অংকের ডলারে বিক্রি হবে। সেক্ষেত্রে অনেক শক্তিশালী সফটওয়্যার লাগবে। যাকে পরবর্তীতে ভাইরাস সফটওয়্যারে কনভার্ট করে ওই ওয়েবসাইটের নেটওয়ার্কে আক্রমন করতে হবে। তাহলেই ওর উদ্দেশ্য সফল হবে। তো ও প্রোগ্রাম লিখে তা কম্পাইল করছিল। রাত তখন গভীর। দু চোখের পাতা আর স্থির থাকতে চাইছিল না। শত হলেও বয়স কম। এই বয়সে এত পরিশ্রম কী আর ধাতে সয় ? এক সময় ও ঘুমিয়ে পড়ল।

কিন্তু বিধি বাম। প্রোগ্রামটি কম্পাইল হয়ে নিজ থেকেই রান হয়ে গেল এবং নিজে নিজেই ওয়েবসাইটটিকে হ্যাকড করল। এ সব ঘটনা ঘটল আরেকটি ভাইরাসের প্রভাবে। যা কিনা পূর্বে ড্যান তৈরী করেছিল। একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ ভাইরাসটি কম্পাইল কৃত প্রোগ্রামটিকে অটোরান করিয়ে অটোম্যাটিক ওয়েবসাইট হ্যাকড করে। তো ও সকালে উঠে দেখল এই অবস্থা। ততক্ষনে প্রকাশ হয়ে গেছে ওর কুকীর্তি। পুলিশ এস ধরে নিয়ে গেল।

এতদিন পর ওর মা-বাবা টের পেল তাদের ছেলের এ অধপতন। এবং এও টের পেল যে সন্তানকে শাসন এবং চোখে চোখে রাখার কত গুরুত্ব। তাই বাংলাদেশের সকল মা-বাবার প্রতি এই গল্পের লেখকের একটিই অনুরোধ থাকল আর তা হল আপনার সন্তানকে প্রযুক্তি বিদ্যায় শিক্ষিত করুন কারন এটাই হল ভবিষ্যতের পৃথিবীর একমাত্র সম্ভল। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন এই যে, আপনার সন্তানকে চোখে চোখে রাখুন। তার আচার আচরন লিপিবদ্ধ করুন। খারাপ বন্ধুদের চিহ্নিত করে তাদের সঙ্গ থেকে আপনার সন্তানকে বিরত রাখুন। সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতা থেকে তাকে দূরে রাখুন। ন্যায়ের পথে চলতে এবং কাজ করতে শিক্ষা দিন। নব প্রযুক্তির সূচনায় নতুন প্রজন্মের বিকাশে সবাই এগিয়ে আসি এবং গড়ে তুলি এক সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ। ধন্যবাদ।

আমি যখন হ্যাকিং সম্পর্কে জানতে পারি তখন গল্পটি লিখা। সময়টা সম্ভবত ২০০৯ সালের প্রথম দিকে।

Leave a Reply

Subscribe to Posts | Subscribe to Comments

ই-মেইল সাবস্ক্রিপশন

Enter your email address:

Delivered by FeedBurner

ক্যাটাগরীসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Protected by Copyscape

ব্লগটি মোট পড়া হয়েছে

বাঙলা ব্লগ. Powered by Blogger.

- Copyright © মেহেদী হাসান-এর বাঙলা ব্লগ | আমার স্বাধীনতা -Metrominimalist- Powered by Blogger - Designed by Mahedi Hasan -