.....


লেখক: সৌম্যব্রত
কবি সত্যেন্দ্র নাথ দত্ত ফুলপ্রেমীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘ জোটে যদি মোটে একটি পয়সা খাদ্য কিনিও ক্ষুধার লাগি, দু’টি যদি জোটে তবে একটিতে ফুল কিনে নিও হে-অনুরাগী।’ সৌন্দর্যপিপাসু মানুষের কাছে ফুলের আবেদন চিরন্তন। সভ্যতার ক্রম বিকাশের সাথে সাথে ফুলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেড়ে চলেছে। ফলে ভালোবাসার ফুলে লেগেছে বাণিজ্যের ছোঁয়া। দিন দিন বেড়ে চলেছে ফুলের চাষ ও ব্যবহার। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায়ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এখন ফুল চাষ হচ্ছে। উপজেলার খাগরিয়া ইউনিয়নের চর খাগরিয়ার বিলজুড়ে আবাদ করা হচ্ছে নানা জাতের ফুল। এক দশক আগেও ধান, আলু, মরিচ, মুলা, বেগুনসহ প্রচলিত মৌসুমি ফসলের চাষাবাদে সীমাবদ্ধ ছিল তাদের কৃষিকাজ। কিন্তু এখন দিন বদলে গেছে। সেই চাষিরাই এখন বিলজুড়ে আবাদ করছে নানা জাতের ফুল। চাষিরা জানিয়েছেন, অন্যান্য ফসলের চেয়ে ফুল চাষে লাভ অনেক বেশি। আর ফুল চাষ করার ফলে খাগরিয়ার অনেক বেকার নারী-পুরুষের কর্মসংস্খান সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষেতে আগাছা পরিষ্কার, ফুল ছেঁড়া, ফুলের মালা গাঁথাসহ অনেক কাজে এলাকার নারীও সম্পৃক্ত হয়েছে।
পরিদর্শনকালে দেখা যায়, চর খাগরিয়ায় চাষ করা হয়েছে লাল গোলাপ, সাদা গোলাপ, রজনীগìধা, ভুট্টা ফুল, গাঁদা, বেলি, কামিনী, সূর্যমুখী, ডায়মন্ড, গরম ফেনিয়া, জারবরা, রতপুসুটি, টুনটুনি, জিপসি, স্টারকলি ও চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা জাতের ফুল। সফল ফুলচাষি খাগরিয়ার আবদুল মোতালেব জানান, ১৯৮৮ সালের এসএসসি পরীক্ষা দিই। এ সময় ছয় ভাই চার বোনসহ ১২ জনের সংসারের অভাব অনটন দেখা দিয়েছিল। তখন ভাই বোনদের মধ্যে আমি সবার বড় হওয়ায় পরীক্ষার ফলের জন্য অপেক্ষা না করে নেমে পড়ি জীবন সংগ্রামে। চাকরি নিই চট্টগ্রামে চেরাগী পাহাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ নার্সারিতে। একটানা তিন বছর চাকরি করেছি। এর পর ফুলের দোকানে চাকরির অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে নেমে পড়ি ফুল চাষে। কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই বাড়ির পাশের ১৪ শতাংশ জমিতে ফুলের চাষ করি। প্রথম বছরেই পাঁচ হাজার টাকা পুঁজিতে লাভ হয় প্রায় ১০ হাজার টাকার মতো। মোতালেব আরো জানান, প্রথম বছরেই ভালো লাভ হওয়াতে পরের বছর আরো বেশি জমিতে ফুলের চাষ করি। কিন্তু তখন শহরে গিয়ে ফুল বিক্রি করতে হতো। অনেক সময় ঠিকমতো দাম থেকে বঞ্চিত হতাম। তাই খাগরিয়ায় উৎপাদিত ফুল বিক্রির জন্য চট্টগ্রাম শহরের চেরাগী পাহাড়ের মোড় এলাকায় নিজেই স্টার পুষ্প বিতান নামে একটি দোকান গড়ে তুলি। বর্তমানে মোতালেব ১৬-১৭ কানি জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলের আবাদ করছেন। মোতালেব, গফুর, রহিম, আনিস ও মাবুদসহ ছয় ভাই মিলেই ফুল চাষকে পেশা হিসেবে নিয়ে জীবন পাল্টে ফেলেছেন। মোতালেব জানান, ফুল চাষ করে তিনি সমাজে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন। ছয় লাখ টাকা খরচ করে দুই বোনকে বিয়ে দিয়েছেন। পাকা বাড়ি নির্মাণ ও প্রাইভেট কার সব ফুল চাষের মাধ্যমে হয়েছে। আর উপজেলায় শ্রেষ্ঠ ফুলচাষি হিসেবে একাধিকবার পুরস্কারও পেয়েছেন। তার পরিকল্পনা আরো অধিক জমিতে ফুল চাষ করা। মোতালেবের মতো আরো অনেকে ফুল চাষ করে ভাগ্য বদলে নিয়েছেন। খাগরিয়ায় ফুল চাষ করে চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় এলাকায় মাধুরীলতা,বাহাদুর নার্সারি ও ডালিয়া নামে দোকান গড়ে তুলেছেন ফুল চাষি মহিউদ্দিন, আমির হোসেন ও রফিক। আরো অনেকেই আবাদ করেছেন ফুল।

চাষিরা জানান, আগে খাগরিয়ার অধিকাংশ জমিতে শুষ্ক মৌসুমে আলু চাষ করা হতো। ফুল চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় চাষিরা এখন আলু চাষের পরিবর্তে ফুল চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তারা জানান, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সাতকানিয়ার খাগরিয়ায় ফুল চাষ বছরের পর বছর বেড়ে চলেছে। চাষিরা আলু, মুলা, আখ, কপি ও শিম চাষসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ বাদ দিয়ে ফুল চাষের দিকে ঝুঁকছেন। চর খাগরিয়ার কালু মিয়া চৌধুরী বাড়ির ফুলচাষি মোহাম্মদ মজিবুর রহমান জানান, তিনি পাঁচ বছর ধরে ফুল চাষ করছেন। এর আগে আলু ও আখ ক্ষেত করেছেন। বছরের পর উৎপাদনে ব্যয় আর লাভের ব্যবধান থাকত খুব কম। এলাকার অন্য ফুলচাষিদের দেখাদেখি পাঁচ বছর আগে তিনি এক খণ্ড জমিতে ফুল চাষ শুরু করেন। প্রথম বছরেই ভালো লাভ হওয়ায় পরের বছর আরো অধিক জমিতে চাষ শুরু করেন। এ বছর মুজিব তিন কানি জমিতে ফুল চাষ করেছেন।
মজিব জানিয়েছেন, এ বছর তার তিন কানি জমিতে ফুল চাষ করতে ৬০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। আর এ বছর ইতোমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। আশা করছেন আরো ৬০-৭০ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবেন।
এলাকায় ফুল চাষকে কেন্দ্র করে অনেক নারী শ্রমিকের কর্মসংস্খান হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, এলাকার ফুল চাষ তাদের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। এদের একজন মরিয়ম। তিনি জানান, এলাকায় ফুল চাষ হওয়ায় তারা ভালোভাবে কাজ করতে পারছেন। তারা আগে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কাজ করতেন। এখন ফুলের বাগানে কাজ পাওয়াতে দূরে কাজ করতে যেতে হচ্ছে না।

সূত্র : এগ্রোবাংলা

Leave a Reply

Subscribe to Posts | Subscribe to Comments

ই-মেইল সাবস্ক্রিপশন

Enter your email address:

Delivered by FeedBurner

ক্যাটাগরীসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Protected by Copyscape

ব্লগটি মোট পড়া হয়েছে

বাঙলা ব্লগ. Powered by Blogger.

- Copyright © মেহেদী হাসান-এর বাঙলা ব্লগ | আমার স্বাধীনতা -Metrominimalist- Powered by Blogger - Designed by Mahedi Hasan -