.....

Archive for January 2014

সফল উদ্যোক্তা হতে চাইলে খেয়াল রাখুন ১৪ বিষয়

   
শুধু জিনিয়াসরাই নিজের মত করে কাজ করতে পারে। আর যারা জিনিয়াস না তারা অন্যকে অনুসরণ করে। এখন আপনিই ভাবুন কোনটা বেছে নিবেন।

- আপনি কি জানতে চান আপনি চলে যাওয়ার পর সবাই আপনাকে কতটুকু মিস করবে? এক গ্লাস পানিতে আঙ্গুল ডুবান। তারপর আঙ্গুল উঠিয়ে ফেলুন। আপনার আঙ্গুলের দ্বারা যে শূণ্য স্থান তৈরি হয়েছিল তা মুহুর্তেই পূর্ণ হয়ে যাবে। পানির শূণ্যস্থান পূর্ণ হতে যে পরিমাণ সময় লেগেছে আপনার শূণ্যতাও সেই পরিমাণই থাকবে।

- আমরা আমাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা কখনোই কাজে লাগাই না। যদিও আমাদের কর্মক্ষমতা সীমিত, আমরা এই সীমিত ক্ষমতাকেই কাজে রূপ দেই না।
- আপনি নেতৃত্বে না আসলে পরিবর্তন কখনোই সম্ভব না। যদি অন্য মানুষকে অনুসরণ করে চলেন তবে আপনার পক্ষে সর্বোচ্চ অন্য কারও মত হওয়া সম্ভব। এর চেয়ে বেশি কিংবা এর চেয়ে ভিন্ন হওয়া সম্ভব না।
- দুই কারনে মানুষ ব্যথা পায়। এক, নিয়ম মেনে চলতে গেলে মানুষ ব্যথা পায়। দুই, নিজের ভুলের জন্য কিংবা অনিয়মের জন্য মানুষ ব্যথা পায়। মনে রাখবেন, নিয়ম মেনে চললে আপনি হয়তো এক আউন্স পরিমাণ ব্যথা পাবেন আর নিয়ম মেনে না চললে আপনি এক টন পরিমাণ ব্যথা পাবেন।

আপনারা পড়ছেন, সফল উদ্যোক্তা হতে চাইলে খেয়াল রাখুন ১৪ বিষয়

- স্থূলকায়, মাতাল ও নির্বোধ লোক জীবনে কিছুই করতে পারে না।
- ভীরু কাপুরুষ মরে হাজার হাজার বার, কিন্তু সাহসী বীর মরে মাত্র একবার।
- আজকের ব্যথাই আগামীদিনের শক্তি। আজকে যত বেশি ব্যথা পাবেন আগামীকাল তত বেশি শক্তিশালী হবেন।
- ভয়কে জয় করতে পারার নামই সাহসিকতা।   হয় কাজটি করুন, না হয় কাজটি ছেড়ে দিন। চেষ্টা করছি কখনোই বলা যাবে না।
- সময় হবে তারপর কাজ করবেন এমনটা কখনোই করা যাবে না। বার বার কাজ করার পর একদিন হয়তো সাফল্যের সেই কাংক্ষিত সময় আপনার কাছে ধরা দিবে।
- বিরক্তিভাব হচ্ছে বিষপানের মত, যা একদিন আপনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবে।
- জনহীন পতিত জমির মত সামনে বিশাল পথ। এ পথ পাড়ি দিতে হবে একা।
- অধ্যবসায়ি কোন দিন ব্যর্থ হয় না।

সূত্র : নিউজনেট

যে পাঁচ বিষয় কখনোই অনলাইনে প্রকাশ করবেন না


অনলাইনে কোনোকিছু প্রকাশ করার পর তা কখনোই মুছে ফেলা যায় না। এমনকি তার ওপর আর পোস্টদাতার নিয়ন্ত্রণও থাকে না। আপনি অনলাইনে থাকতে ভালোবাসেন তার মানে এই নয় যে, আপনার সবকিছু ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। টাইমস অফ ইন্ডিয়া অনুসরণে পাঁচটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা হল। আপনার অ্যাকাউন্টের প্রাইভেসি যতই নিশ্চিদ্র হোক, যত বাছাই করা অনলাইন বন্ধু থাকুক না কেন, ভবিষ্যতের ঝামেলা এড়াতে এ লেখায় দেয়া কয়েকটা বিষয় কখনোই অনলাইনে প্রকাশ করবেন না।

১. অন্তরঙ্গ ফটো ও ভিডিও
আপনার বর্তমান সময়ে সঙ্গীর সঙ্গে দারুণ উত্তেজনায় যদি কোনো অন্তরঙ্গ ভিডিও বা ছবি অনলাইনে পোস্ট করেন তা শীঘ্রই আপনাকে ভোগানো শুরু করবে। অনলাইনের কোনোকিছু সম্পূর্ণ ডিলিট করা যায় না। যে মুহূর্ত আপনি কলিগ, বস, ভাইবোন বা পিতামাতাকে দেখাতে চান না, সেগুলো কখনোই ইন্টারনেটে দিবেন না।

২. ফোন নম্বর ও বিস্তারিত ঠিকানা
অনলাইন বন্ধুদের খুব ভালোভাবে বিশ্বাস করলেও এ ঝুঁকিটি নিতে যাবেন না কখনোই। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সরল হওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। ঠিক একইভাবে অনলাইনে কোনো ভুয়া প্রতিষ্ঠানের লাকি ড্রয়ের জন্য ফর্ম ফিলাপ এড়িয়ে চলবেন। ভুয়া লাকি ড্র আপনাকে আনলাকি করে দিতে পারে।

৩. কাউকে আক্রমণ করবেন না
আপনার যদি কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকে, তাহলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তা করাই ভালো। অনলাইন ব্যবহার করে কাউকে সরাসরি কোনো আক্রমণ করা উচিত নয়। কারণ তারা আপনাকে অনলাইন থেকে খুঁজে বের করতে পারবে সহজেই।

আপনারা পড়ছেন,  যে পাঁচ বিষয় কখনোই অনলাইনে প্রকাশ করবেন না

৪. ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিস্তারিত
আপনার বিল যদি অনলাইনে পরিশোধ করতে হয়, সেক্ষেত্রে ব্যাংকের বা বিল গ্রহণকারীর নিজস্ব ওয়েবসাইটে করা যেতে পারে। কিন্তু কখনোই আপনার অ্যাকাউন্ট নম্বর, এটিএম কার্ডের বিস্তারিত, পিন নম্বর কিংবা এ ধরনের কোনো তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করবেন না। কেউ এ ধরনের তথ্য চাইলে তাকে সন্দেহজনক তালিকায় রাখুন।

৫. প্রতি মুহূর্তের বিস্তারিত
আপনার দৈনন্দিন অনুভূতি, ভালোলাগা, খারাপলাগা, হাস্যরস ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করায় কোনো বাধা নেই। কিন্তু যদি ওমুক দোকানে কেনাকাটা করতে গেলাম, চায়ের দোকানে বসলাম ইত্যাদি প্রতি মুহূর্তের বিস্তারিত প্রকাশ শুরু করেন তাহলে তা বিপদ ডেকে আনতে পারে। এ কারণে প্রতি মুহূর্তের বিস্তারিত অনলাইনে প্রকাশ করা অনুচিত।

সূত্র : অলশেয়ারনিউজ

স্বপ্নপূরণে ১০ পদক্ষেপ: আপনি যা চান তা-ই হবে


হতে পারে আপনি ফ্রিল্যান্সিং কাজ পছন্দ করেন। অথবা পছন্দ করেন তথ্যপ্রযুক্তির কোনো বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে। পরামর্শ, ছবি তোলা ইত্যাদিও থাকতে পারে আপনার এ তালিকায়। কিংবা এমন কোনো বিষয়, যা এখনো নির্ণয় করতে পারেননি আপনি। এ লেখায় দেয়া পয়েন্ট ধরে নির্ণয় করুন আপনার স্বপ্নের সেই বিষয় এবং তা বাস্তবায়ন করুন।

১. আপনি কিসে ভালো?
আপনি যদি সদ্যোজাত না হন, তাহলে কোনো না কোনো বিষয়ে আপনার দক্ষতা ও মেধা আছে। এমনকি আপনি যখন খুব ছোট ছিলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তেন, তখনও নিশ্চয়ই আপনার মধ্যে কোনো বিশেষ গুণ প্রকাশ পেয়েছিল। আপনি কী একজন ভালো লেখক, বক্তা, আঁকিয়ে, ব্যবস্থাপক, নির্মাতা, শিক্ষক বা খুব ভালো বন্ধু? আপনার মাথায় কী মানুষের সঙ্গে ভালোভাবে যোগাযোগ, সুন্দর বাগান করা, কোনোকিছু বিক্রি করার দারুণ সব আইডিয়া ঘোরাফেরা করে? নিশ্চিত না হলে এ প্রশ্নগুলো নিয়ে আধঘণ্টা চিন্তা করুন। যথাসম্ভব অতীতে গিয়ে চিন্তা করুন। আপনার শখ, প্রজেক্ট কিংবা চাকরি। আমরা প্রায়ই আমাদের দক্ষতার বিষয় ভুলে যাই। যদি একাধিক বিষয় আসে তাহলে তার একটা তালিকা করে ফেলুন।

২. কোন কাজটি আপনাকে রোমাঞ্চ দেয়?
এটা হতে পারে আপনার কাজের কোনো অংশ, যা করতে আপনি রোমাঞ্চিত হন। হতে পারে আপনি কাজের বাইরের কোনো বিষয়ে রোমাঞ্চিত হন। এর মধ্যে রয়েছে একটা শখ, কোনো একটা কাজ অথবা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে করা কোনো কাজ। পিতামাতা, সঙ্গী বা কোনো বন্ধুর জন্য করা কোনো কাজও হতে পারে এটা। আবার এমন কোনো কাজ হতে পারে, যা আপনি এখনো করেননি কিন্তু করার আশা করেন। আবার আধঘণ্টা চিন্তা করুন। লিপিবদ্ধ করুন সে কাজটি। যদি খুঁজে না পান, তাহলে আপনি হয়তো নিজের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।

৩. আপনি  কী পড়েন?
ইন্টারনেটে আপনি সময় ব্যয় করে কোন বিষয়টি পড়েন? পড়ার জন্য কোন ম্যাগাজিনের খোঁজ করেন আপনি? কোন ব্লগ আপনি ওপেন করেন? বইয়ের দোকানের কোন অংশে চোখ বুলাতে আপনার ভালো লাগে? সেখানে অনেক বিষয় থাকতে পারে। এর সবগুলোই তালিকাবদ্ধ করুন।

৪. আপনার গোপন স্বপ্নের বিষয় কী?
স্বপ্নে আপনি কোন হাস্যকর কাজটা পেশা হিসেবে নিতে চান? হতে পারে স্বপ্নে আপনি একজন লেখক, শিল্পী, ডিজাইনার, আর্কিটেক্ট, ডক্টর, উদ্যোক্তা বা প্রোগ্রামার হতে চান। কিন্তু কিছু ভয়, সন্দেহ আপনাকে পেছন থেকে টেনে ধরে। হতে পারে এ তালিকায় আছে অনেকগুলো কাজ। যতোই অবাস্তব হোক, সবগুলোকেই আপনার তালিকায় যোগ করুন।

৫. শিখুন, জিজ্ঞাসা করুন ও নোট নিন
উপরের পয়েন্টের ভিত্তিতে আপনি একটা তালিকা তৈরি করলেন। এরপর সে তালিকা থেকে আপনার সবচেয়ে আগ্রহের কয়েকটি বিষয় নির্ণয় করুন। এগুলো হচ্ছে আপনার প্রথম প্রার্থী। এবার সে বিষয়টি বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে আপনার পড়াশোনা শুরু করুন। এ বিষয়ে ইন্টারনেটের সাহায্য নিন। এ ক্ষেত্রে যারা সফল তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সাহায্য নিন ইন্টারনেটের। এরপর আপনি সে বিষয়ে দক্ষতার জন্য যা যা প্রয়োজন তা তা শুরু করে দিন। পরবর্তী পর্যায়ে যাওয়ার জন্য আর অপেক্ষা করবেন না।

আপনারা পড়ছেন, স্বপ্নপূরণে ১০ পদক্ষেপ: আপনি যা চান তা-ই হবে

৬. গবেষণা করুন, প্রচেষ্টা বজায় রাখুন

কয়েকটি বিষয় নিয়ে খোঁজখবর নেয়া শুরু করুন। স্বপ্নপূরণে এভাবেই শেখা শুরু করতে হয়। আপনি যদি আপনার পছন্দের বিষয় এখনো শুরু না করে থাকেন, তাহলে তা শুরু করে দিন। হতে পারে আপনি এখনই এ বিষয়টির জন্য প্রস্তুত নন। তাহলে এ বিষয়টি বাদ দিয়ে তালিকা থেকে অন্য একটি বেছে নেওয়ার স্বাধীনতাও থাকছে। এটি প্রাথমিকভাবে আপনার কাছে গোপন থাকলেও পরবর্তীতে তা সবার কাছে প্রকাশ করে দেওয়াই ভালো। এটা আপনার উৎসাহ বাড়াবে।

৭. তালিকা ছোট করুন
আপনার তালিকা ছোট করুন। কাজের প্রতি মনযোগ দিন। এগুলোই সেই কাজ, যা ছিল আপনার স্বপ্ন। যদি তালিকায় ৩ থেকে  ৫টি বিষয়ের বেশি থাকে তাহলে ৫ ও ৬ নং পয়েন্ট আবার অনুসরণ করুন। এ কাজে কয়েকমাস সময়ও লাগতে পারে। এটা যতোই প্রচলিত ক্যারিয়ার না হোক, আপনার কাজ আপনি করে যান।

৮. দূর করুন ভয়

কোনো কাজ শুরু করতে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হল অসফল হওয়ার ভয় ও দ্বীধা। আপনার কাজ এখন ভয় ও দ্বীধা ছুঁড়ে ফেলা। প্রথম পদক্ষেপ হবে ভয়কে কোনো পাত্তা না দেওয়া। দ্বিতীয় পদক্ষেপ হবে চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলো নোট করে ফেলা। এরপরের বিষয় হলো বিষয়বস্তুর গভীরে ঢুকে যাওয়া। চতুর্থ পদক্ষেপ, নিজেকে প্রশ্ন করুন। এ কাজে অসফল হলে সবচেয়ে খারাপ কী হতে পারে? সাধারণত এতে বড় কোনো ক্ষতি হয় না। পঞ্চম পদক্ষেপ, এ কাজটি সফল করুন যো কোনো মূল্যে। প্রত্যেক ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যান। অসফল হলে কী হতে পারে, তা ভুলে যান। এরপর প্রতিটা সামান্য অগ্রগতি পরিমাপ করুন। সামান্য সাফল্যও উদযাপন করুন।

৯. সময় বের করুন
আপনার সময় বের করতে পারছেন না? মনে রাখবেন, আপনার স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্বও এখন আপনার। এটাই হোক আপনার অগ্রাধিকার। এর অর্থ আপনাকে ঘুম থেকে একটু আগে উঠতে হবে, ছুটির দিনে সময় দিতে হবে অথবা অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় ব্যয় কমিয়ে দিতে হবে। সামান্য পরিবর্তন করতে হবে আপনার দৈনন্দিন কাজের রুটিনে।

১০. আগ্রহের বিষয় যেভাবে বাস্তব হবে
এটা রাতারাতি হবে না। এতে ভালো করার জন্য আপনার কিছু না কিছু করতে হবে সবসময়। এর জন্য আগ্রহ থাকলে আপনি সফল হবেনই। এতে সময় লাগতে পারে কয়েক বছর পর্যন্ত । কিন্তু আপনি যদি এ কাজে আগ্রহ পান তাহলে সাফল্য আসবে সহজে। এ কাজে আপনি অনলাইনে নিজের একটা ব্লগ খুলতে পারেন। এতে লিপিবদ্ধ করবেন আপনার অগ্রগতিগুলো। এতে আপনার সঙ্গে পরিচয় হতে পারে এ ক্ষেত্রে সফল বা আগ্রহীদের সঙ্গে।

সূত্র : কালেরকন্ঠ

হতে হলে জয়ী


সিরাজুল ইসলাম আবেদ

একটা ছোট সাফল্য স্বপ্ন দেখায় বড় কিছুর। সাহস জোগায় নতুন কোনো উদ্যোগের। কিন্তু বললেই তো আর সফল হওয়া যায় না। সাফল্য এমনি এমনি এসে ধরা দেয় না হাতের মুঠোয়। সাফল্যের পেছনে মেধা, শ্রম, সময়োচিত পরিকল্পনা, অর্থের জোগান প্রভৃতি দরকার। তবে বর্তমান বিশ্বে যে কোনো সাফল্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে যোগাযোগ। বিশ্বের সফল ব্যক্তিত্ব, উদ্যোক্তাদের দিকে তাকাই। বিল গেটস, স্টিভ জবস, কার্লোস স্লিম, ওয়ারেন বাফেট, মুকেশ আম্বানি, লক্ষ্মী নিবাস মিত্তাল থেকে শুরু করে বিশ্বজুড়ে তরুণদের স্বপ্ন দেখানো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ উদ্যোক্তা সাবিরুল ইসলাম_ প্রত্যেকের সাফল্যের পেছনে বড় ভূমিকা রয়েছে যোগাযোগের। এখানে যোগাযোগ করাটাই শেষ কথা নয়। যোগাযোগে কে কতটা সৃজনশীল বা কৌশলী হতে পারছেন, তার ওপর নির্ভর করে সাফল্যের মাত্রা। তাই সৃজনশীল কার্যকর যোগাযোগের সূত্র তৈরি নিয়েও চলছে নানা গবেষণা, যা ব্যবহার করে সফল হতে পারেন আপনিও।

যোগাযোগের ক্ষেত্রে কীভাবে নিজেদের উপস্থাপন করবেন? উত্তর খুঁজতে তরুণ পেশাজীবীদের আন্তর্জাতিক সংগঠন জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল, ঢাকা পশ্চিম আয়োজন করে 'পেশাগত যোগাযোগে আধুনিক প্ররোচনা সূত্রে ব্যবহার' বিষয়ে কর্মশালার। সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ৭৫ তরুণ কর্মকর্তা অংশ নেন। যার মেন্টর ছিলেন বিশ্বখ্যাত বক্তা আলফ্রেড সি্নডার। আপনি আপনার বিষয়, উদ্যোগ বা পণ্যের প্রতি ভোক্তাকে আকর্ষিত করবেন কীভাবে, কী হবে কৌশল, কোন কোন বিষয়ে থাকতে হবে সতর্ক প্রভৃতি ছিল সি্নডারের উপস্থানার বিষয়। কর্মশালার কিছু বিষয় এখানে তুলে ধরা হলো। যে কেউ অনুসরণ করে দেখতে পারেন।

প্ররোচনার সূচনা
যখন কোনো বিষয়ে অন্যকে আগ্রহী বা প্ররোচিত করবেন, লক্ষ্য রাখতে হবে, আপনি তার মনোভাব, প্রত্যয় এবং মূল্যবোধে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করবেন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে হতে হবে আত্মবিশ্বাসী। প্ররোচনার মাত্রা আস্তে আস্তে বাড়াতে হয়। একটা বিষয় সব সময় মনে রাখতে হবে_ আপনি প্ররোচিত করবেন; কখনোই বাধ্য করতে যাবেন না। আপনি সব সময় শুধু তথ্য জানানোর চেষ্টা করবেন, কখনোই বোঝাতে যাবেন না। এমন মনোভাব প্রকাশ পাওয়ার মানে দাঁড়াবে ব্যর্থতাকে ডেকে আনা। আরও একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, ব্যক্তি এবং অবস্থার পরিবর্তনে প্ররোচনার কৌশল পাল্টাতে হবে_ অর্থাৎ সব ক্ষেত্রে একই কৌশল কাজ করবে না। এ জন্য যাকে প্ররোচিত করতে যাচ্ছেন সেই ব্যক্তির প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে। তার মনোভাব উপলব্ধি করতে হবে। সে হিসেবে তৈরি করতে হবে আপনার প্ররোচনার কৌশল।

জানতে হবে ইংরেজি
যোগাযোগের খুব গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ ভাষা। কাজের ক্ষেত্র এখন বিশ্বজুড়ে। যে কোনো সময় যে কোনো দেশের মানুষের সঙ্গে তৈরি হতে পারে কাজের সুযোগ। সে ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে ভাষা। ইংরেজি জানা থাকলে আপনি খুব সহজেই বিশ্বের যে কোনো দেশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবেন। তাই ক্যারিয়ার শুরুর প্রস্তুতিতেই খুব ভালো করে জেনে নিন ইংরেজি। সম্ভব হলে ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, হিন্দির মতো আরও কিছু ভাষা শিখে নিতে পারেন তা বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে আপনার কাজকে আরও সহজ করে তুলবে।

আপনারা পড়ছেন, হতে হলে জয়ী

থাকতে হবে নতুন তথ্য
আপনাকে আলাপের শুরুই করতে হবে নতুন কোনো তথ্য দিয়ে। পুরনো কথাই যদি ঘ্যান ঘ্যান করে বলতে থাকেন, তবে যাকে বিষয়টি সম্পর্কে বোঝাবেন তিনি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। আপনি যে বিষয়টি সম্পর্কে পরিকল্পনা করেছেন, হতে পারে সেটা মার্কেটিং বিষয়ে। সে ক্ষেত্রে প্রচলিত মার্কেটিং কৌশল থেকে আপনার কৌশলের নতুনত্ব কী এবং সেটা কতটা বেশি কার্যকর প্রচলিত কৌশলগুলো থেকে, সে বিষয়ে শুরুতে আপনাকে বলে নিতে হবে। তাহলে আপনি যাকে প্ররোচিত করতে গেছেন তিনি আপনার বিষয়টির প্রতি আগ্রহী হবেন। অর্থাৎ আপনি তার মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হলেন। আপনার সফল হওয়ার পথ এগিয়ে গেল অনেকটা।

ভাবনার ব্যাখ্যা
আপনার উপস্থাপনায় পরিকল্পনার বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যা থাকতে হবে। ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। সে ক্ষেত্রে আপনার উপস্থাপনা দুর্বল হয়ে যাবে।

ছোট দিয়ে শুরু
শুরুতেই বড় কোনো প্রস্তাব উপস্থাপন করলে তা বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই শুরুতে ছোট কোনো প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করলে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান আপনাকে পরীক্ষা করার জন্য হলেও প্রকল্পটি গ্রহণ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রকল্পটি সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি তার সঙ্গে সম্পর্কেরও উন্নয়ন ঘটে। এতে পরবর্তী সময়ে বড় কাজের প্রস্তাবও সহজেই গৃহীত হয়ে যায়।

সামাজিক দায়বদ্ধতা

আমাদের প্রত্যেকেরই সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। কাজেই কোনো প্রকল্প পরিকল্পনার সময় যদি সামাজিক দায়বদ্ধতার পূরণ হয় এমন কিছু সংযুক্ত করা যায়, সেই প্রকল্প দ্রুত গ্রহণ হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। কারণ প্রকল্প গ্রহণকারী একই সঙ্গে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা পূরণের সুযোগ পায়।

সূত্র : সমকাল

উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হবেন কীভাবে ?



নাদিয়া আফরিন

ব্যবসায়িক উদ্যোক্তারা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশ ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হতে হলে একজন ব্যক্তির তিনি যা করতে চান সে সম্পর্কে ভালো ধারণা ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা থাকা দরকার। বাজারে তার ব্যবসায়িক ধারণাগুলোকে লাভজনক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য তাকে সব ধরনের  প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

এখন প্রশ্ন, ‘ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা’ কাকে বলে? ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা এমন একজন ব্যক্তি যিনি কর্মী হিসেবে কাজ করার বদলে একটি ছোট ব্যবসা চালাতে পারেন যা সম্পূর্ণভাবে তার সৃজনশীলতা, অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনার ফল। এ ক্ষেত্রে তাকে ব্যবসায়িক ঝুঁকি ও সফলতা সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতে হবে।

আমাদের দেশের অধিকাংশ যুবক ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হওয়ার কথা ভাবতে পারেন নাÑ এটা প্রকৃতপক্ষে তাদের দোষ নয়। তাদের পরিবার তাদের চিন্তাধারাকে এমনভাবে তৈরি ও প্রভাবিত করে রেখেছে যে ব্যবসায়িক উদ্যোগের চিন্তা-ধারণা তাদের কল্পনাতেও আসে না। তারা শুধু একজন চাকরিজীবী হওয়ার কথাই ভাবতে পারেন তা ওই চাকরি নিয়ে তিনি যতই অসন্তুষ্ট হন না কেন।

খুবই কষ্ট লাগে যখন দেখি একজন ব্যাংক কর্মকর্তার স্নাতক ডিগ্রি পদার্থবিদ্যা বা এমন কোনো বিষয়ে যা ব্যাংকিং সম্পর্কিত কোনোরকম কাজের সঙ্গেই যুক্ত নয়। এটি আমাদের দেশের একটি খুবই পরিচিত দৃশ্যপট। যেহেতু একজন মানুষ তার চাকরি নিয়ে মোটেই সন্তুষ্ট নন, তাই তিনি তার কার্যক্ষেত্রে পূর্ণ দক্ষতা কখনোই দেখাতে পারেন না। এর ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো বছর শেষে তাদের প্রত্যাশিত সফলতা লাভ করে না যা দেশের অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব ফেলে।
আমাদের মনে আরেকটা ধারণা কাজ করে যে একমাত্র ধনী পরিবারের হলেই ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হওয়া যায়; কিন্তু এটা ভুল ধারণা। প্রশ্ন হচ্ছে, কেন মানুষের মনে এমন ধারণাটা কাজ করে? কারণটা হচ্ছে, তারা মনে করেন, ব্যবসা করতে অর্থ বিনিয়োগ করতে হয় আর যেহেতু তারা ধনী নন তাই ঝুঁকি নিয়ে অর্থ বিনিয়োগ করতে চান না। তাই তারা সব সময় একটা চাকরি পাওয়ার জন্য হন্যে হয়ে ছোটেন। কিন্তু এদের বেশির ভাগই কোনো চাকরি পান না। শুরু হয় হতাশা। এমন ঘটনা কি আমরা মাঝেমধ্যেই শুনি না যে, বছরের পর বছর চাকরি না পেয়ে কোনো এক যুবক আত্মহত্যার পথ বেছে  নিয়েছে? কিন্তু এটা কি আদৌ আমাদের কাম্য?

আপনারা পড়ছেন, উদ্যোক্তা হিসেবে সফল হবেন কীভাবে?

যারা এ রকম হতাশার মধ্যে জীবন ধারণ করছেন এবং যারা সত্যিকার অর্থে সৎ পথে কিছু করে আত্মসম্মানের সঙ্গে জীবন ধারণ করতে চান তাদের উদ্দেশে বলতে চাই, এমন হাজার হাজার সফল ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা পৃথিবীর বুকে আছেন যারা অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সদস্য। তারা তাদের মনের কথা শুনেছেন। তারা অসংখ্য প্রতিকূলতার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও থেমে থাকেননি। তারা তাই করেছেন যা তারা করতে ভালোবাসেন। তারা কখনো এমন কোনো ব্যবসা করেননি যাতে তাদের কোনো আগ্রহ ছিল না এবং যে কাজ সম্পর্কে তাদের ভালো কোনো জ্ঞান ছিল না।

যারা বিশ্বাস করেন, শুধু ধনীরাই নিজস্ব ব্যবসা করতে পারেন তাদের এটা বোঝা উচিত যে, এ ধরনের ব্যবসা করতে ঝুঁকির কথা মাথায় রাখতে হয়। বিলাসবহুল জীবন ছেড়ে কেন তারা এই ঝুঁকির পথ বেছে নেবেন? তারা কেন ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হওয়ার কথা ভাববেন? এ ক্ষেত্রে আদর্শ উদাহরণ হলেন বিল গেটস। তিনি অত্যন্ত ধনী পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও নিজে কিছু করার কথা ভেবেছেন। তিনি সেই কাজ করেছেন যা তিনি করতে ভালোবাসতেন। তিনি তার নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেছেন অক্লান্ত পরিশ্রম করে।

আজ পৃথিবীর বুকে বিল গেটস সফল ব্যবসায়িক উদ্যোক্তাদের জন্য আদর্শ। এ ছাড়া আমাদের দেশের ডক্টর ইউনূসের নাম উল্লেখযোগ্য। যিনি আজ পৃথিবীর বুকে প্রথম সারির সফল ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হিসেবে এক নামে পরিচিত এবং আমাদের গর্ব। আর তা ছাড়া যে কোনো কাজেই কমবেশি ঝুঁকি থাকে। তাই নয় কি?

এখন আপনাকে ভাবতে হবে যে আপনি আসলে কী করতে ভালোবাসেন। হয়তো আপনি কোনো চাকরি করেন এবং আপনার পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব আপনার। এ মুহূর্তে আপনার পক্ষে চাকরি ছেড়ে দেওয়া সম্ভব নয়; কিন্তু অন্যদিকে আপনি সত্যিকারভাবে একজন সফল ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হতে চান। আমি আপনাকে এটাই বলব, এ মুহূর্তে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার দরকার নেই কিন্তু আপনি শুরু করে দিন আপনার ব্যবসাজীবন। আপনাকে অবশ্যই আপনার কাজের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনার নিজের জন্য একটি সময় ছক তৈরি করতে হবে। সব সময় মনে রাখতে হবে সেই প্রবাদ ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। এ ইচ্ছাটা হতে হবে ঠিক মানে আপনাকে বুঝতে হবে আপনি সত্যিকারভাবে কী করতে ভালোবাসেন এবং সে কাজে আপনার দক্ষতা কতটুকু। আপনি কারো সহযোগিতা না পেলে কখনো হতাশ হবেন না। মনে রাখবেন আল্লাহ আমাদের সঙ্গে সব সময় আছেন। আর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই গান ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলবে।’
আপনি নিজেকে একজন সফল ব্যবসায়িক উদ্যোক্তা হিসেবে প্রমাণ করতে পারবেন যদি আপনার মাঝে কিছু প্রয়োজনীয় গুণাবলি থাকে। আর সে গুণাবলি হলো সঠিক কাজ নির্বাচন করা, সততা এবং নিজের কাজের প্রতি আস্থা, সঠিক পরিকল্পনা, সঠিকভাবে অর্থ ব্যয় করা, ধৈর্যশীলতা, ক্রেতার সন্তুষ্টি বুঝতে পারা, নিজের ব্যবসার প্রচারণা নিজে করতে পারা। জনসাধারণের মনে ব্যবসা সম্পর্কে ইতিবাচক চিন্তা আনতে পারা, একজন সাধারণ ক্রেতাকে নিত্যদিনের ক্রেতায় পরিণত করা, ক্রেতার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, নিজেকে অভিজ্ঞ করে তোলা, বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পুরস্কার দেওয়া, ব্যবসাকে সফলতম এবং জনগণের নজর কাড়ার জন্য ব্যবসায় পর্যাপ্ত সময় দেওয়া।

আসুন, একবার উদ্যোগ নিয়ে দেখুন। সর্বাত্মক চেষ্টা করুন। নিশ্চয়ই সফলতা আসবে। আপনি হবেন আপনার নিজের প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার।

লেখিকা : সফটওয়্যার ডেভেলপার


সূত্র : অর্থনীতি প্রতিদিন

হাতে নেই কাজ!


সৈয়দ আখতারুজ্জামান

আপনি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বা অধিকর্তা যা-ই হোন না কেন, ভালো করে লক্ষ করুন- অফিসের সবাই কি কাজ করছেন? আসলে কেউ কেউ কাজের চাপে নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন না। আবার কেউ কাজের অভাবে ফেসবুক ঘেটে সময় কাটাচ্ছেন। কেন এমন হচ্ছে? এমন  অবস্থায় আপনি পড়লে কী করবেন? রইল দশ সমাধান।

এক.
হাতে কাজ নেই! আসলে কাজ আছে, আপনি খুঁজে পাচ্ছেন না বা সাময়িক পরিস্থিতিতে বুঝতে পারছেন না। আবার মনে পড়লেই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন। এই ধরুন, নিজের এলোমেলো ডেস্ক বা নথিপত্র গোছানোও তো একটা বড় কাজ।

দুই.
আপনাকে একটু সময় নিয়ে ভাবতে হবে অথবা পরিকল্পনা করতে হবে। এই পরিকল্পনা খুব সহজ হবে, যদি কাজগুলোর একটা তালিকা থাকে। কাজের তালিকা তৈরি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ গুণের একটি। সুতরাং কাজের তালিকা তৈরি করা শুরু করুন। ছোট, বড়, মাঝারি- সব ধরনের কাজ।

তিন.
কাজের তালিকা তৈরি করার মতো একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার পর এই কাজগুলো সাজানো দরকার। কোন কাজটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, কোন কাজটি এখন না করলেও চলবে, কোন কাজটি এড়িয়ে যাওয়া যায় ইত্যাদি নানা রকম বিবেচনায় কাজগুলোকে ক্রমান্বয়ে সাজাতে পারতে হবে। ফলে কাজের এই গোছানো তালিকা থাকার পরও আপনার কর্মহীন হওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে যাবে।

চার.
এমনকি আপনার হাতে যখন কাজ থাকে না, তখন কাজ খোঁজাও একটা কাজ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন আগামীকাল বা আগামী সপ্তাহে যে কাজগুলো করতে হবে, তার তালিকা করাও তো একটা বড় কাজ। এর জন্য শুধু প্রয়োজন আপনার সচেতনতা আর সদিচ্ছা।

পাঁচ.
কাজ খুঁজতে জানাও একটা বড় যোগ্যতা। এই যোগ্যতা না থাকলে ভালো দলনেতা বা বস হওয়া খুবই কঠিন। দলকে কর্মরত রাখা সহজ কাজ নয়। দক্ষ দল নিমেষে কাজ শেষ করে দলনেতার দিকে মুখ তুলে তাকায়। দলনেতার হাতে তখন কাজ না থাকলে দল ঝিমিয়ে পড়বে। সুতরাং যখন দেখবেন হাতে কাজ নেই, তখনই কাজের নতুন তালিকা তৈরিতে লেগে যাবেন। শিখতে হবে শূন্য আর ঝিমিয়ে পড়া পরিস্থিতিকে কিভাবে কর্মকাণ্ডে সতেজ করা যায়।

আপনারা পড়ছেন, হাতে নেই কাজ!

ছয়.
অনেক ছোট ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে, যা সহজে চোখে পড়ে না। যেমন অফিসের স্বার্থেই বহু দিন কথা হয় না এমন কারো সঙ্গে কথা বলে আবার সম্পর্কটাকে ঝালাই করাও একটা বড় কাজ। আবার আপনার হাতে কাজ নেই, কিন্তু আপনার পাশের সহকর্মীটি হয়তো কাজের চাপে পিষ্ট হচ্ছে। তাকে সাহায্য করাও তো আপনার কাজ, নইলে আর সহকর্মীর সহমর্মী কী করে হবেন? এমন হাজারো কাজ করার আছে। শুধু কাজ করার উদ্যমটুকু চাই।

সাত.
অনেক কাজ আছে, যা ঢাকঢোল পিটিয়ে হয় না। নিভৃতে এগিয়ে চলে। এক সময় শেষও হয়ে যায়। যেমন আপনার অথবা আপনার বিভাগের কী কী সমস্যা আছে, সমস্যাগুলো কিভাবে সমাধান করা যায় তার তালিকা করে, পরামর্শ লিখে আপনার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করতে পারেন। প্রমাণ করতে পারেন, আপনি গতানুগতিক কাজের বাইরেও আপনার দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন।

আট.
আপনার হাতে কাজ নেই, আপনার বসকে জানান। তিনি হয়তো কোনো অসমাপ্ত কাজ নিয়ে ভাবছেন, তাঁকে সাহায্য করুন। এতে যেমন আপনার দায়িত্বপরায়ণতার প্রমাণ হবে, তেমনি আপনাকেও কর্মহীন হয়ে থাকতে হবে না।

নয়.
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ দিক লক্ষ করুন। আপনার দক্ষতার উন্নয়ন ছাড়া আপনার পেশাগত উন্নতি কি সম্ভব? অথচ আমরা সবাই এতটাই অফিসে দৈনন্দিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি যে নিজের দক্ষতা বাড়ানো কিংবা অর্জিত দক্ষতা ধরে রাখার জন্য করণীয় কাজগুলো করার ফুরসত পাই না। অর্জিত দক্ষতা ধরে রাখা কত কঠিন যিনি হারিয়েছেন তিনিই জানেন। ফলে যখন হাতে কাজ নেই তখন আপনার পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে কিছু কাজ করুন। বই পড়ুন, কিছু লিখুন, কিছু চর্চা করুন, প্রেজেন্টেশন রিহার্সাল করুন, সেলস কলের রোল প্লে করুন, বিগত মাসিক বা বার্ষিক প্রতিবেদনগুলো পড়ুন, পেশাসংক্রান্ত আইনের বই পড়ুন, এমনি অনেক কাজ আপনি করতে পারেন, যদি আগ্রহ হারিয়ে না ফেলেন।

দশ.
এত কিছু বলার পরও শেষ কথা বলে কিছু থেকে যায়। সব সময় কাজ করতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। কিছু কিছু সময় থাকে যখন চিন্তামগ্ন থাকাই কাজ, ভাবুন আপনার কাজ, অতীত, ভবিষ্যৎ, সহকর্মী ইত্যাদি নিয়ে। এক কাপ চা পান করুন। একটু বিশ্রাম করুন, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলুন। চট করে প্রিয় কাউকে একটু ফোন করে নিন, বাসার খোঁজ নিন। এও তো কাজের অঙ্গ, যা আপনাকে নিশ্চিন্ত করে, স্বস্তি দেয় এবং পরবর্তী কাজের জন্য প্রস্তুত করে তোলে!

সূত্র : কালের কণ্ঠ

ব্যবসা আরম্ভ করতে চাইলে (উদ্যোক্তা উন্নয়ন)


উদ্যোক্তারা প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারনত কিছু ভুল করে থাকে, যা সহজে শোধরান যায় না অথবা অনেক বড় মাশুল দিতে হয়। এমনকি ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যায়। যেমনঃ
• নির্দিষ্ট কোন ব্যাবসায় দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও সেই ব্যবসা শুরু করা
• ব্যবসা শুরুর আগে বাজেট বা পরিকল্পনা না করা
• বাজার যাচাই না করেই আন্দাজে চাহিদা, বিক্রয়মূল্য ইত্যাদি হিসাব করা
• ব্যবসা শুরুর আগেই লাভ হিসাব করে অহেতুক খরচ করা
• অংশীদারদের মধ্যে সম্পর্ক স্পষ্ট না করা
• ব্যবসার পণ্য, স্থান, কর্মী নির্ধারণে (ব্যবসা ব্যতিত) অন্য কোন ইস্যু বিবেচনা করা

ব্যবসা পরিচালনার সময় উদ্যোক্তারা যে ভুলগুলো করে বা করতে পারেঃ
• ব্যক্তিগত সম্পর্কর সাথে ব্যাবসায়িক সম্পর্ক গুলিয়ে ফেলা
• ব্যবসায় পর্যাপ্ত সময় না দেয়া
• হিসাব পত্র ঠিক না রাখা
• যথেষ্ট চিন্তা ভাবনা ছাড়া (কারো প্ররোচনায় বা অন্য কাউকে দেখে) ব্যবসার পণ্য, উদ্দেশ্য ইত্যাদি পরিবর্তন করা।

আপনারা পড়ছেন, ব্যবসা আরম্ভ করতে চাইলে (উদ্যোক্তা উন্নয়ন)

নতুন উদ্যোক্তা কয়েক প্রকার ব্যবসায় প্রবেশ করতে পারে। যেমনঃ
• শিক্ষা, যোগ্যতা বা দক্ষতা উদ্ভুত (যেমন, বুয়েটের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার সফটওয়্যার ব্যবসা শুরু করতে পারে)
• অভিজ্ঞতা উদ্ভুত (যেমন গার্মেন্টসের প্রডাকশন ম্যানেজার গার্মেন্টস কারখানা চালু করতে পারে)
• সম্পদ উদ্ভুত (গ্রামে উত্তারাধিকার সুত্রে পাওয়া কিছু পুকুরে মাছ চাষ শুরু করতে পারে)
• বাজার সংশ্লিষ্ট (গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির প্রাক্তন কোন কর্মচারী উক্ত গার্মেন্টসে কার্টুন সরবরাহ শুরু করতে পারে)
• সরবরাহ উদ্ভুত (যশোরের কোন তরুন ফুল উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে ফুল কিনে বিদেশে রপ্তানি করতে পারে)

তথ্যসূত্র : ওয়েবসাইট অবলম্বনে।

উদ্যোক্তার সফল না হওয়ার দশ কারন


সকল উদ্যোক্তাই সফল হতে পারেন না। আবার যারা সফল হন তাঁরাও যে খুব সহজে সফল হয়েছেন- তা নয়। অনেক পরিশ্রম আর মেধার সমন্বয়ে উদ্যোক্তা তার সফলতার পথ খুঁজে নেন। সফল হওয়ার সড়কে নেমে অনেকেই পিছনে পরে যান। অন্য একজন যখন সফলতার সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছেন তখন কেন কিছু উদ্যোক্তা সফলতার পথে এগুতে পারছেন না? এর রয়েছে কিছু কারন।

লিখিত পরিকল্পনা না থাকা:
আপনি আসলে কোথায় পৌঁছতে চান তার একটি লিখিত পরিকল্পনা থাকতে হবে। অনেকেই মনে মনে করেন ব্যবসা তো শুরু করেছি দেখি কি হয়। এমন উদাসীন থাকলে উদ্যোক্তা সফল হতে পারে না। একজন উদ্যোক্তা কি করতে চান, কিভাবে করতে চান, কত সময়ের মধ্যে করতে চান, কোথায় পৌঁছতে চান- এই সমস্ত বিষয়গুলো লিখিত আকারে থাকলে পথ খুঁজে নেওয়া সহজ হয়।

সঠিক ব্যবসা মডেল না থাকা:
একজন নতুন উদ্যোক্তা অবশ্যই পুরাতনের তুলনায় কম জানেন। তাকে নানান বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে শিখতে হয়। এ ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ কোন সফল উদ্যোক্তাকে অনুসরণ করতে পারেন বা বিশেষ কোন সফল প্রতিষ্ঠানকে তার মডেল হিসেবে বিবেচনা করে এগিয়ে যেতে পারেন। উদ্যোক্তা যে বিজনেস মডেলটি অনুসরণ করছেন তা অনুসরণ করে অন্যরা সফল হয়েছেন কি না তা খতিয়ে দেখুন।

আইডিয়া নয়, দরকার সুযোগ সৃষ্টি:
বিভিন্ন ব্যবসায়িক সুযোগ সুবিধা তৈরী না হওয়ার কারনে অনেক উদ্যোক্তাই ঝরে পড়েন। দেখা যায় ভালো আইডিয়া কিংবা ভালো পণ্য থাকা সত্ত্বেও অনেক ব্যবসায়ী সফল হতে পারছেন না। ব্যবসায়ে সুযোগ তৈরি হওয়ার একটা ব্যাপার আছে আবার সুযোগ তৈরি করারও একটা ব্যাপার আছে। একজন ভালো উদ্যোক্তা জানেন কিভাবে ব্যবসার সুযোগ তৈরী করে নিতে হবে।

পরিচালনায় ব্যথর্তা:
পরিচালনায় অপটুতা উদ্যোক্তার ব্যর্থতার কারন হতে পারে। ব্যবসায়িক মনোভাব এবং ব্যবসায়ে পরিপক্বতা অর্জন খুব জরুরী বিষয়। অনেকেরই প্রচুর বিনিয়োগ করার সামর্থ্য আছে কিন্তু তা সঠিকভাবে পরিচালনা করার সামর্থ্য নেই।

তীব্র প্রতিযোগিতা:
ব্যবসার জগতে ধাবমান আরো অনেক উদ্যোক্তার সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হয়। আর বর্তমান সময়ে এই প্রতিযোগিতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সে ক্ষেত্রে একজন নতুন উদ্যোক্তাকে প্রথমেই এসে হিমসিম খেতে হয়। এ জন্য মার্কেটিংয়ের আগে একজন উদ্যোক্তার মার্কেটপ্লেস সর্ম্পকে সম্যক ধারণা নিয়ে নিজস্ব মার্কেটিং পলিসি নির্ধারণ করে এগিয়ে যাওয়া উচিত। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মনোবল না থাকাও উদ্যোক্তার অসফলতার কারন।

কৌশলী দৃষ্টিভঙ্গির অভাব:
ব্যবসায়ে অনেক কৌশল অবলম্বন করতে হয়। একটি মাত্র সিদ্ধান্তই একটি ব্যবসাকে সর্বোচ্চ সফলতায় নিয়ে যেতে পারে আবার ব্যর্থতায় তলিয়ে করতে পারে। সে ক্ষেত্রে উদ্যোক্তার ব্যবসায়ে কৌশলী হওয়ার বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কৌশলী দৃষ্টিভঙ্গি না থাকলে ব্যবসার উন্নতি সম্ভব না।

দরকার স্বপ্নবাজ সহকর্মী:
উদ্যোক্তার সহকর্মীরা হবেন উদ্যোক্তার মতই স্বপ্নবাজ। আর এজন্যই ব্যবসায়ে সহকর্মী নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অভিজ্ঞ, পরিশ্রমী, সৎ সহযোগি নির্বাচন না করলে ব্যবসা স্থিমিত হয়ে পড়ে। শুধুমাত্র চাকুরীজীবী দিয়ে উদ্যোগ সফল হয় না।



যথেষ্ঠ মার্কেটিং জ্ঞান না থাকা:
সম্ভাব্য গ্রাহক কারা-বিষয়টি বুঝতে হবে। উদ্যোক্তার যথেষ্ঠ মার্কেটিং জ্ঞান না থাকলে মার্কেট গবেষণা সম্ভব নয়। বর্তমান বাজারে মার্কেট গবেষণা না করে, সিদ্ধান্ত নিলে অনেক সময় তা সফল হয়না।

ধৈর্যচ্যুত হওয়া:
হোঁচট খেলেই থামতে হবে- তা নয়। উদ্যোক্তা মাত্রই সে উদ্যমী এবং প্রথম অবস্থায় তাকে নানান অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হবে। কিন্তু দেখা যায় অনেকেই প্রাথমিক ভাবে কোন হোঁচট খাওয়ার পর মনোবল হারিয়ে ব্যবসায়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। অথচ এই হোঁচটই তার জন্য ছিল শিক্ষণীয়। ধৈর্য সহকারে প্রতিটি ব্যর্থতাকে কাটিয়ে সাফল্যের পথে হাঁটাই একজন প্রকৃত উদ্যোক্তার পরিচয়।

উদ্যোম হারিয়ে ফেলা:
অনেকেই শুরু করেন আট ঘাট বেঁধে। কিন্তু মাঝ পথে গিয়ে আর এই উদ্যোম থাকেনা। মোটামুটি একধরনের উদাসীন হয়ে যান। আর উদ্যোম হারিয়ে ফেললে সফলতা আর আপনার হাতে ধরা দেবেনা।

তথ্যসূত্র : ওয়েবসাইট থেকে।

ভোক্তারাই সবচেয়ে বড় বিচারক : এম আনিস উদ দৌলা


এম আনিস উদ দৌলা এসিআই গ্রুপের চেয়ারম্যান। ১৯৮৭ সালে ব্রিটেনের বহুজাতিক কোম্পানি আইসিআই গ্রুপের বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন। এসিআই প্রতিষ্ঠা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালন করেছেন বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী ফোরামের। সফল এ উদ্যোক্তা তিন মেয়াদ মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট ও চারবার বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশ ক্রপ প্রটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও ছিলেন তিনি। বর্তমানে বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। এসিআইয়ের বেড়ে ওঠা, চ্যালেঞ্জ, ব্যবসায় নৈতিকতার চর্চা, পণ্যের মান, ভোক্তা আস্থা অর্জনসহ নানা বিষয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন তিনি।

প্রশ্নঃ বহুজাতিক কোম্পানির নির্বাহী থেকে হয়েছেন দেশের অন্যতম শীর্ষ উদ্যোক্তা। কখন কীভাবে ব্যবসায় যুক্ত হলেন?
এম আনিস উদ দৌলাঃ উদ্যোক্তা হওয়ার শুরুটা গল্পের মতো। আগে বহুজাতিক কোম্পানির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবেই কর্মরত ছিলাম। এসিআই শুরুর আগে ব্রিটিশ অক্সিজেন গ্রুপে পাকিস্তান, কেনিয়া ও বাংলাদেশে দীর্ঘ ২৭ বছর বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করি। এর মধ্যে বাংলাদেশ অক্সিজেন লিমিটেডে ১২ বছর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছি। এরপর ১৯৮৭ সালে বাংলাদেশে আইসিআইয়ের তিনটি কোম্পানির গ্রুপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক হই, যে কোম্পানিটি ১৯২৫ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রসায়ন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬৮ সালে জীবন রক্ষাকারী ওষুধসামগ্রী উত্পাদনের লক্ষে নারায়ণগঞ্জে কারখানা নির্মাণ শুরু করে, বাংলাদেশে যার আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা ১৯৭৩ সালে। তবে কোম্পানিটি এ দেশে লোকসান করছিল। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব দেয়া হলে অল্প সময়ের মধ্যে একে লাভজনক করে তুলি। এরপর প্রতিষ্ঠানটির মালিকানা আমার কাছে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় আইসিআই বোর্ড। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৯২ সালে আইসিআই লিমিটেড স্থানীয় ব্যবস্থাপনার কাছে হস্তান্তরের মাধ্যমে অ্যাডভান্সড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (এসিআই) লিমিটেড নামকরণ নিয়ে যাত্রা করে। তবে আইসিআই বহুজাতিক কোম্পানি হলেও বাংলাদেশে এর কার্যক্রমে তেমন চমক ছিল না। কোম্পানিটিকে লাভজনক করতে আমাকে আনা হয়েছিল। এক্ষেত্রে আমি সফল হয়েছি। তবে সময় লেগেছিল চার বছর। পঞ্চম বছরে এসে কোম্পানিটি সিদ্ধান্ত নিল, ছোট দেশে তারা আর কার্যক্রম পরিচালনা করবে না। ১৯৯২ সালে তারা প্রস্তাব দিল— কোম্পানিটি আমি কিনে নেব কিনা। বললাম, আমার তো এত অর্থ নেই। তারা বলল, অর্থ লাগবে না। আপনি আয় অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ করবেন। তবে আমাকে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে এবং আইসিআইয়ের সুনাম অটুট রাখতে হবে। তাদের শর্তাবলি আমার ধারণার সঙ্গে মিলে গেল। কর্মীরা যদি সুখী না হন বা কোম্পানির সমৃদ্ধিতে অংশ নিতে না পারেন, তাহলে কাজের পরিবেশ সুন্দর হয় না। অন্যদিকে আমার প্যাশনও ছিল পণ্যের গুণগতমান নিশ্চিত করা। আইসিআই ছিল মানসম্পন্ন কোম্পানি। ব্যবসায় যদি সততা ও কাউকে বঞ্চিত করার প্রবণতা না থাকে, তাহলে আপনি অবশ্যই মানসম্পন্ন পণ্য উত্পাদনে সক্ষম হবেন এবং ব্যবসাটি লাভজনক হবে। কোম্পানিটি আমি পেয়েছি ঘটনাক্রমে। তারা বাংলাদেশে ব্যবসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে কর্মী থেকে আমি পরিণত হলাম এর স্বত্বাধিকারীতে। এমন সুযোগ আরো অনেকে পেতে পারতেন। তবে দেখার বিষয় হলো— এক. যে উদ্দেশ্যে আমি কোম্পানিটি নিয়েছিলাম, তা সমুন্নত রাখতে পেরেছি কিনা। দুই. সততার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে টিকে থাকা। এসব বিষয়ে আমি সবসময় ছিলাম সচেতন।

প্রশ্নঃ উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার শুরুর ব্যবসা কী কী?
এম আনিস উদ দৌলাঃ শুরুতে ঔষধ ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পের রাসায়নিক তৈরি নিয়ে যাত্রা করলেও এখন এসিআই একটি পরিপূর্ণ গ্রুপ হিসেবে পরিচালনা করা হচ্ছে। ওষুধ, ভোগ্যপণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত ও প্রযুক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছি।
ফার্মাসিউটিক্যালস কিংবা এগ্রোকেমিক্যালসে ব্যবসা সীমাবদ্ধ রাখিনি। কৃষকের প্রচুর চাহিদার কথা বিবেচনায় নিয়ে ফার্টিলাইজারে বিনিয়োগ করি। এছাড়া মাটির পুষ্টিরক্ষা, এগ্রোনোমিক প্র্যাকটিস ট্রেনিং, সময়মতো ফসল বাজারজাতকরণ নানামুখী চাহিদা রয়েছে। এরপর বাজার সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসাকে নানামুখী খাতে সম্প্রসারণ করি। সব সময়ই পণ্যের গুণগত মান বজায় রেখে ক্রেতা সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিয়েছি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা। সব সময়ই আমাদের ভাবনাচিন্তায় এটি ছিল এবং সেখান থেকে এসিআই সামান্যতম বিচ্যুত হয়নি।

আপনারা পড়ছেন, ভোক্তারাই সবচেয়ে বড় বিচারক

প্রশ্নঃ চেয়ারম্যান হিসেবে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
এম আনিস উদ দৌলাঃ এসিআই শুরুর দিকে মূলত রাসায়নিক ও ওষুধনির্ভর ছিল। সেগুলো সফল ব্যবসা। এখন ব্যবসাকে নানামুখী খাতে সম্প্রসারণ করছি। আর তা করছি পাঁচটি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে। পণ্যের মান, গ্রাহককেন্দ্রিকতা, সততা, স্বচ্ছতা, ক্রমাগত উন্নতি ও উদ্ভাবন। বর্তমানে ওষুধ খাতে আমরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সমর্থ হয়েছি। এ পর্যন্ত ৫০০টিরও বেশি ওষুধ বাজারজাত করেছে এসিআই ফার্মাসিউটিক্যালস। তাছাড়া বাংলাদেশে আইএসও ৯০০১ সনদপ্রাপ্ত প্রথম প্রতিষ্ঠান আমরা। দেশের ওষুধের চাহিদা মেটানোর পরও শ্রীলংকা, ইয়েমেন, মিয়ানমার, ভিয়েতনামসহ মোট ৩৫টি দেশে রফতানি করছি। পাশাপাশি এশিয়া, আফ্রিকা ও মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বাজার তৈরিরও চেষ্টা চালাচ্ছি। কনজিউমার ব্র্যান্ড হিসেবে এসিআইয়ের কয়েকটি পণ্য সুনাম কুড়িয়েছে। এছাড়া গৃহস্থালিতে প্রয়োজনীয় কিছু সামগ্রী জনপ্রিয় হচ্ছে। অন্যদিকে কৃষিপ্রধান দেশের কৃষকদের চাষাবাদ প্রক্রিয়া আরো সহজ করে তোলা প্রতিষ্ঠানটির এগ্রোবিজনেস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শস্য সুরক্ষায় কীটনাশক তৈরি, উন্নত মানের সার, বিভিন্ন কৃষি মেশিনারি সরবরাহ করে থাকে এ প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি পশুস্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভ্যাকসিন, ওষুধ ইত্যাদিও বাজারজাত করছে। উন্নত মানের বীজ সরবরাহের লক্ষ্য নিয়ে ২০০৮ সালে এসিআই পুরোপুরি এ ব্যবসায় নামে। অন্যদিকে ক্রেতাদের পূর্ণ সন্তুষ্টি রয়েছে আমাদের রিটেইল চেইন ‘স্বপ্ন’-এর ওপর। স্বপ্ন থেকে পণ্য বিক্রি বাড়ছে, যার অর্থ ক্রেতাদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে।
সব মিলিয়ে উচ্চপ্রযুক্তি ও ক্রেতা সন্তুষ্টি রক্ষায় উদ্যোক্তা হিসেবে সব সময়ই চেষ্টা করেছি। সুনিয়ন্ত্রিত পরিকল্পনা এবং উন্নত মানের কারণে এসিআইয়ের তৈরিকৃত অধিকাংশ পণ্যই আজ দেশের বাজারে জনপ্রিয়। যেটি ধরে রাখতে আজীবন চেষ্টা করে যাব।

প্রশ্নঃ সম্ভাবনাময় ব্যবসা হিসেবে কোন খাতে জোর দিচ্ছেন?
এম আনিস উদ দৌলাঃ কৃষিতে কাজ শুরুর পর দেখলাম, একই কৃষকের কাছে যেতে হচ্ছে সার, বীজ ও এগ্রোকেমিক্যালসের জন্য। তখন ভাবলাম, আমরা তো কৃষির সবকিছুই বুঝি। আমরা কেন তিনটিই একসঙ্গে দিতে পারব না? আমরা কৃষির সমন্বিতকরণের ব্যবস্থা নিলাম। জমি চাষের জন্য ট্রাক্টর বিক্রি শুরু করলাম। এসিআই মোটরস সেসব বিক্রি করে। চীন ও ভারত থেকে আমদানি করে এগুলো বাজারজাত করছি আমরা। তাতে কৃষকের চাহিদা ভালোই পূরণ হচ্ছে। এগুলো কিনে গ্রামের কেউ কেউ স্বাবলম্বীও হচ্ছেন। বেকাররা কৃষি যন্ত্রপাতি কিনে ভাড়া দিচ্ছেন কৃষককে। তাতে লাভ হচ্ছে দুজনারই। বেকারের জীবিকা হচ্ছে, অন্যদিকে স্বল্প সময়ে জমি চাষ করতে পারছেন কৃষক। সারা দেশে আমাদের ১২টি সার্ভিস সেন্টার আছে। এর মাধ্যমে সার্ভিস অরিয়েন্টেড ব্যবসাও করতে পারছি আমরা। এসবই আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত। এগুলো আমরা কাজে লাগাতে পারব অন্যত্রও। এভাবে সমন্বিতকরণের কাজটি করলাম। এখন ধান ও সবজির হাইব্রিড বীজ উত্পাদন করছে এসিআই। সর্বশেষ ভোগ্যপণ্য বিপণনে গেলাম।
আমাদের দেশে আগে লবণ ছিল কাদাযুক্ত। আমরা সেটিকে ফিল্টার করে তাতে সঠিক মাত্রায় আয়োডিন দিয়ে প্রথম পিওর সল্ট বাজারজাত করলাম। এটা আমাদের গৌরবও বটে। এরপর ভাবলাম গৃহিণীদের জন্য কিচেন বাস্কেটের সব প্রয়োজন মেটাব। আটা-ময়দা তৈরি শুরু করলাম। প্রতিদিন ৩০০ টন প্যাকেট জাত আটা উত্পাদন করছি। আমাদের কারখানা পরিপূর্ণ ক্যাপাসিটি অনুযায়ী চলে। এটা হয়েছে কেবল আমাদের ব্র্যান্ডের প্রতি মানুষের আস্থার কারণে। এরপর চিনি, সয়াবিন ও সরিষার তেল, গুঁড়া মসলা বিক্রি শুরু করে এসিআই।
কীভাবে মানুষের কেনাকাটার মান উন্নয়ন করা যায়, তাও চিন্তায় ছিল আমাদের। মানুষ কাঁচাবাজারে যাবে নাকি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মানসম্পন্ন পণ্য কিনবে? আমরা মধ্যম আকারের আউটলেট বানালাম। এ কনসেপ্টে আমরা প্রায় ৪৫টি আউটলেট করেছি। এগুলোর সিংহভাগই মূলত ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে। এখন আমরা চেইন রিটেইলিংয়ের দক্ষতা বাড়াচ্ছি। বাংলাদেশের মধ্যবিত্তশ্রেণীর মাঝে যেসব পরিবারের সদস্য বিদেশে থাকেন, তারা আর্থিক দিক থেকে বেশ সচ্ছল। তারা সাধারণত বিদ্যমান কাঁচাবাজারে যেতে অনিচ্ছুক। তাদের জন্য স্বপ্নে বাজার করার সুযোগ করে দেয়া হলো। এটা ভালোই চলছে। ধীরে ধীরে পণ্যের সংখ্যা ও আউটলেট বাড়াচ্ছি। আমরা প্লাস্টিক প্যাকেজিং উৎপাদন ও মার্কেটিং করি। একটা প্লাস্টিক ফ্যাক্টরি আমাদের আছে। এ দেশের ছোট-বড় বহু কোম্পানিকে প্লাস্টিক মোড়ক সরবরাহ করি। খাবারের মধ্যে আচার, চকোলেট প্রভৃতি তৈরি করছি। এগুলোকে আমরা বলি ফান ব্র্যান্ড। এছাড়া পোলট্রি ব্যবসা আছে গোদরেজের সঙ্গে। এটি করা হয়েছে যৌথ উদ্যোগে। টেটলির সঙ্গে আমাদের চায়ের ব্যবসা রয়েছে। ডাবরের সঙ্গেও যৌথ উদ্যোগ রয়েছে আমাদের। আরো কিছু যৌথ উদ্যোগে ব্যবসা করার ইচ্ছা রয়েছে। বিশ্বের এক নম্বর পেইন্ট ব্র্যান্ড এক্সো নোবেলের সঙ্গেও আমরা চুক্তি সম্পাদন করেছি।

প্রশ্নঃ ওষুধ ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতের মধ্যে কোনটিকে প্রাধান্য দিচ্ছেন?
এম আনিস উদ দৌলাঃ ওষুধ খাতে এখনো আমাদের বিনিয়োগ বেশি। এ ব্যবসা খুবই লাভজনক ও সম্প্রসারণশীল। রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি স্থিতিশীল ব্যবসা। আর ভলিউমের দিক থেকে দেখলে বলব, রিটেইল চেইনের কথা। এটা বিরাট ব্যবসা, অনেক সম্ভাবনা রয়েছে এ খাতে।
তবে কোনো ব্যবসাই সহজ নয়। মাঠ ফাঁকা নয়, সবখানেই প্রতিযোগিতা রয়েছে। টিকে থাকতে হলে তুলনামূলক সুবিধা ব্যবহার করে সুযোগ তৈরি করে নিতে হবে। যে ব্যবসাই হোক, একটি অবস্থানে যেতে হলে অন্যদের সঙ্গে পার্থক্য তৈরি করতে হবে, সেটি হতে পারে মূল্যবোধের মাধ্যমে। আমরা মূলবোধকে প্রাধান্য দিই। মানুষ যদি বিশুদ্ধতা অথবা সঠিক দাম নির্ধারণের কারণে আমাদের ব্র্যান্ডকে চিহ্নিত করতে পারে, তাহলে ব্যবসায় সফলতা আসবে। আমরা যা কিছু করি, মানুষ সেটাকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করে। এটা একটা বড় পাওয়া। অন্যদের এটি সৃষ্টি করতে অনেক সময় লাগবে। যেকোনো পণ্য আমি বাজারে দিই না কেন, মানুষ সেটাকে স্বভাবতই গ্রহণ করে। এটা তারা করে এসিআই কোম্পানির প্রতি বিশ্বাস ও আস্থার কারণে। এজন্যই ফার্মাসিউটিক্যাল সামগ্রী বাজারজাতকরণে আমাদের প্রতিষ্ঠান শীর্ষ তালিকায় স্থান করে নিচ্ছে। কনজিউমার দ্রব্যগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটি পণ্য প্রথম স্থানে রয়েছে। এর মধ্যে লবণ, আটা, মশার কয়েল, অ্যারোসল ও স্যাভলন বাজারজাতে আমাদের প্রতিষ্ঠান প্রথম সারিতে। এর পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে গুণগত মান বজায় রাখা। এছাড়া যৌথ বিনিয়োগে উত্পাদন করা কিছু পণ্যের বাজার সম্প্রসারণের চেষ্টা করছি। এর মধ্যে বিখ্যাত টেটলি চা, ডাবরের পণ্যসামগ্রী।

প্রশ্নঃ ব্র্যান্ডিং বা প্রচারণায় আপনাদের তেমন জোর নেই কেন?
এম আনিস উদ দৌলাঃ প্রচারণা করা হয় দুই উদ্দেশ্যে— ক্রেতা ও জনসাধারণের জন্য। এটা অনেক সময় অনেকের ইগো স্যাটিসফ্যাকশনের জন্য করা হয়। এটি কতটা ব্যয়সাশ্রয়ী, তা দেখা দরকার। আমরা সেভাবেই মিডিয়া বাছাই করি। ব্র্যান্ডিং করি পণ্যের গুণগত মান, কার্যকারিতা এবং সাশ্রয়ের প্রতি লক্ষ রেখে। মূল লক্ষ্য থাকে, যাতে ক্রেতার কাছে খবরটি পৌঁছায়। তারা যাতে এর সুফল পান। হয়তো সেজন্যই আমরা বিজ্ঞাপনের দিকে অতটা জোর দিইনি। ন্যায্যমূল্যে যদি মানসম্পন্ন পণ্য দিতে পারি, তাহলে আমাদের থামানো অসম্ভব। তাই আমরা যখন কোনো পণ্য নিয়ে কাজ শুরু করি, তখন অন্যরা সচেতন হয়ে যায়।

প্রশ্নঃ পণ্য বাজারজাতকরণে দেশ নাকি রফতানি বাজারকে প্রাধান্য দিচ্ছেন?
এম আনিস উদ দৌলাঃ দেশে আমাদের উত্পাদিত পণ্যের বিরাট বাজার রয়েছে। পণ্য বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে আমরা স্থানীয় বাজারের ওপর নজরও দিয়েছি। তবে স্বীকার করছি, রফতানির দিকে আরো নজর দেয়া উচিত ছিল। তবে এসিআই আগে দেশের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন করতে চায়। এর পরই কেবল বড় ধরনের রফতানিতে যেতে চায়। দেশের চাহিদা পূরণই আমাদের প্রাথমিক দায়িত্ব বলে মনে করি। এছাড়া কৃষিকে সহায়তা করাও আমাদের অন্যতম দায়িত্ব। তবে ভোগ্যপণ্যসহ ৩৫টি দেশে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য রফতানি হচ্ছে। এর বাজার সম্প্রসারণে সময় লাগে। চিকিত্সকদের অভ্যস্ত, পণ্যের নাম পরিচিতি এবং একই সঙ্গে বিশ্বস্ততা অর্জনের পরই বাজার গড়ে ওঠে। আমরা এ লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যের পাশাপাশি কিছু এগ্রোকেমিক্যালস মিয়ানমারে রফতানি হচ্ছে। সেখানে আমাদের এজেন্ট রয়েছে। তারা আমাদের ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য ও এগ্রোকেমিক্যালস বিক্রি করে। তারা বীজ নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। রফতানির অনেক সুযোগ রয়েছে। সেগুলো আমরা এখনো সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারিনি।
এজন্যই স্থানীয় বাজারের ওপর গুরুত্ব দিই। কারণ আমরা যে ভালো পণ্য উত্পাদন করি, সেটা আগে দেশের মানুষকেই দিতে চাই। দেশে কোম্পানির সুনাম ছড়িয়ে পড়ুক, সেটিই আমাদের পুরস্কার। রফতানি হয়তো লাভজনক, কিন্তু সেদিকে আমরা খুব একটা নজর দিইনি এখনো। সব দিকে একসঙ্গে সমান নজর দেয়া সম্ভবও নয়।

আপনারা পড়ছেন, ভোক্তারাই সবচেয়ে বড় বিচারক

প্রশ্নঃ শুরুর সময় ও এখনকার ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতার মধ্যে কী পার্থক্য লক্ষ করছেন?
এম আনিস উদ দৌলাঃ একজন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হিসেবে সব সময়ই অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। নানা ধরণের নিত্য-নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই ব্যবসা করতে হয়। চ্যালেঞ্জ কোনো সময়ই এক রকম থাকে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর পরিবর্তন হয়। এখনকার প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো— জ্বালানি জোগাড়, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা, উত্পাদন প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে বাজারের সঙ্গে তালমিলিয়ে টেকসই ব্যবস্থা প্রবর্তন প্রভৃতি। এক্ষেত্রে উত্পাদন খরচ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এর ধারাবাহিকতা রক্ষাও জরুরি। বিদ্যুত্-গ্যাস না থাকলে ডিজেল বা ফার্নেস অয়েল দিয়ে পণ্য উত্পাদন করতে হয়, এতে খরচ পড়ে বেশি। কিন্তু উত্পাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে সে খরচ উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীকে বহন করতে হয়। বাজারে পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন না ঘটে, সেদিকেই লক্ষ থাকে তাদের। সুনাম ধরে রাখতে লাভ-লোকসানের বিষয়টি বিবেচনায় না নিয়ে অনেক সময় উত্পাদনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় এটি করতে হয়। আগে রেগুলেটরি চ্যালেঞ্জ ছিল। এখন সেসব কমে গেছে। বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো প্রতিযোগিতা। এখন আমাদের ব্যবসাটা ঠিক চ্যালেঞ্জের জায়গায় এসেছে। আগে লাইসেন্স পেয়েই বাজার যাচাই না করেই পণ্য আমদানি করা যেত। কারণ সবই বিক্রি হয়ে যেত। এখন সে অবস্থা নেই। এখন পণ্য আনতেও অনুমতি নিতে হয়। আমদানি করা পণ্য অবিক্রিতও থেকে যায় অনেক সময়, দাম কমে যাওয়া ও নষ্ট হওয়ার শঙ্কাও থাকে। বড় চ্যালেঞ্জ হলো, ব্যবসায় ঠিকে থাকতে হলে প্রতিনিয়ত ভ্যালু অ্যাড করে যেতে হবে। যে কোম্পানি যত বেশি ভ্যালু অ্যাড করতে পারবে, বাজারে সে তত এগিয়ে যাবে।

প্রশ্নঃ পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা প্রসঙ্গে আপনার মূল্যায়ন কী?
এম আনিস উদ দৌলাঃ অবশ্যই তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু দেখবেন, মাঝে মধ্যে তারা পক্ষপাতিত্ব করে এবং তাদের যে কর্মকাণ্ড রয়েছে, তাতে গুণগতমান পুরোপুরি নিশ্চিত হয় না। যারা গুণগত মান সঠিকভাবে মেনে চলে না, সরকারি সংস্থাগুলো তাদের অনেকের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি। কারণ তারা সরকারি সংস্থাগুলোকে ‘ম্যানেজ’ করে, আমরা তা করি না। বাকবিতণ্ডা হলে অনেক সময় তারা অযৌক্তিকভাবে আমাদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। কিন্তু বলতে পারি, পণ্যে গুণগত মান ক্ষুণ্ন হয় এমন কিছু আমরা কখনই করি না।
মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান কারখানা পরিদর্শন করে পণ্য দেখে। তারা কিন্তু মান উন্নত করার চেষ্টা করে না। দুর্ভাগ্যবশত তারা পুলিশিং করে। প্রথম কোম্পানি হিসেবে আমরা আইএসও ৯০০১ ও আইএসও ১৪০০১— দুটি সার্টিফিকেট পেয়েছি। একটা পণ্যের মান ও অন্যটি পরিবেশের জন্য। কোয়ালিটির এটাই আমাদের গার্ডিয়ান। এ সিস্টেমই আমাদের সহায়তা করেছে— কোনো কর্মী পণ্যের মানের ব্যাপারে ছাড় দেবেন না। আর নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার আচরণও অনেক সময় অযৌক্তিক দেখা যায়। তবে আমরা তুষ্ট এটা ভেবে যে, যত ক্ষতিই হোক মানের ব্যাপারে আমরা কখনই ছাড় দিই না। প্রফিটের চেয়ে কোয়ালিটি আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্নঃ মানহীন কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করা উচিত কিনা?
এম আনিস উদ দৌলাঃ অবশ্যই তাদের নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। নিয়ন্ত্রণ দোকানে নয়, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে সেখানে, যেখানে তাদের পণ্য উত্পাদন হচ্ছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ প্রকাশ্যে আসে এক্সটর্শন করতে। ভেজাল ধরা যায় আমদানি পর্যায়ে ও ফ্যাক্টরিতে। এজন্য দোকানে আসার তো প্রয়োজন নেই।
তবে আশার কথা, আমাদের দেশের ক্রেতারা এখন যথেষ্ট সচেতন। পণ্যের মান সম্পর্কে তারা প্রতিনিয়ত যাচাই-বাছাই করছেন। তাছাড়া মানসম্পন্ন পণ্য বেশি দাম দিয়ে কিনতে রাজি আছেন তারা। এজন্য বড় কোম্পানিগুলো কোনো অসুবিধায় পড়েনি। পণ্যের মান ধরে রাখা খুবই ব্যয়বহুল ব্যাপার। সেটি আমরা ধরে রাখতে সচেষ্ট। প্রফিট কম হলেও আমাদের যে শক্তিশালী বিপণনব্যবস্থা রয়েছে, সেটিই এগিয়ে নিয়ে যাবে।

প্রশ্নঃ কৃষিতে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণকে কীভাবে দেখেন?
এম আনিস উদ দৌলাঃ এ খাতে দুটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। সরকার চায় বেসরকারি খাত এগিয়ে আসুক। কিন্তু তাদের বাস্তবায়ন পরিকল্পনা সামান্যই। এছাড়া বেসরকারি খাতকে এগিয়ে নিতে নীতিসহায়তাও পর্যাপ্ত নয়। ফলে প্রতিনিয়ত বাধার মুখে পড়ছেন দেশের উদ্যোক্তারা। এছাড়া উদ্যোক্তা পর্যায়েও রয়েছে উদ্ভট কিছু সমস্যা। বর্তমানে উদ্যোক্তারা স্বল্প সময়ে লাভবান হতে চান। এজন্য কৃষককে বঞ্চিত করতে দেখা যায় তাদের। বাধ্য হয়ে কৃষকরা পণ্য বিক্রি করে লোকসানে পড়েন। ব্যবসায়ীরা এ সুযোগই নেন। কৃষিপণ্য বাজারজাত করায় মধ্যস্বত্বভোগীরা এখনো বড় বাধা। এ ব্যাপারে কিছু নিয়ম বা আইন করা উচিত। কৃষককে নগদ অর্থ দিয়ে সাহায্য করার ক্ষেত্রে বৈষম্য করা হয়, যারা বিত্তশালী তারাই এটি পেয়ে থাকেন। এতে বাজারে প্রভাব পড়ে। তাই উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে কৃষকসহ সব পর্যায়েই সমন্বিত নীতি ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার।
সর্বাগ্রে কৃষকদের পণ্য সংরক্ষণের ক্ষমতা বাড়ানো উচিত। ফসল যখন ওঠে তখন পরবর্তী ফসলের জন্য কৃষকদের অর্থের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এ সময় তাদেরকে কীভাবে সহায়তা করা যায়? সরকারিভাবে ফসল ক্রয় (গভর্নমেন্ট পার্চেজিং) মৌসুমের শুরুতেই হওয়া উচিত। এছাড়া সমসাময়িক চুক্তিভিত্তিক কৃষি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কৃষকদের ভালোমতো ইনপুট ও সহায়তা দিলে তারা ভালো রিটার্ন দেবেন। এটি উইন-উইন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে।
ব্যবসায়ীদের আত্মনিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। অতিমুনাফা লাভের প্রবণতা পরিহার করতে হবে। কেননা অতি মুনাফা লাভ করতে গেলে কৃষককে শোষণ করতে হয়। এজন্য কৃষকের যৌক্তিক দাম নিশ্চিতে ক্রয়ের ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণ জরুরি। এজন্য যদি নতুন কোনো আইন প্রণয়ন করা হয়, আমরা তাতে সহযোগিতা করব। তাছাড়া কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পে উদ্যোক্তাদের অবশ্যই ‘ইকোনমিকস অব স্কেল’ মেনে উত্পাদনে যেতে হবে। আর মান এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সর্বদা ভোক্তা সন্তুষ্টি বজায় রেখে ব্যবসা পরিচালনা করাই শ্রেয়।

প্রশ্নঃ কৃষি গবেষণায় কতুটুক জোর দিচ্ছেন?
এম আনিস উদ দৌলাঃ কৃষি খাতে উন্নত মানের বীজের জন্য আমাদের একটি আধুনিক গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। সেখানে নতুন প্রজাতির বীজ উদ্ভাবন করেছি। গ্রীষ্মকালে টমেটো, বাঁধাকপি ইত্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। হাইব্রিড সবজির ফলন বেশি হচ্ছে। সবজি বা ফসলের বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনের জন্য দেশেই অত্যাধুনিক গবেষণাগার রয়েছে। সেখানে ব্রিডিং ও কোয়ালিটি দেখা হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে আমাদের গবেষণা হচ্ছে বগুড়ায়। সরকারের গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্লটে প্রায় ৮ একর জমিতে আমাদের বীজের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। যেগুলো টিকে যায় সেগুলোই আমরা বিক্রি করি। আমরা নতুন জাতের সবজি উদ্ভাবন করেছি। যেমন— ছোটো জাতের মিষ্টি কুমড়া বের করেছি। বড় জাতের কুমড়ার ফালি কিনে আনা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আমাদের কুমড়াটি একবেলা খাওয়ার উপযুক্ত।

প্রশ্নঃ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কীভাবে দেখছেন?
এম আনিস উদ দৌলাঃ ব্যবসায়ীদের জন্য বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এমন চলতে থাকলে অনেক ব্যবসা ক্ষতির সম্মুখীন হবে। ব্যাংক তো হরতাল দেখে সুদ কমাবে না। ফলে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সংঘাতমূলক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যদি কমানো না যায়, সমঝোতায় না আসা যায় তাহলে ব্যবসায়ীদের জন্য তা বিপজ্জনক হবে। আমরা প্রত্যাশা করি, শেষ মুহূর্তে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। রাজনীতি দেশটাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেবে এটা কেউ চায় না।

প্রশ্নঃ ব্যবসায় নৈতিকতা ধরে রাখতে করণীয় কী হতে পারে?
এম আনিস উদ দৌলাঃ নৈতিকতা বলে-কয়ে হয় না। নিজ থেকে তা অর্জন করতে হয়। বাংলাদেশে এটাই এক সমস্যা। অন্যকে উপদেশ দিতে ভালো লাগে, কিন্তু নিজে সেটি মানি না। প্রতিটি ক্ষেত্রেই এমন চিত্র। এক্ষেত্রে নেতৃত্বে দুর্বলতার কারণেও ব্যবসায় ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া সংগঠন দিয়েও নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করা যায় না। এটি আসে ব্যবসা ও দৃষ্টান্ত থেকে। বাজারে নৈতিকতা ধরে রেখে আমি সফল হলে দৃষ্টান্ত তৈরি হবে। কেবল ব্যবসার ক্ষেত্রে নয়, সমাজে অন্যান্য ক্ষেত্রে নৈতিকতার চর্চা প্রয়োজন। সবচেয়ে জরুরি রাজনীতির ক্ষেত্রে নৈতিকতার চর্চা। মনে রাখতে হবে— সুনাম অর্জনে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।

প্রশ্নঃ নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য পরামর্শ?
এম আনিস উদ দৌলাঃ তরুণ নেতৃত্বকেই দায়িত্ব নিতে হবে। এখন তারা যদি ঠিকমতো তৈরি না হয়, সেটি আমাদের ব্যর্থতা। আমাদেরও নেতৃত্বে আর ফিরে যাওয়ার পথ নেই। আমরা যখন নেতৃত্বে ছিলাম, তখন চেষ্টা করেছি যাতে কোনো ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ না হয়। সেটিই দৃষ্টান্ত হতে পারে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য। তাছাড়া সমাজের সবখানেই নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয় হচ্ছে। সেখানে ব্যবসায়ী সমাজও এর বাইরে নয়। তাই এদিক সম্পর্কে নতুনদেরও সজাগ থাকতে হবে।

আপনারা পড়ছেন, ভোক্তারাই সবচেয়ে বড় বিচারক

কয়েকটি বিষয় সব সময়ই বিবেচনায় নিয়ে ব্যবসা শুরু করা উচিত। প্রথমত. কোনো পরিকল্পনাই স্বল্পমেয়াদে করা উচিত নয়। সব সময়ই ব্যবসার চিন্তা নিতে হবে দীর্ঘমেয়াদে। এছাড়া পণ্যের মানের ব্যাপারে কোনো আপস করা চলবে না। মনে রাখতে হবে স্বল্প মেয়াদে হয়তো ভেজাল মিশিয়ে কিছু মুনাফা করা যায়, কিন্তু ব্যবসা বেশি দিন পরিচালনা সম্ভব হবে না। তাছাড়া তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে এমন মানসিকতাও থাকতে হবে। ভোক্তারাই সবচেয়ে বড় বিচারক, তারা বিশুদ্ধতাই বেছে নেন।

তথ্যসূত্র : ওয়েবসাইট অবলম্বনে

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা মধ্যেও শিল্পোদ্যোক্তারা এগিয়ে যেতে সক্ষম : অধ্যাপক সেলিম রায়হান


রানা প্লাজা ধসের পর দেশের পণ্য রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হলেও চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ভালো রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রপ্তানি পরিস্থিতির সামগ্রিক অবস্থা নিয়ে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান।

প্রশ্ন: নানা আশঙ্কা সত্ত্বেও চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১ শতাংশের বেশি। তবে নির্বাচন ঘিরে বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। সে ক্ষেত্রে রপ্তানির এই ধারা কি বজায় থাকবে?
সেলিম রায়হান: রপ্তানির এই ধারা বজায় থাকবে কি না, তা সুনির্দিষ্টভাবে এখনই বলা খুব কঠিন। তবে এটা এখন প্রমাণিত যে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, সংঘাত-সহিংসতার মধ্যেও বাংলাদেশের শিল্পোদ্যোক্তারা এগিয়ে যেতে সক্ষম। তাঁরা এসব প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও কীভাবে উৎপাদন চালিয়ে যেতে ও রপ্তানি অব্যাহত রাখতে হয়, তা জানেন। সুতরাং, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা রপ্তানিতে খুব বড় কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। বিশ্ববাজারে মন্দাভাব থাকলে বরং নেতিবাচক প্রভাবটা বেশি পড়ে। বাইরে চাহিদা কমে গেলে বাজার সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

প্রশ্ন: বর্তমানে বিশ্ববাজারের পরিস্থিতিটা কী রকম?
সেলিম রায়হান: বিশ্ববাজার এখন চাঙা হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকের চাহিদা কিছুটা উর্ধ্বমুখী। আর বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের বেশির ভাগই তো তৈরি পোশাকনির্ভর। সুতরাং বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ভালো প্রবৃদ্ধি যখন ঘটে, তখন তা হয় প্রধানত পোশাক খাতের কারণে।

প্রশ্ন: আশঙ্কা ছিল রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের পোশাক খাত বিরাট বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। রপ্তানির এই তথ্য কী তাহলে এটাই দেখায়, যা বাংলাদেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা কাটিয়ে উঠেছে?
সেলিম রায়হান: বিষয়টি এভাবে দেখা ঠিক নয়। এই ২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে এখন আমরা যেভাবে আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছি, যেভাবে বলা হচ্ছে যে আমরা বিপযর্য় কাটিয়ে উঠছি, তাতে করে বরং মনে হচ্ছে যে রানা প্লাজা ধস ও এক হাজারের বেশি শ্রমিকের প্রাণহানি তেমন বড় ঘটনা নয়। কেননা, রপ্তানি তো বাড়ছেই। এই দৃষ্টিভঙ্গি মোটেও ঠিক নয়। বাংলাদেশের পোশাক খাত প্রকৃত বিচারে বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বাইরের দেশগুলোর ভোক্তারা এখন বাংলাদেশে প্রস্তুত করা পোশাক নিয়ে অনেক বেশি সংবেদনশীল। অনেক বড় বড় বিপণিবিতান তো কিছুদিন বাংলাদেশি পোশাক তাক থেকে সরিয়েই ফেলেছিল। কাজেই রানা প্লাজার বিষয়টি বিস্মৃত হওয়ার কোনোই সুযোগ নেই। বরং এখন বাংলাদেশের পোশাকশিল্পকে টেকসই উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করা প্রয়োজন।

প্রশ্ন: তাহলে কি বলতে চাচ্ছেন যে এত বছরেও বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প যথেষ্ট টেকসই পর্যায়ে উন্নীত হতে পারেনি?
সেলিম রায়হান: অনেকটা তাই। আমাদের পোশাকশিল্পের বিকাশ বহুলাংশে অপরিকল্পিত। এখানে মান নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি রয়েছে। অনেক শিল্প মালিকই শ্রমিকদের বঞ্চনার অনুভূতির প্রতি মনোযোগী নন। বরং অতি মুনাফার প্রবণতা তাঁদের একটা স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গেছে। মুনাফা হচ্ছে দেখে অনেকেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন এখানে বিনিয়োগ করতে। কিন্তু তাঁরা সুপরিকল্পিতভাবে কারখানা নির্মাণের চিন্তা করেননি। ভাড়া বাড়িতে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে গড়ে উঠেছে শত শত কারখানা। বড় সমস্যা হলো, পোশাকশিল্পকে নিবিড়ভাবে তদারক করার কোনো দায়িত্বপূর্ণ সংস্থা নেই। এখানে সুশাসনের প্রচণ্ড অভাব রয়েছে। রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব। এই জায়গায় উন্নতি না হলে ভবিষ্যতে পোশাকশিল্প বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে।


প্রশ্ন: শ্রমিকদের জীবনমান ও ন্যায্য মজুরি উপেক্ষা করার অভিযোগও আছে। এটা থেকে উত্তরণের উপায় কী?
সেলিম রায়হান: শ্রমিকদের জীবনমান ও ন্যায্য মজুরি উপেক্ষা করে যে বেশি দিন চলা সম্ভব নয়, তা তো বারবারই দেখা যাচ্ছে। এই যে এখন প্রায়ই শ্রমিকেরা নানা দাবিতে রাজপথে নেমে আসছেন, সংঘাতে জড়িয়ে পড়ছেন, এটা কিন্তু পোশাকশিল্পের অভ্যন্তরীণ অব্যবস্থাপনারই ফল। সরকারকে তাই শ্রমিকদের বিষয়ে যথেষ্ট মনোযোগী হতে হবে। মালিকদেরও ইতিবাচকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তা না হলে বাইরের দুনিয়ায় বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের ভাবমূর্তি বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ভাবমূর্তি নষ্ট হলে গোটা শিল্প কখনোই টেকসই পর্যায়ে দাঁড়াতে পারবে না, নাজুকতা থেকে যাবে।

প্রশ্ন: সরকার ও মালিকদের পাশাপাশি বিদেশি ক্রেতাদেরও তো কিছু দায়িত্ব রয়েছে।
সেলিম রায়হান: ক্রেতারাও ধোয়া তুলসীপাতা নন। শ্রমিকদের একটু ভালো মজুরি দেওয়া, কারখানার পরিবেশ উন্নত করা এসব কাজে যে বাড়তি অর্থ প্রয়োজন, তার জন্য ক্রেতারাও কেউ বাড়তি ব্যয় বহন করতে চান না। অথচ তাঁরা সস্তায় বাংলাদেশ থেকে পোশাক নিয়ে ভালো ব্যবসা করে আসছেন বছরের পর বছর। কাজেই তাঁদের ওপরও চাপ তৈরি প্রয়োজন। আসলে সরকার-মালিক-ক্রেতা মিলে ত্রিপক্ষীয় কাজ করলে তা পোশাক খাতের জন্য সুফল বয়ে আনবে।

তথ্যসূত্র : ওয়েবসাইট থেকে।

অনলাইন মিডিয়া অনেক বেশি ইন্টারেক্টিভ : এএম একলিম আহমদ


অনলাইন মিডিয়া আমাদের সামাজিকতায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে, এর থেকে বাদ যায়নি ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডও। ফলে, অনলাইন মিডিয়া ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি, প্রমোশন, বিক্রয় ইত্যাদিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে।

প্রশ্ন :  সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমানে কিভাবে ব্র্যান্ড প্রোমোশনের উপর প্রভাব বিস্তার করছে?
এ এম একলিম আহমদ : সময়ের সাথে, প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে মানুষের মুভমেন্ট ও চাহিদা পরিবর্তিত হচ্ছে। সেই সাথে মিডিয়াও পরিবর্তিত হয়ে নতুন রূপ এ হাজির হচ্ছে আমাদের সামনে। বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া ব্র্যান্ড প্রমোশন এর নতুন সুযোগ করে দিচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়া আজ মানুষের, বিশেষ করে নতুন প্রজন্ম এর কাছে একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসাবে পরিগণিত হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। ব্র্যান্ড প্রমোশন এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সোশ্যাল মিডিয়ার আরেকটি বড় গুণ হলো, এর মাধ্যমে খুব সহজে শেয়ারিং/ ইন্টারেক্টি করা যায় (পুশ-পুল)। যার ফলে বন্ডিং অনেক সহজে এবং দ্রুত হয়।
নিচের ফেসবুক এর একটি উদাহরণ থেকে বুঝা যায় যে, আমাদের দেশের কর্পোরেট হাউসগুলো কী পরিমান মানুষ কে সোশ্যাল মিডিয়া দ্বারা কানেক্ট করছে।


প্রশ্ন :  আপনারা কি ইতোমধ্যে কোন ফেসবুক ক্যাম্পেইন করেছেন?
এ এম একলিম আহমদঃ হাঁ! আমরা জিপিএস ভেহিকল ট্র্যাকিং সার্ভিস এর উপর ফেইসবুক এবং গুগল ক্যাম্পেইন করছি। তবে ইউজার সম্পৃক্ততা ফেসবুকে তুলনামূলক বেশি ছিল।

প্রশ্ন :  আপনি কি মনে করেন, অনলাইন বিজ্ঞাপন টিভি বিজ্ঞাপনের জন্য হুমকি?
এ এম একলিম আহমদঃ ঠিক হুমকি হিসাবে আমি দেখছি না! তবে অনলাইন মিডিয়া অনেক বেশি ইন্টারেক্টিভ। যেখানে মানুষ তার মতামত সহজেই প্রকাশ করতে পারে। এতে করে অ্যাডভাটাইজার সহজেই ফিডব্যাক পায় এবং প্রয়োজনে পরিবর্তন ও সংশোধন করতে পারে। টিভিসি অনেক বড় ও বিস্তৃত এবং একই সময়ে অনেক মানুষের কাছে পৌছে যায়। টিভিসির আবেদন এখনো অনেক বেশি। তবে যেটি বলতে হয়, সময়ের সাথে সাথে সবকিছুকেই তাল মিলিয়ে চলতে হয়। প্রয়োজনে পরিবর্তিত হয়ে মানুষের চাহিদা মাফিক রূপ ধারণ করতে হয়। আজকাল দেখা যাচ্ছে টিভিসিও বিজ্ঞাপনের স্টাইল পরিবর্তন করেছে।

আপনারা পড়ছেন, অনলাইন মিডিয়া অনেক বেশি ইন্টারেক্টিভ
দেশের ব্যাংকিং জগতে এসএমই খাতের অর্থায়নে আমরাই বিশেষ অবদান রাখছিঃ সৈয়দ মাহবুবুর রহমান

ব্র্যাক ব্যাংকের এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে ব্যাংকের সামগ্রিক দিক ও দেশের আর্থিক খাত নিয়ে কথা বলেছেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান

প্রশ্ন: আমরা জানি ব্র্যাক ব্যাংক মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করে। এই এসএমই খাত নিয়ে আপনারা কী কী কাজ করছেন?
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: ব্র্যাক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই এসএমই খাতই প্রাধান্য পেয়েছে। এই পর্যন্ত পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি এসএমই ঋণ দেওয়া হয়েছে। এই ঋণের বেশির ভাগই ছোট উদ্যোক্তারা পেয়েছেন। দেশের ব্যাংকিং জগতে এসএমই খাতের অর্থায়নে আমরাই বিশেষ অবদান রাখছি।

প্রশ্ন: সম্প্রতি ব্র্যাক ব্যাংক এসএমই উদ্যোক্তাদের নিয়ে সম্মেলন করেছে। কেন?
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: গত ২৫ মে এই উদ্যোক্তা সম্মেলন হয়েছে। এতে দেড় হাজারের বেশি উদ্যোক্তা এসেছিলেন, যাঁরা ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। আমরা তাঁদের কাছ থেকে তাঁদের সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা শুনতে চেয়েছি। তাঁদের কথা শুনে আর সেসব বিষয় নিয়ে ব্র্যাক ব্যাংক কাজ করছে। ভবিষ্যতে দুই বছর পরপর এই সম্মেলন করব বলে আশা করছি। ব্র্যাক ব্যাংক এখন এসব সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাদের কাছে যাবে। তাঁদের চাহিদা পূরণে চেষ্টা করবে। এবারের সম্মেলনে ১৩ জন উদ্যোক্তাকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: বিগত ১২ বছরে ব্র্যাক ব্যাংকের অর্জন কী কী?
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত ১২ বছরে ব্র্যাক ব্যাংকের দুই ধরনের লক্ষ্য অর্জন হয়েছে। প্রথমত, এই পর্যন্ত আমরা সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছি। এর মধ্যে চার লাখ ১৫ হাজার ব্যক্তিকে এসমএই ঋণ দিয়েছি। এতে ১৬ লাখ লোকের সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে। দ্বিতীয় অর্জন হলো, দেশের ব্যাংকিং জগতে এসএমই সম্পর্কে ধারণা বদলাতে সহায়তা করেছি। আমাদের সাফল্যে অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এসএমই অর্থায়নে উৎসাহিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এসএমই বিভাগ চালু করেছে। প্রতিবছর দেশে ৬০ থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকা এসএমই ঋণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত এপ্রিল মাসে ব্র্যাক ব্যাংক এশিয়ান ব্যাংকার্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। আর আমি লিডারশিপ অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি। এশিয়ান ব্যাংকার্স ফোরাম এই সম্মাননা দিয়েছে।

প্রশ্ন: ব্র্যাক ব্যাংক সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়গুলো কীভাবে দেখে?
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়গুলো ব্র্যাক ব্যাংক একটু ভিন্ন আঙ্গিকে করে থাকে। আমরা গতানুগতিকভাবে সামাজিক দায়বদ্ধতার বা সিএসআর কার্যক্রম করি না। সমাজে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে এমন কর্মসূচিই এই সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রমে আনা হয়েছে। আমরা শুদ্ধ সংগীতচর্চায় যেমন অর্থ ব্যয় করছি, তেমনি অদম্য মেধাবীদেরও অনুপ্রেরণা দিচ্ছি। আবার অটিস্টিক বাচ্চাদের পাশে থাকছে ব্র্যাক ব্যাংক। মুক্তিযদ্ধ জাদুঘরের জন্য আমরা কাজ করছি। সাভার ট্র্যাজেডিতে মানুষের পাশে ছিলাম। তারামন বিবির মতো খেতাবপ্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধাকে আজীবন ভাতা দিচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক।

প্রশ্ন: সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের অবস্থা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাত এই মুহূর্তে কিছুটা শ্লথ রয়েছে। নির্বাচনের বছরে এটা হয়। এ ছাড়া বিশ্বমন্দা পরিস্থিতিও ক্রমশ কঠিন হবে, মসৃণ হবে না। রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলে অর্থনীতি শ্লথ হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগের ওপর প্রভাব পড়ছে। ইতিমধ্যে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে। এতে কর্মসংস্থান কমছে। মনে রাখতে হবে, ১৬ থেকে ১৮ লাখ লোক প্রতিবছর শ্রমশক্তিতে যুক্ত হচ্ছে। তাদের কর্মস্থানে বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। বেসরকারি খাতে ১৮ শতাংশ ঋণপ্রবাহের লক্ষ্য অর্জন চ্যালেঞ্জিং হবে। বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকতে হবে। আবার ব্যাংকগুলোকে মনে রাখতে হবে, শুধু ঋণ দিলেই হবে না, ঋণ ফেরত পেতে হবে।

প্রশ্ন: হল-মার্ক, ডেসটিনি কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা কেন ঘটছে বলে আপনি মনে করেন?
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: এই ধরনের ঘটনা মূলত ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার জন্য ঘটছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কঠোর ও সতর্ক হতে হবে। ঋণ প্রদান প্রক্রিয়া যথার্থ হতে হবে। এ ছাড়া সময়ের সঙ্গে ব্যবস্থাপনাও যুগোপযোগী করতে হবে। ব্যবস্থাপনায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি আনতে হবে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের বন্ড বাজার সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান: কর-সংক্রান্ত বিষয়গুলো পুনর্মূল্যায়ন না করলে এ দেশে বন্ড আকর্ষণীয় হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সব প্রতিষ্ঠানকে সমন্বিতভাবে নীতি গ্রহণ করতে হবে। বন্ড না হলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ আসবে না।

তথ্যসূত্র : ওয়েবসাইট অবলম্বনে

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার দেশ : শওকত হোসেন


আমাদের দেশে উদ্যোক্তা উন্নয়নের পরিবেশ তেমনভাবে গড়ে উঠেনি। কিন্তু এটিই হতে পারে বেকারত্ব দূরীকরণের কার্যকরী পন্থা। তবে অনেকেই সরকারী সহায়তা ছাড়াই কাজ করে যাচ্ছে। উদ্যোগ, উদ্যোক্তা উন্নয়নের বর্তমান পরিস্থিতি, বাধা, উত্তরণের উপায়, ঋণ পাবার শর্ত ইত্যাদি বিষয়ে আজকের বক্তা ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের বিশিষ্টজন বিডিভেঞ্চার লিমিটেড-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শওকত হোসেন-এর।

প্রশ্ন :  নতুন উদ্যোক্তাদের জন্যে বাংলাদেশ কতোটা সম্ভাবনাময়? এবং কেন?
শওকত হোসেনঃ নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার দেশ। আমি বাংলাদেশের সুযোগগুলোকে এভাবে ভাগ করবঃ
•    আভ্যন্তরীণ বাজার
•    তরুন বুদ্ধিদিপ্ত প্রযুক্তি-বান্ধব শ্রম সম্পদ
•    সমৃদ্ধ খাতগুলোর সাথে মিসিং লিঙ্ক বা ডটগুলো সংযুক্ত করা
•    ক্রম হ্রাস মান দারিদ্র
•    তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত প্রায় ১ কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি

বাংলাদেশ ১৫ কোটি লোকের দেশ। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল। সারাদেশে যে কোন জায়গায় অনায়াসে পৌঁছানো যায়। প্রায় একই ভাষা, একই সংস্কৃতি। তাই স্থানীয় বাজারটা বিশাল ও আকর্ষণীয়। এই বাজারকে লক্ষ্য করে অনেক ব্যবসা শুরু করা যায়।
আমাদের আছে উদ্যমী যুব সমাজ। যারা বুদ্ধিমান ও পরিশ্রমী। তরুনরা প্রযুক্তি ব্যবহারে সিদ্ধহস্ত। মোবাইল, ইন্তারনেট ও সামজিক যোগাযোগ-এ তারা পারদর্শী। তারা দ্রুত শিখছে। সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। অনেকেই ফ্রিলান্সিং এ পৃথিবীর সাথে প্রতিযোগিতা করে কাজ করছে। এদের সঠিক ভাবে কাজে লাগালে অনেক ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে।
আমাদের অনেক গুলো খাতে উন্নতি ঘটেছে- যেমন কৃষি, পোশাক শিল্প, জাহাজ নির্মাণ, ঔষধ, যানবাহন ইত্যাদি। কিন্তু পশ্চাত বা সম্মুখ খাত তাল মিলিয়ে উন্নত হয়নি। সমৃদ্ধ খাতগুলো বিছিন্ন দ্বীপের মতো রয়ে গেছে। সময় এসেছে সেগুলোকে সংযুক্ত করার।
বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও গত এক যুগ ধরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের উপরে। খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ আমরা। ক্ষুদ্র ঋণ ও রেমিটেন্স আয় দেশের সাধারন নাগরিকের ক্রয় ক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ওদের অনেকের হাতে উদ্বৃত্ত টাকা আছে। তারা উদ্যোক্তা অথবা বড় একটা ভোক্তা শ্রেণি হিসাবে আবির্ভূত হতে পারে।
বিদেশে প্রবাসি বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। অধিকাংশ শ্রমিক হলেও অনেকেই বুদ্ধি-কর্মী হিসাবে নিয়োজিত। তারা বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সের কাজ নিয়ে দেশে সস্তা শ্রমে কাজ আদায় করে নিতে পারেন।
বাংলাদেশকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান “ফ্রন্টিয়ার দেশ” হিসাবে বিবেচনা করছে। এত নেতিবাচক ইমেজ বা প্রচারনার মধ্যেও, সম্ভাবনা আছে বলেই, বাংলাদেশকে তারা আগুয়ান দেশ হিসেবে ‘গন্য’ করছে।

আপনারা পড়ছেন, নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার দেশ : শওকত হোসেন

প্রশ্ন :  উদ্যোক্তারা এদেশে নতুন একটি ব্যবসা নিয়ে আসার সময় কি কি প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে? এবং প্রতিকূলতাগুলো নিরসনের জন্য কি কি উপায় তারা অবলম্বন করতে পারে?
শওকত হোসেনঃ বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ অনুপস্থিত। নতুন উদ্যোক্তাদের পথটি বন্ধুর। বিদেশি উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ একটি বেদনা ও হতাশাময় গন্তব্য। সবচেয়ে বড় বাধা আমলাতন্ত্র। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘দেশ কি পাবে’ নয় ‘আমি কি পাব’ সেটাই মুখ্য হয়ে দাড়ায়। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, দুর্নীতি, দুর্বল ভৌত অবকাঠামো, নিতিমালার অসামঞ্জস্যতা বা পরিবর্তনশীলতা, আইনের দুর্বল প্রয়োগ, বিচারের দীর্ঘ সুত্রিতা, সুবিধাজনক জমির দুস্প্রাপ্যতা, অর্থের সহজ অলভ্যতা ইত্যাদি প্রধান কারন। বিশ্বব্যাংক-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আইএফসির ২০১২ সালের বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ এর মাপকাঠিতে ১৮৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৯ নাম্বারে। পাশের দেশ শ্রীলঙ্কা ৮১, মালদ্বীপ ৯৫, পাকিস্তান ১০৭ এবং নেপাল ১০৮ ও ভিয়েতনাম ৯৯। এই সার্ভে-তে যেসব মাপকাঠি তারা বিবেচনায় নিয়েছে তার মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বনিম্নে (১৮৫), ‘চুক্তি প্রয়োগ’এ ১৮২ ও জমি নিবন্ধনে ১৭৫। চুক্তি প্রয়োগে বাংলাদেশে ১৪৪২ দিন বা প্রায় ৪ বছর লাগে অথচ ভুটানে লাগে ২২৫ দিন। বিদ্যুৎ পেতে বাংলাদেশে লাগে ৪০৪ দিন। অথচ ভারতে লাগে ৬৭ দিন এবং নেপালে ৭০ দিন। জমি নিবন্ধনের জন্য বাংলাদেশে প্রায় ২৪৫ দিন সময় লাগে। ভারতে লাগে ৪৪ দিন এবং নেপালে ৫ দিন। কথাগুলো খুবই হাতাশাব্যঞ্জক ও নেতিবাচক শোনালেও বাস্তবতা কিন্তু খুব রুঢ়। সত্যর মুখোমুখি না হলে প্রকৃত অবস্থাকে পরিবর্তন করা যাবে না।
উদ্যোক্তা কে আমরা ‘লেগে থাক’ উপদেশ দিতে পারি। কিন্তু সেটি প্রকৃত সমাধান নয়। বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃজনে এই বাধাগুলো সরাতে হবে। এখানে সরকারের ভুমিকাই বেশী। তারপরও আমাদের সবাইকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে। এতে মিডিয়ারও যথেষ্ট ভুমিকা আছে।

প্রশ্ন :  ব্যবসা শুরু করা এবং পরিচালনার সময় নতুন উদ্যোগক্তারা সাধারণ যেসব বড় ধরণের ভুল করে থাকে?
শওকত হোসেনঃ উদ্যোক্তারা প্রাথমিক পর্যায়ে সাধারনত কিছু ভুল করে থাকে, যা সহজে শোধরান যায় না অথবা অনেক বড় মাশুল দিতে হয়। এমনকি ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যায়। যেমনঃ
•    নির্দিষ্ট কোন ব্যাবসায় দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও সেই ব্যবসা শুরু করা
•    ব্যবসা শুরুর আগে বাজেট বা পরিকল্পনা না করা
•    বাজার যাচাই না করেই আন্দাজে চাহিদা, বিক্রয়মূল্য ইত্যাদি হিসাব করা
•    ব্যবসা শুরুর আগেই লাভ হিসাব করে অহেতুক খরচ করা
•    অংশীদারদের মধ্যে সম্পর্ক স্পষ্ট না করা
•    ব্যবসার পণ্য, স্থান, কর্মী নির্ধারণে (ব্যবসা ব্যতিত) অন্য কোন ইস্যু বিবেচনা করা ব্যবসা পরিচালনার সময় উদ্যোক্তারা যে ভুলগুলো করে বা করতে পারে
•    ব্যক্তিগত সম্পর্কর সাথে ব্যাবসায়িক সম্পর্ক গুলিয়ে ফেলা
•    ব্যবসায় পর্যাপ্ত সময় না দেয়া
•    হিসাব পত্র ঠিক না রাখা
•    যথেষ্ট চিন্তা ভাবনা ছাড়া (কারো প্ররোচনায় বা অন্য কাউকে দেখে) ব্যবসার পণ্য, উদ্দেশ্য ইত্যাদি পরিবর্তন করা।

প্রশ্ন :  উদ্যোক্তারা কিভাবে বিনিয়োগ সংগ্রহ করতে নিজেদেরকে বিশ্বস্ত প্রমান করতে পারে?
শওকত হোসেনঃ বিশ্বস্ত প্রমানের চেয়ে ব্যবসায় সৎ থাকা জরুরি। বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদিও সৎ থাকা খুব কঠিন- কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে অবশ্যই তার সুফল পাওয়া যাবে। সরবরাহকারি (যাদের কাছ থেকে কাঁচামাল কেনা হয়), কর্মচারী, বাড়িওয়ালা সবার পাওনা নিয়মিত পরিশোধ করতে হবে। অন্য ব্যাংক, এনজিও বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আগে ঋণ নিলে তা সময়মত পরিশোধ করা উচিত। বর্তমানে অন্য কোন ব্যাংকে কোন ঋণ চালু থাকলে বা কোন ঋণের আবেদন প্রক্রিয়াধীন থাকলে তা স্বীকার করা উচিত। বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোন বিল নিয়মিত শোধ করা উচিত। যতটুকু সম্ভব লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করা উচিত। ব্যবসার হিসাবপত্র ঠিক মতো রাখা উচিত। অনেকে হিসাবে গোঁজামিল দেয়- বেশী ঋণ পাওয়ার আশায়। ধরা পরলে সেটি উদ্যোক্তার সততার ব্যপারে প্রশ্ন বোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়াবে।

প্রশ্ন :  বিডিভেঞ্চার লিমিটেড সাধারণত কোন ধরণের/ খাতের উদ্যোক্তাদের প্রাধান্য দিয়ে থাকে?
শওকত হোসেনঃ বিডিভেঞ্চার লিমিটেড নিম্নলিখিত খাতগুলোতে বিনিয়োগ করেঃ
•    তথ্য প্রযুক্তি (সফটওয়্যার, বিপিও, আইইএস, ডকুমেন্ট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি)
•    কৃষি খামার, কৃষি শিল্প, কৃষি বা খাদ্য প্রক্রিয়াকরন
•    পর্যটন
•    হাল্কা শিল্প
•    পুনঃ ব্যবহার যোগ্য জ্বালানি বা জ্বালানি দক্ষ টেকনোলজি
•    শিক্ষা
•    স্বাস্থ্য ইত্যাদি
তবে উক্ত প্রতিষ্ঠানের বয়স কমপক্ষে এক বছর হতে হবে।

প্রশ্ন :  ভেঞ্চার ক্যাপিটালের বিশ্বস্ততা অর্জনের জন্য একজন উদ্যোগক্তার কি কি গুণাবলী থাকাটা জরুরী?
শওকত হোসেনঃ ভেঞ্চার ক্যাপিটাল উদ্যোক্তার বিজনেস প্লান যাচাই বাছাই করে। উক্ত ব্যবসায় তার দক্ষতা দেখে। পূর্ববর্তী সময়ের আর্থিক হিসাব বিবরণী, ব্যাংক বিবরণী, গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিপত্রসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখা হয়। উদ্যোক্তা একাধিক হলে সবার সাথে কথা বলা হয়। এ ছাড়া নির্ধারিত অডিট ফার্ম দিয়ে হিসাব বিবরণী নিরীক্ষা করা হয়। তবে, মূলত যেটা প্রধান বিবেচ্য, উদ্যোক্তা ব্যবসা বোঝেন কিনা, ব্যবসার প্রতি আগ্রহ আছে কিনা, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানি তাকে বিশ্বাস করতে পারে কিনা। এছাড়াও উক্ত ব্যবসার বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা (যেমন বর্তমানে লাভ কেমন, ভবিষ্যতে পর্যাপ্ত লাভ হবে কিনা) ইত্যাদি যাচাই করা হয়।

আপনারা পড়ছেন, নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার দেশ : শওকত হোসেন

প্রশ্ন :  একজন নতুন উদ্যোক্তাকে কোন কোন বিষয় বিবেচনায় রেখে ব্যবসা শুরু করা উচিত?
শওকত হোসেনঃ নতুন উদ্যোক্তা কয়েক প্রকার ব্যবসায় প্রবেশ করতে পারে। যেমনঃ
•    শিক্ষা, যোগ্যতা বা দক্ষতা উদ্ভুত (যেমন, বুয়েটের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার সফটওয়্যার ব্যবসা শুরু করতে পারে)
•    অভিজ্ঞতা উদ্ভুত (যেমন গার্মেন্টসের প্রডাকশন ম্যানেজার গার্মেন্টস কারখানা চালু করতে পারে)
•    সম্পদ উদ্ভুত (গ্রামে উত্তারাধিকার সুত্রে পাওয়া কিছু পুকুরে মাছ চাষ শুরু করতে পারে)
•    বাজার সংশ্লিষ্ট (গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির প্রাক্তন কোন কর্মচারী উক্ত গার্মেন্টসে কার্টুন সরবরাহ শুরু করতে পারে)
•    সরবরাহ উদ্ভুত (যশোরের কোন তরুন ফুল উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে ফুল কিনে বিদেশে রপ্তানি করতে পারে)

প্রশ্ন :  নতুন উদ্যোক্তাদের আগ্রহী করার জন্যে বিডিভেঞ্চার লিমিটেড কি ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করছে?
শওকত হোসেনঃ বিডিভেঞ্চার উদ্যোক্তাদের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগের সাথে জড়িত। যেমন, উদ্যোক্তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার উপর প্রশিক্ষন দেয়। National entrepreneur Summit-এ উদ্যোক্তা উন্নয়নে ভুমিকা রেখেছে। এ ছাড়া উদ্যোক্তা উন্নয়নের সাথে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক, বেসিস, ডিসিসিআই সাথে সম্মিলিত ভাবে কাজ করছে।

প্রশ্ন :  প্রচলিত ব্যাংক গুলোর ঋণ প্রদান ব্যবস্থা নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য কতোটুকু সহায়ক ভূমিকা পালন করে বলে আপনি মনে করেন?
শওকত হোসেনঃ ব্যাংকরা সাধারনত নতুন উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয় না। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক এর আদেশ থাকলেও জামানত বিহীন ঋণের ব্যাপারে ব্যাংকরা খুব রক্ষণশীল। তদুপরি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার এক মাস (বড় জোর তিন মাস) পর থেকে কিস্তিতে ঋণ শোধ শুরু করতে হয়। বর্ধিষ্ণু একটি ব্যবসার জন্য যা খুবই কষ্ট সাধ্য। তাছাড়া এসএমই ঋণ-এর সুদের হার ১৮ থেকে ২০ শতাংশ। অন্যান্য খরচ সহ যা ২২ থেকে ২৫ শতাংশ দাঁড়ায়। এত বড় সুদের বোঝা অনেক ব্যবসার পক্ষে বহন করা সম্ভব না। এ ক্ষেত্রে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে বা ব্যবসায় মন্দা দেখা দিলে ঋণ শোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে চাপে পড়ে পুঁজি ভাংতে হয়। যা দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর।

প্রশ্ন :  শুধু আইডিয়ার উপর আপনারা কি বিনিয়োগ করে থাকেন?
শওকত হোসেনঃ না, আমরা আইডিয়ার উপর বিনিয়োগ করি না। যে ব্যবসার বয়স কমপক্ষে এক বছর সেসব ব্যবসায় আমরা বিনিয়োগ করি- তাদের ব্যবসা সম্প্রসারনের জন্য।

প্রশ্ন :  অনেকে বলেন, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম উদ্যোক্তাদের টাকা যোগান দিয়ে ফলশ্রুতিতে উদ্যোক্তাদের অলস করে দেয়, আপনি কি মনে করেন?
শওকত হোসেনঃ এটা আপেক্ষিক ব্যাপার। নির্ভর করে উদ্যোক্তার উপর। টাকা অধিক পরিমানে প্রদান করা হলে উদ্যোক্তা অলস হয়ে যেতে পারে। বিলাসী জীবনে লিপ্ত হতে পারে। অপচয় করতে পারে। আবার টাকাটা ভাল বা উৎপাদনশীল কাজেও ব্যবহার করতে পারে। এই ‘রোগ’ ঋণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অনেক ঋণ গ্রহীতার প্রকল্প রুগ্ন হয়ে গেছে কারন ঋণ পেয়েই তারা গাড়ি-বাড়ি কিনে বিলাস-ব্যসনে মত্ত হয়ে উঠেছিলেন। ফলশ্রুতিতে ব্যবসা উঠেছিল লাটে।

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের ধারনা পারিবারিক জীবনের অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে


নিউইয়র্ক টাইমসের নিয়মিত কলামিস্ট এবং ‘The Secrets of Happy Families’ বইয়ের রচয়িতা ব্রুস ফেইলারের একটি সাক্ষাৎকার প্রিয় ফিনান্সের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। সাক্ষাৎকারটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন হার্ভাড বিজনেস রিভিউ এর প্রধান সম্পাদক আ্যডি ইগনিটাস।

আ্যডি: ব্রুস, আমাদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ । শুরুতেই চলে আসি আপনার সদ্য প্রকাশিত বই ‘The Secrets of Happy Families’ প্রসঙ্গে

ব্রুস: পারিবারিক অর্থনীতিতে বর্তমান সময়ে দুটি বড় পরিবর্তন এসেছে। আজকাল পরিবারের নারী সদস্যেরা স্বতস্ফূর্তভাবে ঘর ছেড়ে বের হচ্ছেন, তাই অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী কর্মীদের উপস্থিতি বেড়েছে ব্যাপকভাবে। অন্যদিকে পুরুষ সদস্যেরা ঘর সামলানোর দিকে বেশি মন দিচ্ছেন। এভাবে নারী-পুরুষের পারিবারিক ভূমিকা উল্টে যাচ্ছে, আবার অনেক পরিবারে বাবা-মা দুজনেই চাকুরীজিবী। এসব নানা কারণে দেখা দিচ্ছে পারিবারিক সংকট। আর এই সমস্যার সমাধান করতে অনেকেই বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ, তান্ত্রিক গুরু ইত্যাদি ব্যক্তির দারস্থ হচ্ছেন। নতুন প্রজন্মের অভিভাবকেরা কিভাবে নিজেদের কর্মস্থলের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি ঠিক একইভাবে পারিবারিক সমস্যাগুলোও মোকাবেলা করতে পারেন সে সম্পর্কে সামগ্রিক একটি ধারণা দিয়েছি আমি বইটিতে।

আ্যডি: এযাবৎকালে পারিবারিক সংকট কাটিয়ে ওঠা নিয়ে অনেক মতামত প্রকাশিত হয়েছে, আপনার বইয়ে মূলত কোন বিষয়গুলো প্রাধান্য পেয়েছে?

ব্রুস: সাধারণ পরিবারগুলো কী চমৎকারভাবে দৈনন্দিন কর্মজীবনের ধ্যান-ধারণা পারিবারিক সমস্যা মেটাতে কাজে লাগাচ্ছে তা আমি স্বচক্ষে দেখেছি । আরো বেশ চমকপ্রদ বিষয় হলো এ ব্যাপার অনেকেই Agile Software Development পদ্ধতি দ্বারা অণুপ্রাণিত হয়েছেন । নিজের পরিবারেও আমি এমন একটি নিয়মের প্রচলন করেছি। আমাদের ৮ বছরের দুটি কন্যাসন্তান আছে, প্রতিদিন তাদের সাথে ২০ মিনিটের একটা ছোট্ট আলাপচারিতায় বসি আমি ও আমার স্ত্রী । তারা কোন কাজে ভালো করেছে? কোন কাজগুলোতে ভালো করেনি? কিভাবে এই কাজগুলো আরও ভালভাবে করা যেতে পারত?–মাত্র এই তিনটি প্রশ্নের উত্তরেই উঠে আসে অনেক কিছুর সমাধান। সন্তানেরা আমাদের সাথে আলোচনা করেই নিজেদের পুরস্কার অথবা শাস্তি ঠিক করে নিচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যে সব শিশু অনেক ছোট বয়স থেকেই নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে শেখে তারা ভবিষ্যতে নিজেদের জীবন গুছিয়ে নিতে মুন্সিয়ানার পরিচয় দেয়।

 আপনারা পড়ছেন, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের ধারনা পারিবারিক জীবনের অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে

আ্যডিঃ অনেক পাঠকই একটি বিষয়ের সাথে একমত হবেন, এমনকি আমি নিজেও যখন বইটি পড়েছি তখন মনে হয়েছে বইটি স্বাভাবিক পারিবারিক জীবনে অনেকটা অনাধিকার প্রবেশ করছে।

ব্রুস: দেখুন, বর্তমানে আমাদের অধিকাংশেরই পারিবারিক জীবন বেশ বিশৃঙ্খল, আমরা সবসময়ই নিজেদের ভাবনাগুলোর প্রতিরক্ষা করে চলেছি। যা কিনা পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মতবিরোধের অন্যতম কারণ। আমি বইয়ে যে পদ্ধতির কথা বলেছি, তা অণুসরণ করলে আপনি অন্তত আপনার পরিবারের সাথে বসে দুদন্ড কথা বলার সুযোগ বের করবেন। আপনি আপনার পরিবারকে কিভাবে পরিচালনা করবেন সে ব্যাপারে কখনই নির্দিষ্ট কিছু ধারণার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়। কারণ সময় যত গড়াচ্ছে, সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বদলাচ্ছে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি।

আ্যডি: এই ধারণার স্বপক্ষে আপনার বক্তব্য কি?

ব্রুস: আপনি একটি পুরনো ধারণার কথাই চিন্তা করুন, গবেষণায় প্রমাণিত যে একসঙ্গে বসে রাতের খাবার খাওয়া আপনার সন্তানের উপর একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। কিন্তু বাস্তবিক ক্ষেত্রে এই ধারণার প্রয়োগ কতটুকু হয়? আমাদের আজকের এই ব্যস্ত জীবনে সন্তান্দের সাথে বসে একসঙ্গে রাতের খাবার খাওয়া একেবারেই অসম্ভব। কারণ, প্রায়ই দেখা যায় আপনি কর্মস্থল থেকে দেরি করে বাড়িতে ফিরছেন এবং ততক্ষণে আপনার সন্তানেরা গভীর ঘুমে অচেতন। খাবার টেবিলে আপনি তাদেরকে যে সময় দিতেন, সেই সময়টা আপনি দিনের অন্য যেকোন অংশেও তাদেরকে দিতে পারেন। ফলাফল কিন্তু একই হবে। কর্মমস্থলের মত পারিবারিক ক্ষেত্রেও সময় ব্যবস্থাপনার ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আ্যডি: পারিবারিক সংকটের এই বিষয় নিয়ে এখনও পর্যন্ত অনেক বইই লেখা হয়ছে, এদের মধ্যে স্টেফেন ক্যোভি রচিত ‘Seven Habits of Effective Families’ বইটি উল্লেখযোগ্য। তাদের এই মতামতগুলো আপনি কতখানি সমর্থন করেন?

ব্রুস: আমার মতে এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো ধারণার প্রবর্তন করেন ক্যোভি। তার এই বইটি নিয়ে আমার জিম কলিন্সের সাথেও আলোচনা হয়েছে। এসব গবেষনায় উঠে এসেছে কিভাবে পরিবারের সদস্যরা পারিবারিক সংকটের নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেন। পারিবারিক মূল্যবোধের শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলতে হলে শিশুদেরকে অবশ্যই বিভিন্ন নৈতিক বিষয় সম্পর্কে বিশদ ধারণা দিতে হবে।

আ্যডি: আপনি ব্যবসাক্ষেত্রের ধারনাগুলো পারিবারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগের কথা বলছেন, কিন্তু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্যই থাকে অন্য সব প্রতিষ্ঠানকে পেছনে ফেলে সাফল্যের সর্ব শিখরে পৌঁছনো। এই ধরনের্ মানসিকতার চর্চা পরিবারের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলবে বলে কি আপনি মনে করেন না?

ব্রুস: আমার তা মনে হয় না। কর্মজীবন এবং পারিবারিক জীবন আলাদা হলেও এই দুটোর মধ্যে একটি সংযোগ রয়েছে। আমি আমার বইয়ে এ সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা দিয়েছি। আটলান্টা শহরের একদল গবেষক শিশুদের উপর একটি ছোট্ট পরীক্ষা চালান, নিজেদের পরিবারের শেকড় সম্পর্কে কে কতটুকু জানে তাইই ছিল পরীক্ষার মূল বিষয়বস্তু। দেখা গেল, এই পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নাম্বারপ্রাপ্ত যে শিক্ষার্থী সে অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি আত্মপ্রত্যয়ী ও দৃড় চেতনা সম্পন্ন। যে শিশুটি জানে তার পরিবার এর আগেও নানা সব সমস্যার মোকাবেলা করে এসেছে, সে ভবিষ্যতে সেই একই ধরণের সমস্যার মুখোমুখি হলে ঘাবড়ে না গিয়ে বরং দক্ষতার সাথে তার সমাধান করে। ব্যবসার ক্ষেত্রেও ব্যপারটা ঠিক একই রকম। পূর্বে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো জানে কিভাবে এই ধরনের পরিস্থিতি এড়ানো যায় বা মোকাবেলা করা যায়।


 আপনারা পড়ছেন, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রের ধারনা পারিবারিক জীবনের অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে


আ্যডি: ঠিক একইভাবে কি পারিবারিক ধারণাগুলোও ব্যবসাক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়?

ব্রুস: এখনো পর্যন্ত আমি এ বিষয়ে কোন চিন্তা-ভাবনা করিনি । তবে আমার একটি বেশ চমৎকার অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে ভাগ করতে চাই, আমি দেখেছি যে তুলনামূলকভাবে বেশি নারী সদস্যের উপস্থিতি পরিবারের শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে। আমি এর নাম দিয়েছি ‘the law of two women’ । এরকম বিচিত্র কিছু পারিবারিক ধারণা আপনি ব্যবসাক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। আমি আগেও বলেছি এবং আবারো বলছি, পারিবারিক ও কর্মজীবন একে অন্যের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। তাই এই দুটো বিষয়ের মধ্যে সমন্বয় সাধন আপনার দৈনন্দিন জীবনকে আরও সহজ ও সুন্দর করে তুলবে।

একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে


"পরের অধীনে কোনো কাজ নয়, যা পারি নিজে করবো"- অনেক শিক্ষিত এবং চাকরি করার যোগ্য লোকের মাঝেও দেখা যায় এ চেতনা। আর এ চেতনা ধারণ করে অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর ব্যাপারে যারা দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ, তারাই কেবল হতে পারেন সফল এন্টারপ্রেনিয়ার বা সফল উদ্যোক্তা। উদ্যোগ তো সবাই নিতে পারে কিন্তু সফল উদ্যোক্তা হওয়ার রাস্তা কিন্তু নেহাতই সহজ নয়। আর তাইতো উদ্যোগ নেয়ার পূর্বেই যাচাই করে নিতে হয় নিজের চারপাশ এবং উদ্যোগের সম্ভাব্যতা। চলুন প্রথমেই দেখা যাক একজন সফল উদ্যোক্তার কি কি গুণ থাকতে হয়ঃ

হার না মানা মনোভাবঃ আপনি যদি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চান তবে আপনার হার না মানা মনোভাব থাকতে হবে। চেতনা থাকতে হবে যে কাজটি আপনি শুরু করবেন তার শেষ আপনাকে অবশ্যই করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে যে উদ্যোগ আপনি নিচ্ছেন সে কাজের প্রতি আপনার আগ্রহ থাকা অত্যাবশ্যক। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে ছোট জীবনে কোনো কাজে শতভাগ সন্তুষ্টি বা সফলতা অর্জন কারো পক্ষেই সম্ভব না। এখানে যে কোনো উদ্যোগেও ভাল সময়, খারাপ সময় থাকবেই। তবে দিনের শেষে সেই সফল হয় যে খারাপ সময়টাকেও সুন্দরভাবে অতিবাহিত করতে পারে।

বুদ্ধিমত্তাঃ এর মানে এই নয় যে, আপনাকে একজন স্কলার হতে হবে। এন্টারপ্রেনিয়ারদের বুদ্ধিমত্তা একটু ভিন্ন ধরনের। এক্ষেত্রে আপনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন সে ব্যাপারে আপনার থাকতে হবে পুরোপুরি স্বচ্ছ ধারণা। আর এ ধারণা রাখতে হবে ব্যবসা শুরু করার পূর্বেই। কমন সেন্স এর সাথে আস্তে আস্তে শুরু হওয়া আপনার অভিজ্ঞতাই আপনাকে করে তুলবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে বুদ্ধিমান।

আমাদের দেশে দুইভাবে উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয়ে থাকে। প্রথমত ছোট থেকে ব্যবসা শুরু করে ক্রমে কর্পোরেট গ্রুপে রূপ লাভ করা। দ্বিতীয়ত উদ্যোক্তাদের উত্তরসুরী হিসেবে কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়া। এ পর্যায়ে যারা পারিবারিক সূত্রে বড় বিজনেসের ভার পান তারা মেধা এবং কৌশলের উপর নির্ভর করে সেটি বড় হতে এবং পরিচালনা করতে থাকে। পক্ষান্তরে যারা শূন্য থেকে শুরু করে ক্রমে বিশাল উদ্যোক্তায় পরিণত হন তাদের থাকে কর্মজীবনে বর্ণাঢ্য অভিজ্ঞতা।

একুশ শতকের এই সময়ে ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়ে সফলতা আনয়নের জন্য বেশ কতগুলো বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই শুরু করতে হবে বিজনেস কর্মকান্ড। এ জন্যে প্রথমেই থাকতে হবে শিক্ষা। একই সাথে দেশ বিদেশের বিভিন্ন বিজনেস প্রসঙ্গে ধারণা থাকা প্রয়োজন। কেননা এখন ব্যবসার গন্ডি শুধু দেশ নয়, পুরো বিশ্বই এর সীমারেখা।

উদ্যোক্তা হতে হলে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে। তিল তিল করে গড়ে তোলা বিজনেস এক সময় বিশাল শিল্প সম্রাজ্য করে সাজাতে সততা আর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। এরপর আপনাকে হতে হবে ডায়নামিক এবং চৌকস। কেননা উদ্যোক্তা হতে আপনাকে পিওন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় প্রধানের সাথে পর্যন্ত কথা বলতে হবে। সর্বোপরি হতে হবে হিসেবী-সেই হিসেব হবে আর্থীক ও সময় বিবেচণায় সঠিক সিদ্ধান্ত। বিজনেসের প্রতিটা পর্বে নিখুঁত হিসেবী হয়ে গড়ে তুলতে হবে শিল্প কারখানা।

মূলধনঃ হার না মানা মনোভাব, বুদ্ধিমত্তার সাথে সাথে আপনাকে আরেকটি বিষয় উদ্যোগের শুরুতেই নিশ্চিত করতে হবে আর তা হচ্ছে প্রয়োজনীয় মূলধন। বিশেষ করে প্রথম বছরের সমস্ত খরচ এবং বিনিয়োগের পুরো টাকাই থাকা চাই আপনার হাতে। পরের বছরগুলোর জন্য হয়তো তারল্য নির্ধারণ করে আপনি ব্যবসার আয় হতেই সব খরচ নির্বাহ করতে পারবেন। আপনার হাতে যদি উদ্যোগ শুরু করার প্রারম্ভিক টাকাও না থাকে তবুও পিছনে হটার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশের অনেক সরকারি বেসরকারি ব্যাংক, এনজিও তৈরি আছে আপনাকে সাহায্যের জন্য। এর মধ্যে অনেক বছর যাবত এসএমই বা ক্ষুদ্র ঋণের মাধমে শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য কিছু বেসরকারি ব্যাংকের বিভিন্ন রকম সাহায্য স্কিম অবশ্যই উল্লেখ করার মতো। পাঠক, চলুন জেনে নেয়া যাক এ সব ব্যাংকের এসএমই স্কিমগুলোর আদ্যাপান্ত।

আপনারা পড়ছেন, একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে

আরব-বাংলাদেশ ব্যাংক লিমিটেডঃ বিগত দু-দশক ধরে জাতীয় অর্থনীতিতে এসএমই এর অবদান স্মরণ করে এবিবিএল বিভিন্ন সেক্টরে এসএমই লোনের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি করেছে। সবমিলিয়ে যার পরিমাণ সমস্ত ব্যাংক ঋণের ৫৪%। সত্যি এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য এ এক সুখবর বটে! এবিবিএল তার গ্রাহকদের বৃহত্তর স্বার্থের প্রতি লক্ষ্য রেখে সাউথ এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ফ্যাসিলিটি (এসইডিএফ) কে সাথে নিয়ে তাইতো "পার্টনার ইন প্রোগ্রাম" নামে যৌথ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এক্ষেত্রে এসইডিএফ আরব বাংলাদেশ ব্যাংক এবং তার গ্রাহকদের প্রযুক্তিগত সহায়তা ছাড়াও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং সংগঠন পরিচালনায় গাইড দিয়ে থাকে। যোগাযোগঃ এসএমই ক্রেডিট ডিভিশন, আরব বাংলাদেশ ব্যাংক লিমিটেড, বিসিআইসি ভবন, ৩০/৩১, দিলকুশা। ফোনঃ ৯৫৬০৩১২, ফ্যাক্সঃ ৭১৬৯১৬৯

ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডঃ বাংলাদেশে এসএমই উন্নয়নে ব্র্যাক ব্যাংক কাজ করছে নিরলসভাবে। ব্র্যাক ব্যাংক তাদের এসএমই ইউনিটের ছোট পরিসরের লোনের কাজ করে "অনন্য" নাম দিয়ে। "অনন্য" এর আওতাধীন নির্দিষ্ট খাতে দ্রুত এবং কোয়ালিটি ব্যাংকিং সার্ভিস প্রদান করে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ব্যবসার প্রসার ঘটিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং বেকারত্ব দূর করা। অনন্য'র আওতায় ব্র্যাক ব্যাংক ৩ থেকে ৩০ লাখ টাকার ঋণ দিয়ে থাকে। মূলত লোনের টার্মগুলো হয়ে থাকে তিন, চার, ছয়, সাত, নয়, বারো, পনেরো, আঠারো, চব্বিশ, ত্রিশ এবং ছত্রিশ মাস পর্যন্ত। স্থায়ী সম্পত্তি ক্রয়ের ক্ষেত্রে আঠারো বা তদুর্ধ মাস প্রযোজ্য হয়ে থাকে। এই লোনটি পেতে হলে গ্রাহককে নির্দিষ্ট শাখায় অবশই "অনন্য" একাউন্ট খুলতে হবে। আরো বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করতে পারেন যোগাযোগঃ ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, ১ গুলশান এভিনিউ, গুলশান-১, ঢাকা-১২১২। ফোন : ৮৮২৪০৫১-৪।

ঢাকা ব্যাংক লিমিটেডঃ যে সমস্ত ছোট উদ্যোক্তাদের উদ্যোগ টাকার অভাবে বেশিদূর এগোতে পারে না তাদের কথা মাথায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছে ঢাকা ব্যাংকের এসএমই ক্রেডিট প্রোগ্রামের কার্যক্রম। মূলত মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ এবং ছোট ব্যবসায়িদের কথা মাথায় রেখে "ওভার ড্রাফট" এবং "টার্ম লোন" নামের দুটি প্রজেক্ট এখানে চালু আছে। একজন উদ্যোক্তা তার ব্যবসার ধরণ বুঝে এখান থেকে ১ লাখ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্রহণ করতে পারেন। এখানে "ওভার ড্রাফট" স্কিমের জন্য এক বছর এবং "টার্ম লোনের" ক্ষেত্রে এক বছর থেকে তিন বছরের মেয়াদ পর্যন্ত ঋণ দেয়া হয়ে থাকে। বারো পার্সেন্ট ইন্টারেস্ট ছাড়াও এক্ষেত্রে অন্যান্য ফি প্রদান করতে হয়। যোগাযোগঃ ঢাকা ব্যাংক, হেড অফিস, বিমান ভবন, ১০০ মতিঝিল সি/এ, ঢাকা-১০০০, ফোনঃ ৯৫৫৪৫১৪, ফ্যাক্সঃ ৯৫৫৬৫৮৪।

ঋণ আবেদনের জন্য জরুরী কাগজপত্রঃ

০ ব্যবসা নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্সের, আয়কর সনদ, ভ্যাট সনদ কপি।
০ ব্যাঙ্ক ট্রাঞ্জেকশানের কপি।
০ সমস্ত মেশিনারি, ইক্যুইপমেন্ট, ভেইকেলের বর্ণনা।
০ লিজ নেয়া জমির ক্ষেত্রে লিজের চুক্তিনামা।
০ জমি কেনার প্রস্তাব থাকলে বর্তমান মালিক পক্ষ থেকে আনা চিঠি।
০ চলমান ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে আর্থিক বিবরণী যেমন- চলমান সম্পত্তি, স্থায়ী সম্পত্তি ইত্যাদির বিবরণ।
০ দালান ক্রয়ের ক্ষেত্রে পাশ করা প্ল্যান এবং দামের বিবরণ।
০ ব্যবসায়ের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে নেয়া ছাড়পত্র।

এছাড়াও ব্যবসা ভেদে একেক ব্যাংক একেক রকম কাগজপত্র চেয়ে থাকে।

আপনারা পড়ছেন, একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে

পরিশেষে বলা যেতে পারে আপনি যদি স্বাধীন চেতা হয়ে থাকেন, নিজের প্রতি যদি আপনার থাকে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস তবে এখন সময়টা আপনারই। নিজেকে যাচাই করে ব্যবসার ধরণ বুঝে নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে পারেন কোনো শিল্প উদ্যোগে। এক্ষেত্রে অর্থায়নের ব্যাপারে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক আর এনজিওগুলোকে তো পাচ্ছেন হাতের কাছেই। সুতরাং গড়ে তুলুন নিজের ব্যবসা, নিজের ভুবন।

নতুন উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি করা সম্ভব : সামিরা জুবেরী হিমিকা


বেকারত্ব দূরীকরণের কার্যকরী পন্থা হতে পারে উদ্যোক্তা তৈরি। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি হয়ে গেলো ন্যাশনাল এন্টারপ্রেনার সামিট। যার অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল এই ন্যাশনাল এন্টারপ্রেনার সামিট, তিনি হলেন সামিরা জুবেরী হিমিকা। সামিরা জুবেরী হিমিকা টিম ইঞ্জিনের স্বপ্নদ্রষ্টা এবং সিইও।


প্রশ্ন :  ন্যাশনাল এন্টারপ্রেনার সামিট সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পেরে কেমন লাগছে? কেন উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে হল?

সামিরা জুবেরী হিমিকাঃ
এককথায়, অসাধারন এক শুরু। এমন অভূতপূর্ব সাড়া পেয়ে আমরা অভিভূত। ন্যাশনাল এন্টারপ্রেনার সামিট (নেস) উদ্যোক্তা তৈরি এবং বাংলাদেশে সম্ভবনাময় ব্যবসায় উদ্যোগ এবং উদ্যোক্তাকে সঠিক দিকনির্দেশনা এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখার প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করতে পেরেছে বলে মনে করি। নেস (সন্মেলন)-এর সাফল্য আমাদের আগামী দিনের পথচলায় অনুপ্রেরনা যোগাবে। দেশে দ্বিতীয় প্রজন্মের উদ্যোক্তা শ্রেণী তৈরিতে প্রতিষ্ঠানিক উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা বহুদিন ধরেই অনুভূত হচ্ছিল। কারন, আমাদের দেশে বেড়ে চলা জনসংখ্যার সঙ্গে বাড়ছে বেকারত্ব। প্রতিবছর সৃষ্ট প্রায় ২০ লাখ বেকারত্বের বিপরীতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মাত্র ১০ লাখ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে কাজের সুযোগ বঞ্চিত বাকি ১০ লাখের অধিকাংশই শিক্ষিত যুবক। আর সেখানেই রয়েছে অমিত সম্ভাবনা। উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে বিশাল এ বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের পাশাপাশি অন্যদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। আর ২০২১ সালের মধ্যে বাংলদেশকে মধ্য-আয়ের দেশে পরিনত করতে হলে নতুন উদ্যোক্তা তৈরির কোন বিকল্প নেই। শুধুমাত্র নতুন উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করা বা হওয়া সম্ভব।


প্রশ্ন : বাংলাদেশে উদ্যোক্তা বান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে কোন কোন দিকগুলোতে নজর দিতে হবে?

সামিরা জুবেরী হিমিকাঃ
সত্যিকারের উদ্যোক্তা বান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে প্রথমেই প্রয়োজন আমাদের মানসিকতার ব্যাপক পরিবর্তন। নেস এর ২দিনব্যাপী সন্মেলনে এই বিষয়ে তৃনমূল থেকে শুরু করে দেশের নানান প্রান্ত থেকে আসা উদ্যোক্তাদের মতামত আমরা পেয়েছি। আমার মনে হয় আর্থিক সহায়তা/লোন/বিনিয়োগ, পরিচর্যা কেন্দ্র, ট্রেনিং, তথ্য, টেকনোলজি, মার্কেটিং ইত্যাদি নিয়ে নেস-এর কর্মময় দিন পার হবে আগামী সামিট পর্যন্ত। বিভিন্ন পার্টনার প্রতিষ্ঠানের সাথে একযোগে উদ্যোক্তা উন্নয়নই মূল কাজ। শীঘ্রই আমরা বছরব্যাপী পরবর্তী কার্যক্রমের ঘোষণা দিতে যাচ্ছি আমাদের ওয়েব সাইট www.riseforgdp.com ও ফেসবুক পেজ http://www.facebook.com/riseforgdp।


প্রশ্ন :  নারী উদ্যোক্তারা আমাদের দেশে লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে অতিরিক্ত কি ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়?

সামিরা জুবেরী হিমিকাঃ
যদি বলি আমাদের দেশে নারী উদ্যোক্তারা লিঙ্গ বৈষম্যের কারণে অতিরিক্ত সমস্যার সম্মুখীন হন না তাহলে ভুল বলা হবে। তবে একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আমি বলতে পারি তা পূর্বের চেয়ে অনেক কম। অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জনের দৃঢ়তা আর পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ দিয়ে তা ওভারকাম করা সম্ভব। আর এক্ষেত্রে সচেতনতার অভাব রয়েছে। যেমন অনেক নারী জানেন না যে, নারী উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ৯%-১০% হারে ঋণ পেতে পারে। সেজন্য আমি বলব যে, লিঙ্গ বৈষম্যের কথা আমরা বলি, কিন্তু এটা কাটিয়ে উঠতে তথ্যের যে প্রবাহ দরকার সে জায়গায় কাজ করছি না।


প্রশ্ন :  অনেক নারী ফ্রি-ল্যান্সিং করে ভালো করছেন। আপনি কি মনে করেন আর্থ সামাজিক বিবেচনায়, ফ্রি ল্যান্সিং নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য ভালো একটি মাধ্যম হতে পারে?

সামিরা জুবেরী হিমিকাঃ
নিশ্চয়ই । ফ্রিল্যান্সিং নারীদের কর্মসংস্থানের বড় সম্ভাবনাময় একটি ক্ষেত্র হিসেবে ইতিমধ্যে প্রমাণিত। সবচে আশার কথা, আমাদের সমাজে কর্মজীবী নারীরা সাধারণত যেসকল বাধার সম্মুখীন হন ফ্রি ল্যান্সিংয়ে কাজের ক্ষেত্রে তা নেই বললেই চলে।

আপনারা পড়ছেন, নতুন উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি করা সম্ভব

প্রশ্ন :  যারা নতুন ব্যবসা শুরু করতে চাইছে, তারা যাতে সার্বক্ষণিক সাহায্য পায় এমন কোন পরিকল্পনা কি আপনার আছে?

সামিরা জুবেরী হিমিকাঃ
অবশ্যই। আমাদের মূল কাজের জায়গাটা সেখানেই। নেস-এর এই সন্মেলনটি একটি ফ্লাগশিপ ইভেন্ট মাত্র। সন্মেলনে অংশগ্রহণকারী এবং নিবন্ধিত সকল উদ্যোগতাদের বছরব্যাপী ব্যবসায়িক সুবিধা-অসুবিধা, চাহিদা ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা, পরামর্শ ও তথ্য বিনিময়ের প্ল্যাটফর্ম তৈরি এবং প্রয়োজনীয় সকল সহায়তা প্রদানের মাধমে তাদের উন্নতি সাধনের পথনির্দেশনা দেয়াই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য। উদ্যোক্তাদের সার্বক্ষণিক সাহায্য করতে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা যাবে info@riseforgdp.com এ।

প্রশ্ন :  কেমন বাংলাদেশকে রেখে যেতে চান?

সামিরা জুবেরী হিমিকাঃ
বেকারত্বহীন, অর্থনীতিতে ক্রমপ্রবৃদ্ধিশীল মধ্য-আয়ের একটি দেশ, যে দেশে প্রকৃত দেশপ্রেমিকরাই বসবাস করে।

প্রশ্ন :  আপনার টিম-ইঞ্জিন নিয়ে কি ধরনের স্বপ্ন দেখেন?

সামিরা জুবেরী হিমিকাঃ
টিম-ইঞ্জিন-এর শুরু থেকেই সকল কাজ সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে করা হয়ে থাকে। বলছি না যে, আমারা নন-প্রফিট প্রতিষ্ঠান। কিন্তু আমাদের কাজের ক্ষেত্রে সামাজিক দায়বদ্ধতা সবসময় মূল অনুপ্রেরনার উৎস। সেই অনুপ্রেরনাতেই বাকিটা পথ চলতে চাই। আর সেই পথচলায় অর্থনৈতিক অর্জনের চেয়ে সমাজের জন্য কিছু করতে পারা অনেক বেশী প্রাপ্তিযোগ করবে।

তথ্যসূত্র : ওয়েবসাইট

ই-মেইল সাবস্ক্রিপশন

Enter your email address:

Delivered by FeedBurner

ক্যাটাগরীসমূহ

পৃষ্ঠাসমূহ

Creative Commons License
This work is licensed under a Creative Commons Attribution 3.0 Unported License.
Protected by Copyscape

ব্লগটি মোট পড়া হয়েছে

বাঙলা ব্লগ. Powered by Blogger.

- Copyright © মেহেদী হাসান-এর বাঙলা ব্লগ | আমার স্বাধীনতা -Metrominimalist- Powered by Blogger - Designed by Mahedi Hasan -